ট্রাফিক সার্জেন্টদের 'স্মল আর্মস' দেওয়ার ঘোষণা ডিএমপির
Published: 6th, February 2025 GMT
ঢাকায় ছিনতাই ঠেকাতে ট্রাফিক সার্জেন্টদের স্মল আর্মস (হালকা বা ছোট অস্ত্র) দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
বৃহস্পতিবার উত্তরায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীতে কাউন্টার ও ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে বাস চলাচল’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন।
উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ছিনতাই প্রতিরোধের ব্যবস্থা কী এমন প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এই এলাকায় ছিনতাই হয়। এর আগেও আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। এক মাস আগেও রাজধানীতে ছিনতাইয়ের প্রকোপ বেড়েছিলো। ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে ১৫ দিন ধরে ছিনতাই খুব কমে গেছে। কারণ তাদের (ছিনতাইকারীদের) জেলে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের জনবল কম। ট্রাফিকের লোক আরও অসহায়। একজন ডিউটি করেন। তারা নাজুক অবস্থায়। সার্জেন্টদের স্মল আর্মস দিয়ে দিচ্ছি তিনি যেন এক, দুই বা তিন জন ছিনতাইকারী মোকাবিলা করতে পারেন।’
বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলা ও ভাঙচুরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি। রাত দুইটা-আড়াইটা পর্যন্ত আমি মনিটরিং করেছি।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর করণীয় ৭ কাজ
স্বামীর মৃত্যু এক নারীর জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। তাঁর সঙ্গী, অভিভাবক ও জীবনের অবলম্বন হারানোর শোক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
কিন্তু ইসলাম এই কঠিন সময়ে একদিকে যেমন স্ত্রীর শোক প্রকাশের সুযোগ দিয়েছে, অন্যদিকে তেমনি দিয়েছে কিছু নির্দিষ্ট করণীয় ও বিধান, যা তাঁর মর্যাদা রক্ষা করে, সামাজিক নিরাপত্তা দেয় এবং আধ্যাত্মিকভাবে ধৈর্যের পথে পরিচালিত করে।
১. ইদ্দত পালন করাআল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যাদের স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে, তারা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে (ইদ্দত পালন করবে)।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৪)
এই ইদ্দতকালকে আরবি ভাষায় বলা হয় ‘ইদ্দাতুল অফাতি’ বা মৃত্যুর ইদ্দত। এর সময়কাল হল চার মাস দশ দিন, বা ১৩০ দিন।
ইদ্দত পালনের উদ্দেশ্য হল:
১. স্ত্রীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা নির্ণয় করা,
২. স্বামীর স্মৃতি ও সম্পর্কের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা,
৩. আবেগিক পুনর্গঠন ও সামাজিক স্থিতি নিশ্চিত করা।
ইমাম ইবন কাসির বলেন, “ইদ্দত হচ্ছে এমন একটি সময়, যাতে স্ত্রী মানসিকভাবে শান্ত হয় এবং পরিবার বা সমাজ পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে।” (তাফসিরে ইবন কাসির, সুরা বাকারা ২:২৩৪, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০০ খ্রি.)
২. ইদ্দতের সময় অবস্থানস্ত্রীকে স্বামীর ঘরেই ইদ্দত পালন করতে হবে। হাদিসে এসেছে, “তোমরা নারীদের তাদের ইদ্দতের সময় স্বামীর বাড়ি থেকে বের করো না।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ২৩১০)
অর্থাৎ, স্ত্রীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য ইসলাম চায় সে যেন নিজের পরিচিত পরিবেশে অবস্থান করে। তবে যদি জীবনের নিরাপত্তা বা বৈধ প্রয়োজনে অন্যত্র যেতে হয়, যেমন চিকিৎসা বা আদালতে উপস্থিতি, তাহলে আলেমদের মতে তা অনুমোদিত। (ইবন কুদামা, আল-মুগনি, খণ্ড ৮, পৃ. ১০৫, কায়রো, ১৯৯৭)
আরও পড়ুনইসলামি দাম্পত্যবিধানে স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ০৪ নভেম্বর ২০২২৩. শোক পালন করানবীজি (সা.) বলেন, “কোনো নারীর জন্য তার স্বামীর মৃত্যুর পর চার মাস দশ দিনের বেশি নয়, আর অন্য কারও জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৮০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৩৮)
এ-সময় করণীয় হল:
সৌন্দর্যবর্ধক প্রসাধন, রঙিন পোশাক বা অলঙ্কার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা,
সুগন্ধি ব্যবহার না করা,
অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া।
এটি কোনো শাস্তি নয়; বরং একটি সম্মানজনক আধ্যাত্মিক শোককাল, যাতে নারী নিজেকে সামলে নিতে পারে এবং সমাজ তাঁর সম্মান রক্ষা করে।
৪. নামাজ, রোজা ও দোয়াস্বামী মারা গেলে স্ত্রীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হল, তাঁর জন্য দোয়া করা, তার নাজাতের জন্য দান-সদকা করা এবং নেক আমল করা।
কোরআনে আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন, “হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের ও আমাদের পূর্বসূরিদের ক্ষমা করুন, যারা ইমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছে।”(সুরা হাশর, আয়াত: ১০)
অর্থাৎ, মৃত স্বামীর জন্য দোয়া করা, কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব পৌঁছানো, তার নামে সদকা করা, এসবই স্ত্রীর জন্য উত্তম আমল।
৫. উত্তরাধিকারইসলামে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ত্যাগ করলে, তোমরা তাদের সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে, আর তোমরা যদি মারা যাও এবং তাদের সন্তান না থাকে, তাহলে তোমাদের স্ত্রী পাবে এক-চতুর্থাংশ; যদি সন্তান থাকে, তবে পাবে এক-অষ্টমাংশ।” (সুরা নিসা, আয়াত: ১২)
অর্থাৎ, স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর নির্দিষ্ট অংশ আছে। ইমাম কুরতুবি বলেন, “ইসলাম প্রথমবারের মতো নারীর সম্পত্তিতে অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে।” (তাফসিরে কুরতুবি, ৫/১৮৯, কায়রো, ২০০৫ খ্রি.)
আরও পড়ুননারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কী বলে ইসলাম২৮ আগস্ট ২০২৫৬. জীবনের পরবর্তী ধাপইসলাম নারীর জীবনে নতুন সূচনার সুযোগ দেয়। ইদ্দত শেষ হওয়ার পর বিধবা চাইলে পুনরায় বিয়ে করতে পারেন।
কোরআনে বলা হয়েছে, “যখন তোমরা নারীদের তালাক দেবে এবং তারা তাদের ইদ্দত পূর্ণ করবে, তখন তোমরা তাদের বাধা দিও না যেন তারা তাদের পছন্দের পুরুষকে বিয়ে করে।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩২)
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, “ইসলামে বিধবার পুনর্বিবাহ মর্যাদাহানিকর নয়; বরং এটি জীবন পুনর্গঠনের অনুমোদিত উপায়।” (শারহু সহিহ মুসলিম, ৯/২৪১, বৈরুত, ২০০১ খ্রি.)
৭. মানসিক ও সামাজিক সহায়তাইসলাম শুধু বিধান নয়, মানবিক দিকটিকেও গুরুত্ব দেয়। বিধবা নারীর প্রতি সমাজের করুণা, সহানুভূতি ও সহায়তা আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় আমল।
রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি বিধবা ও অভাবগ্রস্তদের দেখাশোনা করে, সে সেই ব্যক্তির মতো, যে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে বা সারারাত নামাজ পড়ে ও সারাদিন রোজা রাখে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০০৬)
স্বামীর মৃত্যু এক দুঃসহ পরীক্ষা, কিন্তু ইসলাম এই পরীক্ষাকে ধৈর্যের সুযোগ ও আখিরাতের পুরস্কার হিসেবে দেখায়।
স্ত্রীর করণীয় হল ইদ্দত পালন, শোকের সীমা মানা, দোয়া ও ইবাদতে মনোনিবেশ করা, এবং প্রয়োজনে নতুন জীবনের সূচনা করা। যে স্ত্রী ধৈর্যের সঙ্গে এ বিধানগুলো মেনে চলে, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে উত্তম প্রতিদান, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) কীভাবে বিবাদ মেটাতেন২০ জুন ২০২৫