চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ প্রশমনের লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। শনিবার এ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেং এবং যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট।
দীর্ঘ উত্তেজনার পর এ আলোচনা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সম্ভাব্য ইতিবাচক এক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আলোচনায় বড় অগ্রগতির আশা না থাকলেও উভয় পক্ষই এটিকে ইতিবাচক সূচনা হিসেবে দেখছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার দাবি করেন, চীন আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও বেইজিং জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রই এই আলোচনার অনুরোধ করেছে। চীন চাইছে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমাক এবং পণ্য চাহিদার বিষয় স্পষ্ট করুক।
অন্যদিকে ওয়াশিংটন চায় বেইজিং তাদের ‘অর্থনৈতিক মডেল’ পরিবর্তন করে আরও ভোক্তাকেন্দ্রিক অর্থনীতির পথে হাঁটুক। বিবিসি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
নাকের বদলে নরুন!
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বিভিন্ন খাল পুনর্খনন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করিতে গিয়া বৃক্ষনিধনের যজ্ঞ চলিতেছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। শনিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন বলিতেছে, উপজেলার চারটি খালের ৪০ কিলোমিটার পুনর্খনন করিতে গিয়া ইতোমধ্যে খালসমূহের দুই পার্শ্বের বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচ সহস্রাধিক বৃক্ষ কাটিয়া ফেলা হইয়াছে। শুধু উহা নহে, খাল পুনর্খনন সম্পূর্ণ শেষ করিতে হইলে সেখানে আরও পাঁচ সহস্র বৃক্ষ কাটিতে হইতে পারে বলিয়া আশঙ্কা স্থানীয়দের। পরিহাসের বিষয় হইল, বিএডিসি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে উক্ত খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে; অথচ উহার জন্য যে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত প্রয়োজন তাহা সম্ভব হয় কেবল প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকিলে, যেখানে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। এহেন আয়োজনকে নাকের বদলে নরুন পাইবার আয়োজন বলিলে কি ভুল হইবে?
বিস্ময়কর হইলেও সত্য, খাল খননের কর্মে নিয়োজিত যান্ত্রিক খনক চলাচলের সুবিধার্থে নাকি দুই পাশের বৃক্ষসমূহ কাটা হইতেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই বিপুল অগ্রগতির যুগে এই সর্বনাশা কথা কতখানি গ্রহণযোগ্য? বাস্তবে ইহা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খামখেয়াল অথবা কাষ্ঠ ব্যবসায়ীদের সহিত উহাদের অশুভ কোনো আঁতাতের ফল কিনা তাহা খতাইয়া দেখা প্রয়োজন। প্রতিবেদন মতে, বিএডিসির এহেন সিদ্ধান্তের কারণে সংশ্লিষ্ট বৃক্ষমালিকরা বৃক্ষসমূহকে বিক্রয় করিয়া দিতে বাধ্য হইতেছেন।
অধিকতর বিস্ময়কর হইল, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক বলিয়াছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নহেন। অথচ সরকারি-বেসরকারি যে কোনো প্রকল্পে বৃক্ষ কর্তন তো বটেই, অন্য পরিবেশগত জটিলতা এড়াইবার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ করিতে হয়। অন্তত পরিবেশ আইনে উহাই বলা আছে। বন বিভাগ বা পরিবেশ অধিদপ্তরের এহেন কর্তব্যে অবহেলা এই প্রথম দেখা গেল তাহা নহে। অতীতে ইহার ভূরি ভূরি নজির রহিয়াছে। আমরা জানি, আন্তর্জাতিক নিয়মে পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষায় একটা রাষ্ট্রে মোট ভূখণ্ডের অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আছে মাত্র ৯ শতাংশ বা তাহার কিছু কমবেশি। ইহাও জানিয়া রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশের এই বনভূমির একটা অংশ কথিত সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অধীনে রোপিত বৃক্ষ, যাহা কোনো প্রকারেই প্রাকৃতিক বনের বিকল্প নহে। এহেন বৃক্ষ কর্তনের পরিণাম কী হইতে পারে তাহা নূতন করিয়া বলার কিছু নাই। জলবায়ু পরিবর্তনের যে নেতিবাচক প্রভাব লইয়া সমগ্র বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হইয়াছে, উহাতে পাইকারি বৃক্ষ কর্তনের ভূমিকা কম নহে। বাংলাদেশে বিশেষত গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা যে ইদানীং অসহনীয় হইয়া উঠিয়াছে, বিশেষজ্ঞরা উহার দায় বহু বৎসর ধরিয়াই অন্যান্য বিষয়ের সহিত বন ধ্বংস ও নির্বিচার বৃক্ষ কর্তনের উপরও দিয়া আসিতেছেন। দুর্ভাগ্যবশত, দেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যদ্রূপ ইহাতে কর্ণপাত করিবার কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় না, তদ্রূপ মাঠ পর্যায়েও একই বিষয়ে সচেতনতা দৃশ্যমান নহে।
আলোচ্য খাল খনন কর্মসূচি যে গুরুত্বপূর্ণ, অন্তত স্থানীয় কৃষি উৎপাদনের জন্য সহায়ক, তাহা লইয়া কোনো বিতর্ক নাই। কিন্তু এহেন একদেশদর্শী উন্নয়ন যে চূড়ান্ত বিচারে সমূহ ক্ষতি ঘটায় সেই জ্ঞানও থাকা প্রয়োজন। উন্নয়ন হইতে হইবে টেকসই উন্নয়ন, যেখানে পরিবেশ-প্রতিবেশের সংরক্ষণ একটা জরুরি বিষয়। তাহা না হইলে জনগণের বিপুল অর্থ ব্যয়ে হয়তো মাইলের পর মাইল খাল খনন হইতে পারে, সেই খালে হয়তো কিছুকাল পানিও থাকিতে পারে, এক পর্যায়ে সেই পানি শুকাইয়া যাইবে। তখন উক্ত প্রকল্পের পশ্চাতে ব্যয়িত অর্থ অপচয় বলিয়াই গণ্য হইবে। আমরা মনে করি, অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে নজর দেবেন, সেচ প্রকল্পের নামে বৃক্ষ কর্তন শুধু বন্ধই নহে, এহেন অপকর্মের সহিত যুক্ত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায়ও আনিবেন।