বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের ‘জঞ্জাল’ পরিষ্কার করেই আগামী সাধারণ নির্বাচন হতে হবে বলে মন্তব্য করছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। 

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪, ১৮ ও ২৪ এর মতো নির্বাচন আর দেখতে চায় না। অন্তর্বর্তী সরকার যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেই নির্বাচন হতে হবে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল রাষ্ট্রীয় অর্গানগুলো সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ১৫ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করেই হতে হবে আগামী নির্বাচন।’’

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘‘সেইসঙ্গে যারা বিগত দেড় দশকে লুটপাট, খুন, দুর্নীতি, অনিয়ম করেছেন, তাদের ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।’’  

আরো পড়ুন:

নিবন্ধন পেল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, প্রতীক ফুলকপি

নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক পলাতক ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দিতে পারে: এ্যানি

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে খুলনা মহানগর সংলগ্ন হরিণটানা থানাধীন আরাফাত নগর ইউনিট জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

হরিণটানা থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর আব্দুল গফুর কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম এবং আমির হোসেনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজি ও ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইন। 

অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জাহিদুর রহমান নাঈম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আমীর মশিউর রহমান রমজান, শ্রমিক নেতা কাজী মাহফুজুর রহমান, জামায়াত নেতা সাখাওয়াত হোসেন লিখন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মতিউর রহমান, ডা.

ফজলুর রহমান, ডা. মো. ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদ শহিদুল আলম, মাওলানা আফজাল হোসাইন, রেদওয়ান উল্লাহ ইব্রাহিম প্রমুখ।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচন হতে হবে ৫ আগস্টের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি জাতীয় ঐক্যের নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে।’’  

জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের উদ্বৃত্তি তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতার ৫৩ বছরে অনেক শাসন দেখেছি। এবার জামায়াতে ইসলামীকে দেখতে। তাই এবারের স্লোগান হবে ‘সব দল দেখা শেষ, জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ’।’’ তিনি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ গঠনে সকলকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, ‘‘কথিত মানবতাবিরোধী সাজানো অপরাধের নামে জামায়াতের যে সকল নেতা হত্যার শিকার হয়েছেন, আমরা তাদের কাছে ঋণী। তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আজকে যেই বাংলাদেশ হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে শহীদরাও সেই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। সুতরাং সেই বিচার হতেই হবে। জুডিশিয়াল ক্যু করে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সেই জুডিশিয়াল ক্যু’র সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদ কখনো মেনে নেবে না। আমরা সবাই ঐক্যমতের ভিত্তিতেই চলতে চাই। যারা কিছু কিছু সুবিধা নিচ্ছেন, তারা আমাদের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন চাই, তা হবে সুষ্ঠুভাবে, সঠিকভাবে। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশের সরকার গঠন করতে চাই।’’ 

জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, ‘‘বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার জনগণের সকল অধিকার; বাক স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মিডিয়ার স্বাধীনতা, শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। দেশের সর্বত্র এবং প্রশাসনের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

জাতীয় ঐক্য গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীল ও ইউনিট নেতাদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা/রেজাউল/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ ল ম পরওয় র ইসল ম র স র রহম ন ক র কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয়রা ষড়যন্ত্র করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে: জামায়াত সেক্রেটারি

বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দা‌বি জা‌নি‌য়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি অভিযোগ তুলেছেন, “দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ভিত্তিতে ভারতীয়রা আমাদের বুদ্ধিজীবী তথা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।”

আরো পড়ুন:

টিটোর আত্মত্যাগে শত্রুমুক্ত হয় সাভার

বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুত হচ্ছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ

রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্ম গেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট হল রুমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তি‌নি এই অভিযোগ উত্থাপন করেন গোলাম পরওয়ার।

গোলাম পরওয়ার ব‌লেন, “স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও বুদ্ধিজীবী হত্যার রহস্য এখনো রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।” 

স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই এ হত্যাকাণ্ডের বিচারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি দাবি করে গোলাম পরওয়ার বলেন, “বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য সব দোষ জামায়াতের ঘাড়ে চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা হয়েছে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারত এবং তাদের এ দেশীয় এজেন্ট জড়িত ছিল; তা ভারতীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও লেখকদের লেখনি থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়।”

গোলাম পরওয়ারের ভাষ্য, “মূলত, ১৪ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও ভারতীয় পরিকল্পনায় তা দুই দিন বিলম্বিত হয়। আর এ দু’দিনে আমাদের শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, প্রকৌশলী, আইনবিদসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল। মূলত, যাদেরকে সে সময় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষে হলেও ভারত ও তাদের এদেশীয় এজেন্টদের আদর্শবিরোধী ছিলেন। তাই তাদের পথচলাকে নির্বিঘ্ন করার জন্যই এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতা-পরবর্তী কোনো সরকারই বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বরঞ্চ আওয়ামী লীগ তদন্ত রিপোর্ট চাপা দিয়ে রেখেছে।”

এ সময় শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি অভিযোগ করেন, “এমনকি চলচিত্রকার শহীদুল্লাহ কায়সারের ভাই জহির রায়হানের অন্তর্ধানের ঘটনা আজো রহস্যাবৃত্তেই রয়ে গেছে।” 

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানান জামায়াতের সে‌ক্রেটা‌রি জেনা‌রেল।

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় দিবসের মাত্র দুদিন আগে ঢাকাসহ সারা দেশে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতেই এমন নৃশংসতা চালিয়েছিল পাকিস্তান। এতদিন এই ইতিহাস চর্চিত হয়ে এলেও মিয়া গোলাম পরওয়ার দাবি করছেন, ভারতীয়রা ষড়যন্ত্র করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। 

মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাস বিতর্কে গোলাম পরওয়ারের প্রকাশ্যে এই দাবি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হলো স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের জামায়াত আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১২ আসনে জামায়াতের পদপ্রার্থী সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন।

উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা ও ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য জিয়াউল হাসান, মু. আতাউর রহমান সরকার, জামাল উদ্দিন, মুহিবুল্লাহ ও নাসির উদ্দীন প্রমুখ।

মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, “বুদ্ধিজীবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই আমরা তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে বিভাজন করতে চাই না। তারা যে আদর্শেরই হোন না কেন, তাদেরকে আমরা সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে চাই।”

তিনি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। 

ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, “জাতি হিসেবে যারা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি, তারাই এই নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের অপশক্তি। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, বিজয়ের ৫ দশক অতিক্রান্ত হলেও এ হত্যাকাণ্ডের কুশীলবরা আজো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের ভাই জহির রায়হানের হত্যার রহস্যের জট এখনো খোলেনি।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতীয়রা ষড়যন্ত্র করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে: জামায়াত সেক্রেটারি
  • হাদির উপর হামলা, নির্বাচন বানচালের সুপরিকল্পিত চক্রান্ত কিনা: জামায়াত