শ্রম সংস্কার কমিশন আগামীকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। এই কমিশনের একাধিক সদস্য আজ রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদকে প্রধান করে গত নভেম্বরে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তবে কমিশন একাধিকবার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো, ট্রেড ইউনিয়ন করার নিয়মকানুন শিথিলকরণ, শ্রমিকদের তথ্যভান্ডার, কর্মক্ষেত্রে আহত ও নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের নতুন মানদণ্ড প্রণয়ন, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করবে শ্রম সংস্কার কমিশন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, সব শ্রমিকের স্বীকৃতির বিষয়ে সুপারিশ করা হবে। ট্রেড ইউনিয়ন করার নিয়মকানুন শিথিলের ক্ষেত্রে শ্রমিকের সম্মতির হারটি শতকরা নয়, সংখ্যায় করার সুপারিশ থাকবে।

১৯ সদস্যের এই কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক সচিব মাহফুজুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি তপন দত্ত, বাংলাদেশ লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে এম নাসিম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সাবেক সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাকিল আখতার চৌধুরী, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার প্রমুখ।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে যত বেশি মতামত সংগ্রহ করা যায়, তার ওপর আমরা জোর দিয়েছি। প্রথমেই আমরা এমন শ্রমিকদের কথা শুনেছি, যাঁরা আইনের আওতায় নেই; যাঁদের কথা বলার জায়গা নেই। গৃহশ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের কাছেও আমরা যাওয়ার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার পরও আমার অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে—শ্রম খাতে বৈষম্য ও বঞ্চনা এত বেশি গভীর যে এই স্বল্প সময়ে সবটা তুলে আনা সম্ভব নয়। তবু যতটা সম্ভব আমরা তুলে আনার চেষ্টা করব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

স্বপ্ন এভাবেও পূরণ হয় জানতেন না সাকলাইন

টেপ টেনিসের মৌসুম শুরু হয়েছে মাসখানেক হলো। এর আগে দেশের টেপ টেনিস ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর ‘টেপ বল বিপিএল’ হলো। যেখানে পাকিস্তান থেকে খেলোয়াড় এসেও খেলে গেছেন।

মৌসুমে টেপ টেনিস ক্রিকেটে যারা ‘খ‌্যাপ’ খেলে বেড়ান তারা দম ফেলার ফুরসত পান না। আব্দুল গাফফার সাকলাইন তেমনই একটি মৌসুম কাটানোর অপেক্ষায় ছিলেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ফোন আসছিল তার কাছে। চাওয়া হচ্ছিল ‘ডেট’। কিন্তু ৩০ নভেম্বরের বিকেলে তার পুরো পৃথিবী যেন পাল্টে গেল। স্বপ্ন যে সত‌্যি হয়, বাস্তবে রূপ নেয় সেদিন বুঝেছিলেন সাকলায়েন।

সম্প্রতি কাতারে অনুষ্ঠিত রাইজিং স্টার্স এশিয়া কাপে দারুণ পারফরম‌্যান্সে আলোচনায় আসেন ২৭ বছর বয়সী পেসার সাকলাইন। বাংলাদেশ ‘এ’ দলে প্রথমবার খেলে নজরে আসার মাধ‌্যমে বিপিএলের নিলামে তার নাম উঠে। ভিত্তিমূল‌্য ছিল ১৪ লাখ। ক‌্যাটাগরি ছিল ডি। সেখান থেকে প্রায় ‘এ’ ক‌্যাটাগরির কাছাকাছি ভিত্তিমূল‌্যে গিয়ে ৪৪ লাখে বিক্রি হন। কিনে নেয় রাজশাহী ওয়ারিয়র্স।
দুই মাস আগেই যিনি টেপ টেনিসে একটা ভালো মৌসুম কাটানোর চিন্তা করতেন এখন তাকে দেখা যাবে স্বীকৃত ক্রিকেটে। স্বপ্নের ঘোর কাটে না সাকলায়নের। রাইজিংবিডিকে সেই কথাই শোনালেন তিনি, ‘‘নিলামে নাম উঠার পর থেকে মনের মধ‌্যে আনন্দ লাগা শুরু করেছিল। কাতারে আমার পারফরম‌্যান্স সবার ভালো লেগেছিল। মনে হচ্ছিল এবার হয়তো কেউ সুযোগ দিলে দিতে পারে। স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু এভাবেও যে পূরণ হয় তা কল্পনাও করতে পারিনি।’’

নিলামের আগে টিভির সামনে বসে ছিলেন সাকলায়েন। ডি ক‌্যাটাগরিতে থাকায় নিলামে পরে উঠবে তার নাম বোঝা যাচ্ছিল। অপেক্ষায় ছিলেন নাম উঠার। যখনই নাম উঠল। তখন হৃদস্পন্দন বাড়তে শুরু করে তার, ‘‘নাম ওঠার পর আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। প্রথমবার এমন কিছু হচ্ছে। বিপিএল খেলবো, যেটা আমি গত ১০ বছর টিভিতে দেখেছি, মাঠে বসে দেখেছি সেখানে খেলবো…আমার নাম উঠার পর যখন আগ্রহ দেখাল তখন থেকেই আমার আনন্দ শুরু হয়ে যায়। টাকা কতো উঠবে, কোথায় গিয়ে শেষ হবে সেটা আমার চিন্তাতেও ছিল না। আমি শুধু ভাবছিলাম একটা সুযোগ আমাকে হয়তো দেবে।’’

টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলে উঠে আসলেও ক্লাব ক্রিকেটে তার পথ চলা লম্বা সময়ের। দুটোই পাশাপাশি চলে তার। ওরিয়েন্ট স্পোর্টস ক্লাব দিয়ে ঢাকা লিগে খেলা শুরু তার। এরপর গাজী টায়ার, কাকরাইল বয়েজ। এরপর প্রিমিয়ার লিগে গাজী গ্রুপে দুই বছর খেলেন। জাতীয় লিগে খেলেন রংপুরের হয়ে। এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে দলকে চ‌্যাম্পিয়ন করতে রাখেন বড় ভূমিকা।
টেপ টেনিস ক্রিকেট ও ক্রিকেট বলের ক্রিকেটের পার্থক‌্য খুব একটা পান না সাকলাইন। দুটোতেই ‘জান’ দিয়ে খেলতে হয়। তবে তার মানসিকতা, ভাবনায় আমূল পরিবর্তন আসে যখন এইচপির ক‌্যাম্পে সুযোগ পান।

‘‘ক্রিকেটে এতো খুঁটিনাটি বিষয় আছে আমার কাগে জানা ছিল না। কিছু কাজ আছে যেগুলো করলে কাজটা সহজ হয়ে যায়…আমি চেয়েছিলাম বিসিবির রাডারে আসতে। যেখানে আমার স্কিলের আরও উন্নতি হবে। এইচপিতে সেটাই হয়েছে। ফিটনেস, মানসিকতা, শক্তি, শৃঙ্খলা গড়ে উঠেছে। কিভাবে ক্রিকেটাররা নিজেদেরকে তৈরি করেন, একসঙ্গে থাকলে কিভাবে মানসিকতা বৃদ্ধি পায় সেগুলো বুঝতে পেরেছি। আমার খুব কাজে দিয়েছে।’’

কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে, তিলে তিলে নিজেকে গড়ে সাকলাইন এতোদূর এসেছেন। বিপিএলে স্বপ্নের ডানা মেলে উড়তে চান। আরো শানিত হতে চান। নিজের ভুল শুধতে নিতে চান। হতে চান আরো নিখুঁত। নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ‌্য স্থির না করে খোলামনে বিপিএল খেলার কথা বললেন, ‘‘আমি যেভাবে উঠে এসেছি, যেভাবে খেলেছি এতোদিন বিপিএল আমার জন‌্য বিরাট মঞ্চ। এখানে পারফর্ম করলে অনেক দূর যাওয়া যাবে। তবে আমি এতোটা দূর ভাবছি না। ধীর স্থির ভাবে এগিয়ে যেতে চাই। আমাকে শিখতে হবে।  নিজেকে উন্নতি করতে হবে। যদি পারফর্ম করতে পারি তাহলে আমার পরবর্তী ধাপগুলোতেও সুযোগ আসবে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ