গত চার দশকে আগের চেয়ে চার গুণ দ্রুত হারে বেড়েছে বিশ্বের মহাসাগরগুলোর উষ্ণতা। সম্প্রতি ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইএসএ) পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য, যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের গতি ও ভয়াবহতা নিয়ে নতুন করে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। গতকাল রোববার দি আর্থ ডটকমের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে বিষয়টি।

গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রতি দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বেড়েছিল ০.

০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ০.২৭ ডিগ্রিতে, যা আগের তুলনায় প্রায় চার গুণ।

এই দীর্ঘমেয়াদি বিশ্লেষণে বিজ্ঞানীরা ইউরোপীয় স্যাটেলাইট মিশন থেকে পাওয়া ২০টি ইনফ্রারেড রেডিওমিটার ও দুটি মাইক্রোওয়েভ সেন্সরের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। পাশাপাশি জাহাজ ও ভাসমান বয়ার মাধ্যমে সংগৃহীত ডেটাও যাচাই-বাছাই করে একত্র করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমুদ্রপৃষ্ঠ তাপমাত্রার তথ্যভাণ্ডার।

সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ার ক্ষেত্রে দায়ী হিসেবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণ বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা, যেমন– আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, এল নিনো ও লা নিনা, সূর্যের চক্র। এই প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো সাময়িক প্রভাব ফেললেও দীর্ঘমেয়াদি উষ্ণতার পেছনে এগুলোর কোনো ভূমিকা নেই বলেই দেখেছেন বিশ্লেষকরা। মূলত গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে সূর্য থেকে আসা তাপ পৃথিবীর উপরিভাগে আটকে গিয়ে সৃষ্টি করছে তাপের ভারসাম্যহীনতা। এই বাড়তি তাপের বড় অংশ শোষণ করছে সমুদ্র। ফলে দ্রুত বাড়ছে সমুদ্রের তাপমাত্রা।

ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের গবেষক ক্রিস মার্চেন্ট বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়ার এই প্রবণতা আসলে আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের প্রতিচ্ছবি।’

সমুদ্রের এই অতিরিক্ত উষ্ণতা শুধু পরিসংখ্যানগত বিষয়ই নয়, এর রয়েছে সরাসরি প্রভাব। ঘূর্ণিঝড়কে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে গরম পানি। ফলে ঘূর্ণিঝড় হয় আরও বিধ্বংসী। উষ্ণতার কারণে মারা যাচ্ছে প্রবাল প্রাচীর। বাসস্থান পরিবর্তন করছে সামুদ্রিক প্রাণী, যার প্রভাব পড়ছে মৎস্যজীবীদের জীবিকায়। উষ্ণ পানি প্রসারিত হওয়ায় বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এতে প্লাবনের ঝুঁকিতে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। বদলে যাচ্ছে বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়ার ধারা।

গবেষকরা বলছেন, এই পরিবর্তন বুঝতে ও মোকাবিলা করতে হলে আরও নিখুঁত পর্যবেক্ষণ জরুরি। ইএসএ ইতোমধ্যে ‘মোটিকিউসোমা’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে, যা পৃথিবীর তাপ ভারসাম্য বিশ্লেষণ করছে। ভবিষ্যতে উন্নত স্যাটেলাইট মিশনের মাধ্যমে এই পর্যবেক্ষণ আরও কার্যকর হবে।

নতুন এই গবেষণা আবারও প্রমাণ করেছে, মানবসৃষ্ট অতিরিক্ত তাপ শোষণ করা মহাসাগরগুলোও অতিরিক্ত দূষণে নাকাল। পরিবেশবিদদের মতে, এখনই যদি কার্যকরভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো না যায়, তবে ভবিষ্যতে উষ্ণতা আরও বাড়বে এবং তার ফলাফল হবে ভয়াবহ।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত দিয়ে আবারও ভারত-চীন সরাসরি ফ্লাইট চালু

পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে আবারও সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। এটি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। দুই দেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ পদক্ষেপ জরুরি।

 ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ সংস্থা ইন্ডিগো স্থানীয় সময় রাত ১০টায় কলকাতা থেকে গুয়াংঝুতে প্রথম দৈনিক ফ্লাইটটি পরিচালনা করে। ভারত ও হংকংয়ের মধ্যে নিয়মিত ফ্লাইট চলছে। আর রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে সাংহাই ও গুয়াংঝুর অতিরিক্ত ফ্লাইট নভেম্বর থেকে চালু হবে।

আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশ্বের দুই জনবহুল দেশ ভারত ও চীন একে অপরের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০২০ সালে দুই দেশের সেনাসদস্যদের মধ্যে প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করে।

ভারত সরকার বলেছে, নতুন করে ফ্লাইট চলাচল শুরু হওয়ার বিষয়টি দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভারত মস্কোর তেল কিনে রাশিয়াকে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালাতে সাহায্য করছে। এ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। আর এমন প্রেক্ষাপটে দিল্লি-বেইজিং সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করে।

আরও পড়ুনভারত-চীন কাছাকাছি এলে যুক্তরাষ্ট্র কি এশিয়ায় ধাক্কা খাবে২৪ আগস্ট ২০২৫

চীনের সঙ্গের ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর শহর কলকাতার সম্পর্কটা কয়েক শতাব্দী পুরোনো। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকেই দুই পক্ষের সম্পর্ক আছে। ওই সময় চীনা ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য করতে কলকাতায় যেতেন।

কলকাতার চায়না টাউন এলাকার সামাজিক সংগঠনের নেতা চেন খোই কুই বলেন, ‘আমাদের মতো যেসব মানুষের চীনে আত্মীয়স্বজন আছে, তাদের জন্য এটা দারুণ খবর। আকাশপথের এ যোগাযোগ দুই দেশের বাণিজ্য, পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভ্রমণকে আরও এগিয়ে নেবে।’

আরও পড়ুনভারত কি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটছে১০ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ