সিরিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার থাকছে ৫ বছর
Published: 14th, March 2025 GMT
পরিবর্তনকালীন সময়ের জন্য একটি অস্থায়ী সংবিধানে স্বাক্ষর করেছেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। বৃহস্পতিবার এই সাংবিধানিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি।
অস্থায়ী সংবিধানে বলা আছে, ইসলামপন্থি শাসনে চলবে সিরিয়া। এই অস্থায়ী সংবিধান পরিবর্তনকালীন পর্যায় অর্থাৎ পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর হবে। এর আগে গত জানুয়ারিতেই বাতিল করা হয়েছে আগের সংবিধান। আগেই শারা জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দিতে চার-পাঁচ বছর লাগতে পারে।
সাংবিধানিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করার সময় শারা বলেন, এটি সিরিয়ার জন্য একটি নতুন ইতিহাসের সূচনা করবে বলে প্রত্যাশা করছি। এর মাধ্যমে আমরা নিপীড়নের পরিবর্তে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করব। এএফপি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ছোট কূপের পানিতেই চলে যাদের জীবন
রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম নারাইছড়ি গ্রাম। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের সাপছড়ি স্কুল থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক পাহাড়ি পথে হেঁটে এই গ্রামে যেতে হয়। উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ হওয়ায় সেখানে গাড়ি যেতে পারে না।
গ্রামটিতে প্রায় পাঁচশ মানুষের বসবাস। একটি ঝিরির ওপর নির্ভর করেই চলে তাদের জীবন। তবে, শুকনো মৌসুমে ঝিরি শুকিয়ে গেলে খাবারসহ ব্যবহার্য পানির তীব্র কষ্টে ভোগেন সেখানকার বাসিন্দারা। তখন তাদের জীবন চলে দুইটি ছোট কুয়ার পানির ওপর নির্ভর করে।
নারাইছড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সবকয়টি পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষিকাজে পানি ব্যবহার করা হয় ঝিরি থেকে। সেটি বর্তমানে শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানকার অনেক জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। গ্রামের নারীরা দূরের একটি গ্রামের দুইটি ছোট কুয়া থেকে জীবনধারণের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করছেন। এই পানি পিপাষা মেটানোসহ রান্না, গোসল ও অন্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে হয় তাদের।
আরো পড়ুন:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
গজারিয়ায় দীর্ঘ যানজট, দুর্ভোগ চরমে
‘সেতুর অভাবে ঘুরতে হয় ২০ কিলোমিটার’
নারাইছড়ি গ্রামের বাসিন্দা অনিন্দ্য চাকমা বলেন, “শীতের পর থেকে গ্রামে পানির কষ্ট বেড়ে যায়। পাশের ঝিরি থেকে অন্য সময় পানি পাওয়া গেলেও শুকনো মৌসুমে সেটাও থাকে না। ঝিরি শুকিয়ে সড়কের মতো হয়ে যায়। তাই ঘণ্টাখানেক পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে পাশের গ্রামের কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সময় প্রতিদিন পানি সংগ্রহ করা যায় না।”
১০৯ নং সাপছড়ি মৌজার নাড়াইছড়ি গ্রামের কার্বারি (গ্রাম প্রধান) খুলমোহন কার্বারি বলেন, “প্রতিবছর গ্রীষ্মের সময় পানির জন্য পুরো গ্রাম হাহাকার করে। আমাদের কৃষিকাজ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। ঝিরির পানি খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সরকারের কাছে দাবি, তারা যেন আমাদের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করেন।”
দূরের একটি ঝিরি থেকে বোতলে পানি সংগ্রহ করছেন পাহাড়ের এক নারী
এই চিত্র শুধু নারাইছড়ি গ্রামের নয়। রাঙামাটির বেশিরভাগ পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ পানির কষ্টে ভুগছেন। প্রাকৃতিক উৎস ধ্বংসের কারণে শুকনো মৌসুমে পানির জন্য কষ্ট পেতে হচ্ছে বলে জানান পাহাড়ে বসবাসকারীরা।
পাহাড়ের বাসিন্দারা জানান, বর্ষার সময় থেকে শীত মৌসুম পর্যন্ত ঝিরি-ঝর্না থেকে পানি সংগ্রহ করা যায়। মাঘ-ফাল্গুন থেকে পাহাড়ে সুপেয় পানির সঙ্কট দেখা দেয়। সরকারের উদ্যোগে দুর্গম কিছু পাহাড়ি গ্রামে রিংওয়েল ও টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। শুকনো মৌসুমে এসব টিউবওয়েল ও রিংওয়েল থেকে পানি পাওয়া যায় না। সে সময় গ্রামবাসী আশপাশের নিচু জায়গার কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন। এবছর পাহাড়ি অঞ্চলে সেভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির জন্য ধুকছেন গ্রামগুলোর বাসিন্দারা।
তারা জানান, গ্রীষ্মের এই দাবদাহে আধ ঘণ্টা হেঁটে পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে অনেকে কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি সংগ্রহ করেন। অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে অন্য গ্রাম কিংবা হ্রদ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন।
বরকল উপজেলাধীন সুবলং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তরুণজ্যোতি চাকমা জানান, তার ইউনিয়নের কৈকরকিং মারমা পাড়া, মোনপাড়া, হাজাছড়া, হিলছড়ি এলাকায় পানির কষ্ট সবচেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, “পাহাড়ি গ্রামগুলোতে রিংওয়েল, টিউবওয়েলের মাধ্যমে বছরের অন্য সময় পানি পাওয়া গেলেও শুকনো মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না বললেই চলে। দূর-দূরান্তে যেসব ঝর্নায় পানি পাওয়া যায়, সেখান থেকে গ্রামের মানুষরা পানি সংগ্রহ করেন।”
ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, “এই সংকট কাটাতে পানির উৎসস্থলে বনায়ন ও বাঁশ লাগাতে হবে। ছড়ায় বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রেখে গ্রামগুলোতে পৌঁছানোর মাধ্যমেও সমস্যরা সমাধান করা সম্ভব।”
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটি ১০ জেলার মধ্যে বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ির প্রত্যন্ত গ্রামে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এসব এলাকার অনেক মানুষ পাহাড়ের ওপর বসবাস করেন। যে কারণে সেখানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। কিছুটা নিচু জায়গায় পানির স্তর পাওয়া গেলেও সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করতে কষ্ট হয় এসব এলাকার মানুষদের। শুকনো মৌসুমে ঝিরি-ঝর্না শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পানির স্তরও পাওয়া যায় না।
সরকারি হিসেবে, জেলার প্রায় ৫৯ ভাগ মানুষ সুপেয় পানির আওতায় এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বছরের অর্ধেক সময় বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে জেলার ৭০ ভাগ মানুষ পানির অভাবে ভোগেন।
পারিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজ এর নির্বাহী পরিচালক ফজলে এলাহী জানান, মূলত সমতলের পদ্ধতি ব্যবহার করে পাহাড়ে সুপেয় পানির সংকট নিরসন করা সম্ভব না। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ও পাথুরে এলাকা হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ঠিক মতো পাওয়া যায় না। যে কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপনের মধ্য দিয়েও পুরোপুরি পানি সঙ্কট সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য গবেষণার প্রয়োজন।
রাঙামাটি জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া বলেন, “এই মুহূর্তে ৫৮.৪৭ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছেন। যেনব এলাকার মানুষ এখনো বাকি সেখানে পানির ব্যবস্থা করার জন্য আমরা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কমিউনিটি বেইজড পাইপ নেটওয়ার্ক সাপ্লাই স্কিম, রুরাল পাইপ নেটওয়ার্ক সাপ্লাই স্কিমসহ বিভিন্ন স্কিমের মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”
এদিকে, কাপ্তাই হ্রদেও পানি সঙ্কটের কারণে সুপেয় পানির সমস্যা আরো তীব্র হয়েছে। হ্রদ থেকে পরিষ্কার পানি নিয়ে ফুটিয়ে পান করার জন্যও বেগ পেতে হচ্ছে আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। শুকনো মৌসুম হওয়ায় পানি নিম্ন স্তরে রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের রুলকার্ভ অনুসারে পানির স্তর বর্তমানে থাকার কথা ৮১.০৫ এমএসএল (মিনস সী লেভেল)।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হ্রদে পানির স্তর রয়েছে ৭৯.১৪ এমএসএল। অর্থাৎ বর্তমানের সময়ের তুলনায় আরো দুই ফুট পানি কম রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে। কাপ্তাই হ্রদে সর্বনিম্ন পানির স্তর ৬৮ এমএসএল।
ঢাকা/মাসুদ