জনপ্রশাসন সংস্কারে থাকছে শতাধিক সুপারিশ, বুধবার প্রতিবেদন হস্তান্তর
Published: 4th, February 2025 GMT
জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য শতাধিক সুপারিশসম্বলিত প্রতিবেদন আগামীকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল গত মাসে। কিন্তু, আমরা আমাদের কাজের কারণে পারিনি। কারণ, আমরা মাঠে গিয়েছি, লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গিয়ে কথা বলেছি। অনলাইনে আমরা মতামত নিয়েছি। এগুলোর ভিত্তিতে আজকে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে স্বাক্ষর করব। কালকে (বুধবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় আমরা প্রধান উপদেষ্টার অফিসে যাব এবং তার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করব। একই সঙ্গে কালকে আইন কমিশনও তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।”
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নারীবান্ধব নির্বাচনী ইশতেহার চাই
নারীবান্ধব নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। নারী প্রার্থীদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া, নারীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের অঙ্গীকারসহ নারীবান্ধব বিষয় থাকতে হবে ইশতেহারে। ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ আয়োজিত ‘নারী-ম্যানিফেস্টো (ইশতেহার) ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বক্তারা। এ আয়োজনে প্রচার সহযোগী হিসেবে ছিল প্রথম আলো। তাঁরা জেন্ডারবান্ধব নীতিগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক করা এবং নারী ও তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হকের নেতৃত্বে পরিচালিত জরিপের তথ্য তুলে ধরেন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মো. শাইখ ইমতিয়াজ ও সহযোগী অধ্যাপক ইশরাত জাহান খান। ‘উইমেন ম্যানিফেস্টো (নারী ইশতেহার)’ শিরোনামে জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ৬৩ শতাংশের বেশি নারী চান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অন্তত ৩০ শতাংশ নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। এ বছরের নভেম্বর মাসে পরিচালিত জরিপে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে অংশ নেন ২ হাজার ৫৮০ জন নারী। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৯৩ শতাংশ নারী মনে করেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বড় একটি সমস্যা।
প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে ১২টি জরুরি বিষয়ে অঙ্গীকার থাকার ওপর জোর দেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ, নারীর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও নেতৃত্ব, সাইবার নিরাপত্তা, চলাফেরার নিরাপত্তা, আইনে সমান অধিকার, জেন্ডার সংবেদনশীল পাঠ্যক্রম, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও বিনা মূল্যের গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি, প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও সাংস্কৃতিক বাধা দূর করা, প্রান্তিক নারীদের অন্তর্ভুক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক কাঠামোয় সহায়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির ক্ষেত্রে নারীর ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।
নানা প্রতিশ্রুতিবৈঠকে স্বাগত বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক বলেন, নারী, তরুণ এবং বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা, তথ্য ও পরামর্শের ভিত্তিতে নারী ইশতেহারটি তৈরি করা হয়েছে। জবাবদিহি তখনই শক্তিশালী হয়, যখন প্রতিশ্রুতিগুলো সুনির্দিষ্ট, বাস্তবায়নযোগ্য এবং নাগরিক, গণমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যবেক্ষণে থাকে।
বৈঠকে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাবেক প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এখন নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির পর্যায়ে রয়েছে। ফলে এখন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে শোনা যেতে পারে তারা নারীদের কোন দাবি নিতে পারবে, কোনটা পারবে না। প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠ তৃণমূল থেকে আইনসভায় (সংসদ) নিতে হলে কাজের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। জনসংখ্যা বিবেচনায় সংসদের আসনসংখ্যা ৬০০ করা এখন যৌক্তিক। এর মধ্যে ৩০০ আসনে সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। বাকি ৩০০ আসনে শুধু নারীরা সরাসরি নির্বাচন করবেন। তিনি বলেন, কর্মঘণ্টা কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টা করা নিয়ে বিতর্ক হলো। কর্মঘণ্টা যদি কমাতে হয়, তাহলে তা কর্মজীবী নারী ও পুরুষ—দুজনের জন্যই কমাতে হবে। যাতে দুজনই সন্তান পালন ও গৃহকর্মের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় দিতে পারেন।
বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবীবা বলেন, নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি সব সময় ইতিবাচক। বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, এমন নারী প্রার্থীদের এবারে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে অন্তত ৩০ শতাংশ নারীকে যেন মনোনয়ন দেওয়া হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করা হবে। এতসংখ্যক নারীকে মনোনয়ন দিতে হবে—রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এমন আইন থাকলে সব দল তখন বাধ্য হতো।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইফুল আলম খান বলেন, ‘আমরা নারীর শিক্ষা, চাকরি ও ব্যবসায় কোনো সমস্যা দেখি না। ইসলামি চিন্তাবিদদের সঙ্গে নারী অধিকারকর্মীরা আলোচনা করলে এসব বিষয়ে দূরত্ব দূর হয়ে যাবে। নারীর চাকরিবান্ধব কর্মঘণ্টা তৈরি জরুরি। নারীর জন্য পাঁচ ঘণ্টা কর্মঘণ্টা করার প্রস্তাব জামায়াতে আমির দিয়েছিলেন, তা নিয়ে অনেকে বিতর্ক তৈরি করেছেন। কিন্তু এটা বলা হয়েছিল মূলত যেসব কর্মজীবী নারীর ছোট সন্তান রয়েছে, তাঁদের কথা ভেবে। সমস্যাগুলো তুলে ধরে বিষয়টি নিয়ে আমরা আরও আলোচনা করতে তৈরি আছি।’
নির্বাচনে বেশিসংখ্যক নারীকে মনোনয়ন দেওয়া, ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি, দিবাযত্ন কেন্দ্র ও বিনা মূল্যে গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি ইত্যাদি বিষয়কে এনসিপি ইশতেহারে গুরুত্ব দেবে বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন। তিনি বলেন, শুধু নারীর জন্য কর্মঘণ্টা কমালে তা নারীর কাজের ক্ষেত্রকে সংকুচিত করতে পারে। এনসিপি নারী–পুরুষের কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিজীবনে ভারসাম্য আনার জন্য সবার জন্যই কর্মঘণ্টা নির্ধারণ নিয়ে চিন্তা করছে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, তাঁর দল যদি ক্ষমতা প্রভাবিত করার নিয়ামক হয়, তাহলে তাঁর দল নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে থাকা নারীরাও অনলাইন–অফলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তবে এক দলের নারীরা হয়রানির শিকার হলে অন্য দলকে তা নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। এ ধরনের প্রবণতা থেকে বের হওয়া দরকার।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নারী সেলের সদস্য তাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি পুরুষতান্ত্রিক। নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘ চর্চার মধ্য দিয়ে আসতে হবে। সিপিবি অন্তত ৩০ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দিতে চেষ্টা করবে।
গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, শিশু লালন–পালন ও গার্হস্থ্যকাজ নারী ও পুরষ দুজনেরই কাজ এবং নারী–পুরুষের জন্য একটি জাতীয় মজুরি তৈরি করা—এ দুটি বিষয়কে ইশতেহারে গুরুত্বে দেবে তাঁর দল।
নাগরিক সমাজের পক্ষে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বন্ধে ব্যবস্থা চাই। নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন চাই। রাজনৈতিক দল যখন ইশতেহার দেয় এবং যখন ইশতেহার বাস্তবায়ন করে না, তখন তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রক্রিয়া কী সেটা জানতে চাই।’
এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ মাসাকি ওয়াতাবে, ইউএন উইমেন বাংলাদেশের তপতী সাহা, এনডিএমের মহাসচিব মমিনুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য হেমা চাকমা, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নাজিফা জান্নাত প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ দেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা অ্যান্ড্রেস ক্যাসটিল্লো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন সহযোগী অধ্যাপক সাবিহা ইয়াসমিন রোজী।
গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।