মির্জাপুরে নদের ভাঙন থেকে সেতু বাঁচাতে জিওব্যাগ ফেলছেন গ্রামবাসী
Published: 21st, April 2025 GMT
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ঝিনাই নদের ভাঙন রোধে থলপাড়া সেতুর দুই পাশে জিওব্যাগভর্তি বালু ফেলছেন এলাকাবাসী। উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
থলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমান (৭৫) প্রথম আলোকে বলেন, ‘জন্মের পর থিক্যা নদী পারের জন্য কত কষ্ট করছি। বর্ষায় নৌকা দিয়া পার অইতে ভয় পাইছি। সবেমাত্র কয়েক বছর অইলো বিরিজটা অইছে। এর মধ্যেই তা ভাঙার পর্যায়ে গেছে। ওই বিরিজ না থাকলে আমাগো কি উপায় অইবো। হেই জন্যেই গ্রামের মানুষের মিলা এই কাম করছি।’
এলাকাবাসী জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে ঝিনাই নদের (স্থানীয়দের ভাষায় বউমরা নদী) বিভিন্ন স্থানে খননযন্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালু তুলে অন্যত্র বিক্রি করে আসছেন। এর মধ্যে ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া, ফতেপুর, বৈলানপুর, হিলড়া এক টাকার বাজার উল্লেখযোগ্য। এতে হিলড়া বাজার, কুর্ণী ফতেপুর সড়ক, ফতেপুর বাজারের অধিকাংশ জায়গাসহ ফসলি জমি নদে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিতে পড়েছে থলপাড়া সেতু। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন প্রতিবাদ করলেও লাভ হয়নি। এ বছর ঈদুল ফিতরের আগে গ্রামবাসী ভাঙন রোধে আলোচনা করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের নামাজের পর থলপাড়া ঈদগাহ মাঠে চাঁদা আদায় শুরু হয়। সেখানে গ্রামের বাসিন্দা চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীরা নগদ অর্থ দেন। অনেকেই টাকা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। প্রবাসীরাও নানাভাবে টাকা পাঠান।
ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শামছুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদ থেকে বালু তোলার ফলে অন্যান্য স্থানের মতো থলপাড়া সেতুও ঝুঁকিতে পড়ে। এতে নদ পারাপার নিয়ে গ্রামের লোকজনের মধ্যে শঙ্কা দেখা দেয়। পরে গ্রামবাসী ও স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিলে নিজস্ব অর্থায়নে সেতুর দুই পাশে জিওব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।
গ্রামের বাসিন্দা ও ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খান বলেন, ২০১৪ সালে নির্মিত থলপাড়া সেতু দিয়ে ওই গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চাকলেশ্বর, সুতানড়ী, বানকাটা, বৈন্যাতলী, গোবিন্দপুর, পারদিঘী পূর্বপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী বাসাইল উপজেলার যতুকী, সিঙ্গারডাক গ্রামের মানুষ চলাচল করেন। সেতুটির দুই পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন খুবই চিন্তিত ছিলেন।
গ্রামের বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য মতে, সেতুটির দুই পাশে দুই হাজার জিওব্যাগ ফেলতে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয় হবে। এ পর্যন্ত গ্রামবাসী ৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩৫ টাকা দরে জিওব্যাগগুলো কেনা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে থলপাড়া চর থেকে বালু নিয়ে শ্রমিক দিয়ে বস্তা ভরা হয়েছে।
গতকাল রোববার ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী জিওব্যাগ ফেলার কাজের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, থলপাড়া গ্রামটি মূলত বিএনপি–অধ্যুষিত গ্রাম। গ্রামটির লোকজন স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের নিয়ে সেতু রক্ষায় যে কাজ করলেন, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি ঝিনাইসহ মির্জাপুরের বংশাই ও লৌহজং নদের ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রান্ত পন্ডিত প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামবাসীর সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ ধরণের ভাল কাজের সঙ্গে সরকারের সবসময় সহযোগিতা থাকে। থলপাড়া সেতুসহ ওই নদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাঙন রোধে প্রকল্প প্রস্তুত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে দেওয়া আছে। বরাদ্দ পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র মব স ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, বিএনপিতে ফিরলেন ৭ নেতা
দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত বিএনপির সাত নেতাকে পুনরায় দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় এ তথ্য।
আরো পড়ুন:
একটি দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে: সালাহউদ্দিন
‘মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার প্রতিশোধ আমি নেব না, অন্যরা কিছু করলে আপত্তি নেই’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য দলের ৭ নেতাকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরে পাওয়া বিএনপির ওই ৭ নেতা হলেন
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলাধীন ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল উদ্দিন সরকার পাপ্পু, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, পিরোজপুর জেলাধীন মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলাল, নীলফামারী জেলাধীন জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী কমেট, রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মোকাররম হোসেন সুজন এবং রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আলি সরকার।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ