ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের প্রতি অবহেলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
Published: 11th, January 2025 GMT
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, বৈষম্য ও রোগীদের প্রতি অবহেলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে একটি সংগঠন।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নাগরিক সংগঠন ‘ময়মনসিংহ ফোরামের’ উদ্যোগে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের এলাকায় মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সমন্বয়ক এহসান হাবীব, সাঈদ ইসলাম, আহসান উদ্দিন খান, আফজাল হোসাইন, আবু বক্কর সিদ্দিক রুমেল, তানিয়া সুলতানা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের সমন্বয়ক জেনাস ভৌমিক, তানজিল মুনিম প্রমুখ।
সাঈদ ইসলাম বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসাকাঠামো পুরোদস্তুর ভেঙে পড়েছে। অপরিচ্ছন্নতা, রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, আনসারদের ঘুষ গ্রহণ ও ট্রলিবয়দের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। উপজেলা থেকে আগত রোগীদের পরীক্ষার জন্য ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে। সরকারি ওষুধ রোগীরা পাচ্ছে না।
এহসান হাবীব বলেন, হাসপাতালের রোগীদের হয়রানি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানাই। হাসপাতালে রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই। ইতিপূর্বে হাসপাতালে বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে তা ব্যাহত হচ্ছে। এর পেছনে হাসপাতালের এক শ্রেণির অসাধু একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে, এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। আউটডোর সেবার ক্ষেত্রে দীর্ঘ লাইন রোগীদের ভোগান্তির একটি অন্যতম কারণ। এই ভোগান্তি নিরসন করতে হবে। প্রয়োজনে আউটডোর সার্ভিসের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
মানববন্ধন শেষে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানোর দাবিতে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন তারা। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘ময়মনসিংহ ফোরাম’ হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা অনিয়মের কিছু ধরন শনাক্ত করেছে। তার মধ্যে চিকিৎসকদের উদাসীনতা ও রোগীদের প্রতি চরম অবহেলা, কথাবার্তার আন্তরিকতার অভাব, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, আয়া, ওয়ার্ডবয় ও মাস্টাররোল কর্মচারীরা রোগীদের সঙ্গে নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন না করা, রোগী-রোগীর আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায়, বাইরের দালাল সিন্ডিকেটের হাতে রোগী তুলে দেওয়ার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকা। এ ছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে দালালের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি, হাসপাতালের পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় কর্তৃপক্ষে অবহেলা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ ও ত্রুটিযুক্ত যন্ত্রপাতির দ্রুত মেরামতের ক্ষেত্রে অবহেলা, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জটিল রোগীদের জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন না করে ভুল চিকিৎসা, প্রসূতি চিকিৎসায় যথেচ্ছাচারিতা, আউটডোর চিকিৎসায় অবহেলা ও রোগীকে বাইরের নির্দিষ্ট ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করিয়ে আনার অনৈতিক প্রবণতা, প্রয়োজনীয় আধুনিক মানসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্সের অভাব, রোগীদের জন্য অতি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নিমিত্তে দ্রুত জনবলকাঠামো নিয়োগ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন (২৩) ও তাঁর মা তাহমিনা বেগম (৫২) হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পৃথক তিনটি স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা।
আজ সোমবার বেলা একটার দিকে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন তাঁরা। এরপর বেলা তিনটার দিকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
নিহতের সহপাঠী নূর মোহাম্মদ সোহান বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী ও তাঁর মায়ের হত্যাকারী একজন ধর্ষক। আমাদের বোনের ওপর সে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও তার মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি। ঘটনার শুরু থেকেই পুলিশের গাফিলতি আমরা লক্ষ করেছি।’
আরেক সহপাঠী মুনিয়া আফরোজ বলেন, ‘আমাদের বান্ধবীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, যা লাশ উদ্ধারের সাত দিন পর জানা গেল। পুলিশ তদন্তে অবহেলা করেছে। আমাদের দাবি, এক সপ্তাহের মধ্যে এই জোড়া খুনের পেছনে আরও বড় কোনো শক্তি আছে কি না, তা সুষ্ঠু তদন্ত করে উন্মোচন করতে হবে। মামলা বিশেষ আদালতে হস্তান্তর করতে হবে। ধর্ষকের সুষ্ঠু বিচার ও ফাঁসি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
সাইফুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী সুমাইয়া ও তাঁর মায়ের হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কে, তা বের করতে হবে পুলিশকে। এর পেছনে সুমাইয়ার পরিবারের কেউ জড়িত আছে কি না, সেটিও তদন্ত করতে হবে।’
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, প্রথমে পুলিশ বলেছিল, সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় এবং তা দেখে ফেলার কারণে তাঁর মাকে হত্যা করা হয়। পরে জানা যায়, কবিরাজ মোবারক হোসেন সুমাইয়াকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশে গড়িমসি হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। দ্রুত প্রতিবেদন প্রকাশ ও মামলাটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে হত্যাকারীর ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘স্মারকলিপিটি পেয়েছি। রাষ্ট্রের কাজ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিষয়টি আমরা দেখব।’
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানান, ‘আমরা তদন্ত করছি। আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কুমিল্লা নগরের কালিয়াজুরি এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে নিহত তাহমিনা বেগম সুজানগর এলাকার প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী। তাঁর মেয়ে সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনার সময় তাঁরা বাসায় একা ছিলেন। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে তাহমিনা বেগমের দুই ছেলে বাসায় ফিরে হত্যার বিষয়টি টের পান। পরদিন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন তাহমিনা বেগমের বড় ছেলে মো. তাজুল ইসলাম। সেদিনই পুলিশ কবিরাজ মোবারক হোসেনকে (২৯) গ্রেপ্তার করে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং ওই দিন রাতেই তাঁকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হন।