গত চার দশকে আগের চেয়ে চার গুণ দ্রুত হারে বেড়েছে বিশ্বের মহাসাগরগুলোর উষ্ণতা। সম্প্রতি ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইএসএ) পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য, যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের গতি ও ভয়াবহতা নিয়ে নতুন করে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। গতকাল রোববার দি আর্থ ডটকমের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে বিষয়টি।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রতি দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বেড়েছিল ০.
এই দীর্ঘমেয়াদি বিশ্লেষণে বিজ্ঞানীরা ইউরোপীয় স্যাটেলাইট মিশন থেকে পাওয়া ২০টি ইনফ্রারেড রেডিওমিটার ও দুটি মাইক্রোওয়েভ সেন্সরের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। পাশাপাশি জাহাজ ও ভাসমান বয়ার মাধ্যমে সংগৃহীত ডেটাও যাচাই-বাছাই করে একত্র করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমুদ্রপৃষ্ঠ তাপমাত্রার তথ্যভাণ্ডার।
সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ার ক্ষেত্রে দায়ী হিসেবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণ বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা, যেমন– আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, এল নিনো ও লা নিনা, সূর্যের চক্র। এই প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো সাময়িক প্রভাব ফেললেও দীর্ঘমেয়াদি উষ্ণতার পেছনে এগুলোর কোনো ভূমিকা নেই বলেই দেখেছেন বিশ্লেষকরা। মূলত গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে সূর্য থেকে আসা তাপ পৃথিবীর উপরিভাগে আটকে গিয়ে সৃষ্টি করছে তাপের ভারসাম্যহীনতা। এই বাড়তি তাপের বড় অংশ শোষণ করছে সমুদ্র। ফলে দ্রুত বাড়ছে সমুদ্রের তাপমাত্রা।
ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের গবেষক ক্রিস মার্চেন্ট বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়ার এই প্রবণতা আসলে আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের প্রতিচ্ছবি।’
সমুদ্রের এই অতিরিক্ত উষ্ণতা শুধু পরিসংখ্যানগত বিষয়ই নয়, এর রয়েছে সরাসরি প্রভাব। ঘূর্ণিঝড়কে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে গরম পানি। ফলে ঘূর্ণিঝড় হয় আরও বিধ্বংসী। উষ্ণতার কারণে মারা যাচ্ছে প্রবাল প্রাচীর। বাসস্থান পরিবর্তন করছে সামুদ্রিক প্রাণী, যার প্রভাব পড়ছে মৎস্যজীবীদের জীবিকায়। উষ্ণ পানি প্রসারিত হওয়ায় বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এতে প্লাবনের ঝুঁকিতে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। বদলে যাচ্ছে বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়ার ধারা।
গবেষকরা বলছেন, এই পরিবর্তন বুঝতে ও মোকাবিলা করতে হলে আরও নিখুঁত পর্যবেক্ষণ জরুরি। ইএসএ ইতোমধ্যে ‘মোটিকিউসোমা’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে, যা পৃথিবীর তাপ ভারসাম্য বিশ্লেষণ করছে। ভবিষ্যতে উন্নত স্যাটেলাইট মিশনের মাধ্যমে এই পর্যবেক্ষণ আরও কার্যকর হবে।
নতুন এই গবেষণা আবারও প্রমাণ করেছে, মানবসৃষ্ট অতিরিক্ত তাপ শোষণ করা মহাসাগরগুলোও অতিরিক্ত দূষণে নাকাল। পরিবেশবিদদের মতে, এখনই যদি কার্যকরভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো না যায়, তবে ভবিষ্যতে উষ্ণতা আরও বাড়বে এবং তার ফলাফল হবে ভয়াবহ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শনি গ্রহের চাঁদের তথ্য সংগ্রহে মহাকাশযান পাঠাবে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা
শনি গ্রহের বরফে আবৃত এনসেলাডাস চাঁদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ)। উচ্চাভিলাষী এ পরিকল্পনার আওতায় শনি গ্রহে অরবিটার ও ল্যান্ডার নামের দুটি মহাকাশযান পাঠানো হবে। ল্যান্ডার মহাকাশযানটি কয়েক কিলোমিটার বরফ ভেদ করে ড্রিল করার পরিবর্তে সরাসরি প্রাকৃতিক প্লাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে। একই সময়ে অরবিটার ওপর থেকে এনসেলাডাসের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। এ পদ্ধতিতে এনসেলাডাসে ভিনগ্রহের জীবন আছে কি না, তা জানা যাবে।
এনসেলাডাস একটি ছোট বরফে আবৃত চাঁদ। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ক্যাসিনি মিশনের মাধ্যমে চাঁদটির ভূপৃষ্ঠের নিচে মহাসাগর থাকতে পারে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আর তাই ইএসএর বিজ্ঞানীরা এনসেলাডাস থেকে নির্গত শক্তিশালী প্লাম বা জলীয় বাষ্প, বরফকণা ও জৈব যৌগের তথ্য সংগ্রহ করতে চান। ইএসএ আশা করছে, এনসেলাডাসে মহাকাশযান পাঠালে পৃথিবীতে বাইরে মাইক্রোবিয়াল বা আদিম জীবনের অস্তিত্ব আছে কি না, তা জানা যাবে। মিশনটি বহির্জাগতিক জীবনের চলমান অনুসন্ধানে একটি বড় সাফল্য হতে পারে।
আরও পড়ুনশনি গ্রহে অদ্ভুত বস্তুর আঘাত১১ জুলাই ২০২৫এই মিশনে দুটি মহাকাশযানের মধ্যে শক্তিশালী সমন্বয় থাকবে বলে জানা গেছে। অরবিটার ওপর থেকে এনসেলাডাসের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। পৃষ্ঠের মানচিত্র তৈরি করবে, পানির আধারের রাসায়নিক তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি শনি গ্রহের চৌম্বকক্ষেত্রের সঙ্গে চাঁদটির মিথস্ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে। আর ল্যান্ডার টাইগার স্ট্রাইপস অঞ্চলের কাছাকাছি অবতরণ করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। এ বিষয়ে ইএসএর বিজ্ঞানী জর্ন হেলবার্ট বলেন, ‘এনসেলাডাস এমন একটি স্থান, যেখানে আমরা সত্যিই মহাসাগরের সন্ধান পেতে পারি।’
ইএসএ সৌরশক্তি ব্যবহার করে মিশনটি পরিচালনা করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০৪০–এর দশকে উৎক্ষেপণের পরে মহাকাশযানটি শনি গ্রহের দিকে একটি দীর্ঘ আন্তগ্রহীয় যাত্রা শুরু করবে। এরপর ২০৫২ সালে এনসেলাডাসের পৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম শুরু করবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া