শ্রম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দেবে কাল, ট্রেড ইউনিয়নের নিয়ম শিথিলের সুপারিশ থাকবে
Published: 20th, April 2025 GMT
শ্রম সংস্কার কমিশন আগামীকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। এই কমিশনের একাধিক সদস্য আজ রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদকে প্রধান করে গত নভেম্বরে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তবে কমিশন একাধিকবার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো, ট্রেড ইউনিয়ন করার নিয়মকানুন শিথিলকরণ, শ্রমিকদের তথ্যভান্ডার, কর্মক্ষেত্রে আহত ও নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের নতুন মানদণ্ড প্রণয়ন, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করবে শ্রম সংস্কার কমিশন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, সব শ্রমিকের স্বীকৃতির বিষয়ে সুপারিশ করা হবে। ট্রেড ইউনিয়ন করার নিয়মকানুন শিথিলের ক্ষেত্রে শ্রমিকের সম্মতির হারটি শতকরা নয়, সংখ্যায় করার সুপারিশ থাকবে।
১৯ সদস্যের এই কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক সচিব মাহফুজুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি তপন দত্ত, বাংলাদেশ লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে এম নাসিম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সাবেক সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাকিল আখতার চৌধুরী, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার প্রমুখ।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে যত বেশি মতামত সংগ্রহ করা যায়, তার ওপর আমরা জোর দিয়েছি। প্রথমেই আমরা এমন শ্রমিকদের কথা শুনেছি, যাঁরা আইনের আওতায় নেই; যাঁদের কথা বলার জায়গা নেই। গৃহশ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের কাছেও আমরা যাওয়ার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার পরও আমার অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে—শ্রম খাতে বৈষম্য ও বঞ্চনা এত বেশি গভীর যে এই স্বল্প সময়ে সবটা তুলে আনা সম্ভব নয়। তবু যতটা সম্ভব আমরা তুলে আনার চেষ্টা করব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে মসজিদ ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ওয়াকফকৃত জমিতে ৩ যুগ আগে নির্মিত পাকা মসজিদ ভেঙে বাণিজ্যিক বহুতল ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি সমর্থক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
মসজিদটি পুন:নির্মাণ করার কথা বলে ভাঙা শুরু করা হয়। পরে নিজের জমি দাবি করে বাণিজ্যিক বহুতল ভবন নির্মাণ করার কথা বলায় এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।
ন্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের সালুহাজী রোড এলাকায় নিজের ক্রয়কৃত জমিতে ৩ যুগ আগে বায়তুস সালাম জামে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন ঢাকার সূত্রাপুর থানা এলাকার শিল্পপতি মরহুম হাজী সালাউদ্দিন মিয়া। পরে তিনি মসজিদের জন্য ৫ শতাংশ জমি ওয়াকফ করে দেন।
২০০২ সালের ৪ এপ্রিল ওয়াকফ নামা দলিলটি সম্পাদিত হয়। সালাউদ্দিন মিয়ার মৃত্যুর পর তার সন্তানেরা মসজিদের আশপাশের অধিকাংশ জমি বিক্রি করে দেন। এখনো কিছু জমি রয়ে গেছে। তবে তারা জমির কোন খোঁজ খবর রাখেন না।
এ সুযোগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে বিএনপি সমর্থক শহিদুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করে মসজিদের জমি দখল করেন।
স্থানীয় মার্কাজুল আজিজ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজ বলেন, ওয়াকফকৃত জমিতে ৩ যুগ আগে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর শহিদুল ইসলাম মসজিদের আশপাশের খালি জামিতে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে নিজেই ভাড়া নিতেন।
মসজিদ ভাঙা শুরু করার পর প্রকৃত উদ্দেশ্য জানতে পেরে আমিসহ স্থানীয় লোকজন গিয়ে বাধা দেই। দোকানপাটের ভাড়া কোন ব্যক্তি নয়, মসজিদের তহবিলে জমা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির গৃহায়ন ভূমি ও পুনর্বাসন সম্পাদক আবুল খায়ের শান্ত বলেন, মসজিদ ভেঙে জমি দখল করে যারা বাণিজ্যিক ভবণ নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা প্রকৃত মুসলমান হতে পারেনা।
শহিদুল ইসলামের পেটে এত খিদা যে তিনি মসজিদের জমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে মাসে ৪৮ হাজার টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন। শুধু মসজিদের খালি জমি নয় তিনি মসজিদ ভেঙে সমস্ত জমি গ্রাস করতে চান। একজন মুসলমান হিসেবে আমরা তা হতে দেব না।
স্থানীয় সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, মসজিদের জমিটি ওয়াক্ফকৃত। এটা ব্যক্তি মালিকানা জমি না। ৩ যুগ ধরে এ মসজিদে এলাকার মুসল্লিরা ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে আসছে।
মসজিদ ভাঙার খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়েছিলাম। মসজিদের জমি বাদে ভবন নির্মাণ করার কথা বলে আসছি। মসজিদের জমিতে ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।
মরহুম সালাউদ্দিন মিয়ার ছেলে জসিম মিয়া বলেন, বহুবছর আগে আমার বাবা নিজ অর্থায়নে দ্বিতীয় তলা মসজিদ নির্মাণ করে দুটি দলিলে ৭ শতাংশ জমি ওয়াকফ করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দোসর শহিদুল ইসলামসহ সঙ্গবদ্ধ একটি ভূমিদস্যু চক্র মসজিদ ভেঙে জমি দখল করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার চেষ্টা করছে বলে জানতে পেরেছি।
ব্যাস্ততার কারণে আমি নিজে যেতে পারছিনা। স্থানীয় কয়েকজন গণমাণ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়েছি তারা যেন মসজিদের জমি রক্ষা করার উদ্যোগ নেন।
শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ক্রয়সূত্রে এ জমির মালিক। এখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। তবে নিচ ও দ্বিতীয় তলাটি মসজিদ হিসেবেই থাকবে। মসজিদের দেখা শোনা আমিই করবো।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহিনূর আলম বলেন, মসজিদ ভেঙে ফেলার বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একজন অভিযোগ করতে এসেছিল। তখন অন্য পক্ষও থানা আসেন। এসময় উভয় পক্ষ আমার কাছে আসলে স্থানীয়ভাবে মিলে মসজিদ উন্নয়নের জন্য কাজ করতে উভয় পক্ষকে বলে দিয়েছি।
বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসক (যুগ্ন সচিব) নূর-ই-আলম ও উপ প্রশাসক (উপসচিব) মো. মেহেদী হাসানের ব্যবহৃত মোঠো ফোনে একাধিকবার ফোন করলে রিং হলেও তারা রিসিভ করেন নি।