দুর্নীতি ও অনিয়মে সম্পৃক্ত কাউকে নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন। এছাড়া জনপ্রতিনিধি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব প্রতি বছর দাখিলের সুপারিশ করা হয়েছে। 

বুধবার সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চার সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এই প্রতিবেদনে দুদক মোট ৪৭টি সুপারিশ তুলে ধরেছে। 

ষষ্ঠ সুপারিশে বলা হয়েছে, নির্বাচনী আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলসমূহ ও নির্বাচনের প্রার্থীরা অর্থায়ন এবং আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করবে; জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুদকের সহায়তায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীগণ কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যের পর্যাপ্ততা ও যথার্থতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সকল পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে ও পরবর্তীতে প্রতি বছর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আয় ও সম্পদ বিবরণী নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন এবং নির্বাচন কমিশন উক্ত বিবরণীগুলো কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন এবং রাজনৈতিক দলসমূহ দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে দলীয় পদ বা নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন না।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আমির বনাম সভাপতি: কক্সবাজার-৪ আসনে ‘হাইভোল্টেজ’ লড়াই 

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া–টেকনাফ) আসনকে ঘিরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ এখন তুঙ্গে। মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা ও সাগর উপকূলের এ গুরুত্বপূর্ণ আসনে এবার মুখোমুখি হচ্ছেন দেশের দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের স্থানীয় শীর্ষ দুই নেতা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির এবং বিএনপির জেলা সভাপতি। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ‘হাইভোল্টেজ’ পরিস্থিতি।

এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক পালাবদলের অনন্য ইতিহাস রয়েছে। অতীতে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, কেন্দ্রীয় ক্ষমতাও গেছে তাদের হাতেই। উখিয়া–টেকনাফের এই সংবেদনশীল আসনে ১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী। এবারও তিনি দলটির ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে তার মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মাঠে সোচ্চার রয়েছেন জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন আরেকটি অংশ।

অন্যদিকে, জামায়াত এবার আরো শক্ত অবস্থানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছে। দলটির জেলা আমির নূর আহমদ আনোয়ারীকে এ আসনে প্রার্থী করা হচ্ছে। তিনি টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। স্থানীয়ভাবে তার জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক প্রভাবের কারণে জামায়াত এবার আসনটি দখলে নেওয়ার ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী।

স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা ইস্যু, সীমান্ত নিরাপত্তা, মানবপাচার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ এসব প্রশ্নে ভোটারদের অবস্থান এবারের নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের রায়ই লড়াইয়ের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

এরইমধ্যে মাঠ পর্যায়ে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকরা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সরব হয়ে উঠেছেন। দুই দলের নেতারাই নিজেদের বিজয় নিয়ে আশাবাদী।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘‘চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে দলীয় প্রার্থী নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রার্থীসহ নেতা-কর্মীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। আশা করি, অতীতের মতো এবারও ভোটাররা বিএনপিকেই বেছে নেবেন।’’

জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির নূর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ‘‘নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমাদের মূল অঙ্গীকার হবে গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব নিশ্চিত করা। আমি নির্বাচনে জয়ী হয়ে এলাকার নিরাপত্তা জোরদার, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার সুযোগ চাই।’’

সব মিলিয়ে কক্সবাজার-৪ আসনে এবার দুই শীর্ষ নেতার মুখোমুখি লড়াইকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নজিরবিহীন উত্তাপ। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই তীব্র হচ্ছে উখিয়া–টেকনাফের রাজনৈতিক হালচাল।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া–টেকনাফ) আসনে মোট ১১১টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোটার রয়েছেন ৩৭ লাখ ৩ হাজার ১৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৯ লাখ ১২ হাজার ১০ জন, নারী ভোটার ১৮ লাখ ১৯ হাজার ১৫ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৫ জন।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ