প্রতিদিন জনপ্রতি জমা করা হয় ১০ টাকা, মাসে ৩০০ টাকা। এক বছরে এ হিসাব দাঁড়ায় ৩৬০০ টাকায়। এই টাকায় ঈদের আগে একেক সদস্য গরুর মাংস পাবেন ৬ কেজি। 
ঈশ্বরদী পৌর এলাকার সাঁড়াগোপালপুর গ্রামে ১০ বছর ধরে ২৫টি ‘মাংস সমিতি’র ৮০০ সদস্য এভাবে ঈদুল ফিতরের আগে গরুর মাংস সংগ্রহ করে থাকেন। দিনমজুর থেকে শুরু করে অবস্থাসম্পন্ন সবাই এ সমিতির সদস্য হন। প্রতিটি সমিতিতে ২৫ থেকে ৫০ জন সদস্য রয়েছেন। 
এবার ঈদুল ফিতরের আগে বৃহস্পতিবার সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় সমিতির পক্ষ থেকে ৪০টি গরু জবাই হয়েছে। সকাল থেকেই স্কুলপাড়া, ফরাজীপাড়া, বাঘইল মন্নবীপাড়া, মৌলভীপাড়া, বকশিরচক, মধ্যপাড়ায় সব বয়সী মানুষের মধ্যে মাংস ভাগাভাগি নিয়ে শুরু হয়েছে ঈদের আনন্দ। 
সাঁড়াগোপালপুর স্কুলপাড়ার মাংস সমিতির উদ্যোক্তা হাসান চৌধুরী বলেন, ৮-৯ বছর ধরে এভাবে ঈদের মাংস সংগ্রহ করি। এতে কম দামে টাটকা ও নির্ভেজাল মাংস পাচ্ছি। অনেকেরই নগদ ৭০০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে কষ্ট হয়। তারা প্রতিদিন ১০ টাকা করে বছর শেষে ৬ কেজি করে মাংস পাচ্ছেন। 
বাঘইল মন্নবীপাড়ার নবাব মোড়ে এক স্থানেই জবাই হচ্ছিল কয়েকটি গরু। নবাব মোড়ের এ সমিতির সদস্য আনোয়ার হোসেন রিপন জানান, আমাদের সমিতিতে ধনী-গরিব সবাই সদস্য। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে শামিল হই। এতে বন্ধন মজবুত হয়। 
সাঁড়াগোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শিক্ষক-কর্মচারী ও স্থানীয় বন্ধু-স্বজন মিলে ঈদের আগে হাট থেকে গরু কিনে এনে মাঠে জবাই করি। এই আয়োজনের উদ্দেশ্য একসঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

মির্জাপুরে নদের ভাঙন থেকে সেতু বাঁচাতে জিওব্যাগ ফেলছেন গ্রামবাসী

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ঝিনাই নদের ভাঙন রোধে থলপাড়া সেতুর দুই পাশে জিওব্যাগভর্তি বালু ফেলছেন এলাকাবাসী। উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

থলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমান (৭৫) প্রথম আলোকে বলেন, ‘জন্মের পর থিক্যা নদী পারের জন্য কত কষ্ট করছি। বর্ষায় নৌকা দিয়া পার অইতে ভয় পাইছি। সবেমাত্র কয়েক বছর অইলো বিরিজটা অইছে। এর মধ্যেই তা ভাঙার পর্যায়ে গেছে। ওই বিরিজ না থাকলে আমাগো কি উপায় অইবো। হেই জন্যেই গ্রামের মানুষের মিলা এই কাম করছি।’

এলাকাবাসী জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে ঝিনাই নদের (স্থানীয়দের ভাষায় বউমরা নদী) বিভিন্ন স্থানে খননযন্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালু তুলে অন্যত্র বিক্রি করে আসছেন। এর মধ্যে ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া, ফতেপুর, বৈলানপুর, হিলড়া এক টাকার বাজার উল্লেখযোগ্য। এতে হিলড়া বাজার, কুর্ণী ফতেপুর সড়ক, ফতেপুর বাজারের অধিকাংশ জায়গাসহ ফসলি জমি নদে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিতে পড়েছে থলপাড়া সেতু। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন প্রতিবাদ করলেও লাভ হয়নি। এ বছর ঈদুল ফিতরের আগে গ্রামবাসী ভাঙন রোধে আলোচনা করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের নামাজের পর থলপাড়া ঈদগাহ মাঠে চাঁদা আদায় শুরু হয়। সেখানে গ্রামের বাসিন্দা চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীরা নগদ অর্থ দেন। অনেকেই টাকা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। প্রবাসীরাও নানাভাবে টাকা পাঠান।

ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শামছুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদ থেকে বালু তোলার ফলে অন্যান্য স্থানের মতো থলপাড়া সেতুও ঝুঁকিতে পড়ে। এতে নদ পারাপার নিয়ে গ্রামের লোকজনের মধ্যে শঙ্কা দেখা দেয়। পরে গ্রামবাসী ও স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিলে নিজস্ব অর্থায়নে সেতুর দুই পাশে জিওব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।

গ্রামের বাসিন্দা ও ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খান বলেন, ২০১৪ সালে নির্মিত থলপাড়া সেতু দিয়ে ওই গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চাকলেশ্বর, সুতানড়ী, বানকাটা, বৈন্যাতলী, গোবিন্দপুর, পারদিঘী পূর্বপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী বাসাইল উপজেলার যতুকী, সিঙ্গারডাক গ্রামের মানুষ চলাচল করেন। সেতুটির দুই পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন খুবই চিন্তিত ছিলেন।

গ্রামের বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য মতে, সেতুটির দুই পাশে দুই হাজার জিওব্যাগ ফেলতে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয় হবে। এ পর্যন্ত গ্রামবাসী ৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩৫ টাকা দরে জিওব্যাগগুলো কেনা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে থলপাড়া চর থেকে বালু নিয়ে শ্রমিক দিয়ে বস্তা ভরা হয়েছে।

গতকাল রোববার ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী জিওব্যাগ ফেলার কাজের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, থলপাড়া গ্রামটি মূলত বিএনপি–অধ্যুষিত গ্রাম। গ্রামটির লোকজন স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের নিয়ে সেতু রক্ষায় যে কাজ করলেন, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি ঝিনাইসহ মির্জাপুরের বংশাই ও লৌহজং নদের ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রান্ত পন্ডিত প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামবাসীর সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ ধরণের ভাল কাজের সঙ্গে সরকারের সবসময় সহযোগিতা থাকে। থলপাড়া সেতুসহ ওই নদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাঙন রোধে প্রকল্প প্রস্তুত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে দেওয়া আছে। বরাদ্দ পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ