সেই পেহেলগামে মন্ত্রিসভার বৈঠক করলেন ওমর আবদুল্লাহ
Published: 27th, May 2025 GMT
জম্মু অথবা শ্রীনগরের ঘেরাটোপ থেকে বের হয়ে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ মন্ত্রিসভার বৈঠক করলেন পেহেলগামে। সেই পেহেলগাম, যেখানে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসবাদী হানায় নিহত হয়েছিলেন ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় কাশ্মীরি ঘোড়াওয়ালা। পর্যটকদের আস্থা অর্জন এবং স্থানীয় জনতার মনে ভরসা জোগানোই ছিল এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য।
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত আচরণে আমরা ভীত নই। এটাই আমাদের বার্তা। সেই বার্তা ছড়িয়ে দিতেই পেহেলগামে মন্ত্রিসভার বৈঠক করার সিদ্ধান্ত।’
বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী আবদুল্লাহ সামাজিক মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন। পেহেলগাম ক্লাবে মন্ত্রিসভার বৈঠকের ছবি ছাড়াও খরস্রোতা লিডার নদীর ধারে নিজস্বী দিয়ে ওমর আবদুল্লাহ ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লেখেন, ‘পেহেলগামে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক করলাম। এটা স্রেফ একটা রুটিন বৈঠক ছিল না। এটা ছিল এক বার্তা, আমরা সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত আক্রমণে ভীত নই।’
ওমর আবদুল্লাহ লেখেন, ‘শান্তির শত্রুরা আমাদের প্রত্যয়কে চালিত করতে পারবে না। জম্মু–কাশ্মীর দৃঢ়, শক্তিশালী, অবিচলিত ও নির্ভিক।’
জম্মু–কাশ্মীরের রাজধানী ও দরবার শীত ও গ্রীষ্মে বদল হয়। শীতকালে বিধানসভা ও সচিবালয় চলে আসে জম্মুতে, গ্রীষ্মে চলে যায় রাজধানী শ্রীনগর। সেই মতো মন্ত্রিসভার বৈঠকও হয়ে থাকে কখনো জম্মু, কখনো শ্রীনগর। এই প্রথা প্রথম ভেঙেছিলেন ওমর আবদুল্লাহই। ২০০৯ থেকে ২০১৪ প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ওমর রাজ্যের দূরবর্তী এলাকাগুলোয় মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছিলেন। বৈঠক হয়েছিল উত্তর কাশ্মীরের গুরেজ, মাছিল, টাংধার এবং জম্মুর রাজৌরি ও পুঞ্চের মতো জায়গায়। রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হওয়ার পর এই প্রথম শ্রীনগর ও জম্মুর বাইরে অন্য কোথাও মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। আগামীকাল বুধবার দ্বিতীয় বৈঠক হওয়ার কথা গুলমার্গে।
পেহেলগামে হামলার পর জম্মু–কাশ্মীরের পর্যটনশিল্পে ধস নামে। যে সময় এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্র গমগম করার কথা, সে সময় সেখানে বিরাজ করছে এক অদ্ভুত নীরবতা। এই পরিস্থিতিতে ঠিক হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে সরকার সন্ত্রাসবাদী ও পর্যটকদের যুগপৎ বার্তা দেবে। পর্যটকদের অভয়দানের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়ে সরকার একাত্মতা প্রকাশ করবে। পাশাপাশি এই বার্তা দেওয়া হবে যে শত্রুদের কাপুরুষোচিত আক্রমণে সরকার ও দেশবাসী ভীত নয়।
পর্যটনকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেন বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা ও সংসদীয় কমিটির বৈঠক যেন জম্মু–কাশ্মীরে অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নীতি আয়োগের বৈঠকে তিনি এই প্রস্তাব রাখেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ওমর বৈঠকে বলেন, এভাবে সবাই এগিয়ে এলে মানুষের মন থেকে ভয় যেমন কেটে যাবে তেমনই উপত্যকার মানুষ মনে বল ও ভরসা পাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওমর আবদ ল ল হ র আবদ ল ল হ ম খ যমন ত র অন ষ ঠ ত শ র নগর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস