যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে রয়েছে সব সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু জনবল সংকটে প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। এ সুযোগে ফায়দা লুটছে মানহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। এ অবস্থা কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়।
নাঙ্গলকোটে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের বাস। স্বাস্থ্যসেবার জন্য তাদের ভরসাস্থল ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে রয়েছে চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু জনবল সংকট আর অবহেলার কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। এই সুযোগে ব্যবসা করছে মানহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। নাঙ্গলকোটে ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ হাসপাতালের লাইসেন্স নেই।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সারমিন, সাফায়েত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, জান্নাত বেগম, মনোয়ারা, মুক্তাসহ একাধিক রোগী জানান, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত বা হাড়ভাঙা রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলেও গত ১৪ বছরে এক্স-রে কিংবা ইসিজি সেবা পাননি। সম্প্রতি এসব যন্ত্রপাতি সচল হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। যার কারণে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয় তাদের। এই সুযোগে রোগীর পকেট কাটছে ক্লিনিক ব্যবসায়ী ও দালাল চক্র।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি জুনিয়র কনসালট্যান্টের পদের মধ্যে চারটি ফাঁকা, মেডিকেল অফিসারের তিনটি পদের মধ্যে তিনটিই শূন্য, প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, হিসাবরক্ষক, ক্যাশিয়ারের একটি করে পদ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের দুটি পদ খালি। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (রেডিওথেরাপি) পদ শূন্য থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর বছরখানেক আগে সপ্তাহে দুই দিনের জন্য যন্ত্রটি চালু করা হয়। কারিগরি ত্রুটির কারণে দুই মাস ধরে মেশিনটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সপ্তাহে দুই দিন এসে রোগীর আলট্রাসনোগ্রাম করাতেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাগজে-কলমে রয়েছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া)। প্রায় দুই বছর ধরে কর্মস্থলে তিনি অনুপস্থিত থাকায় অস্ত্রোপচারের আগে রোগীদের অবশ করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যে কারণে বিভিন্ন অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিরাপত্তারক্ষীর দুটি পদ ফাঁকা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাঁচটি পদের মধ্যে দুটিই শূন্য। যে কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন স্থান অপরিচ্ছন্ন দেখা গেছে।
উপজেলার বাঙ্গড্ডা গ্রামের সালমা আক্তার জানান, তিনি অন্তঃসত্ত্বা অস্থায় চিকিৎসা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগে যান। ডাক্তার দেখে সিজার করার পরামর্শ দেন এবং বলেন সিজার করতে হলে দুই দিন পর করতে 
হবে। কেন দুই দিন পর করতে হবে, জানতে চাইলে বলেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবশ করানোর ডাক্তার নেই। লাকসাম হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসতে হবে সে জন্য সময় লাগবে। পরে বেসরকারি হাসপাতালে সিজার করান তিনি।
পেরিয়া ইউনিয়নের চাঁন্দপুর গ্রামের সারমিন আক্তার বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বড় বড় ডাক্তার থাকেন, সে জন্য আমরা সেবা নিতে যাই। আমার পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গেলে ডাক্তার বলেন, আলট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে। হাসপাতালের মেশিন নষ্ট, বাইরে থেকে করে নিয়ে আসেন। অনেক টাকা দিয়ে পরে প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে আলট্রাসনোগ্রাম করাই।’
নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকার নিয়োগ দিলে জনবল পাওয়া যাবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স ন ঙ গলক ট সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের শয্যাসংখ্যা ৫২। তবে গত সোমবার হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সাতটি শয্যা খালি দেখা গেছে। একই চিত্র সার্জারি ওয়ার্ডেরও। নগরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে রোগীর চাপ থাকে শয্যার দেড় গুণ, সেখানে জেনারেল হাসপাতালে এই সংখ্যা অর্ধেক। বছরে সাড়ে তিন লাখের মতো রোগী এখানে সেবা নিলেও তাঁদের মাত্র আড়াই শতাংশ ভর্তি হন এখানে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। প্রতি মাসে শয্যা অনুপাতে আবাসিক রোগী ভর্তি গড়ে ৪৭ শতাংশ; অর্থাৎ মোট শয্যার অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই হার আরও কম; ৩৭ শতাংশ।

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণ জানা গেছে। সেগুলো হলো হাসপাতালের অবস্থান, নিরাপত্তাঝুঁকি, রাতের বেলায় ওষুধ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাতায়াতব্যবস্থা না থাকা। হাসপাতালটিতে জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় নার্সদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে রোগীরা এখানে থাকতে চান না।

ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। মোহাম্মদ একরাম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চট্টগ্রাম নগরে সরকারি দুই হাসপাতালের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০ হলেও প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ১২০ থেকে ১৪০ জন রোগী থাকেন।

রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা চিকিৎসা নেন, তার অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। দূরের রোগীরা এখানে আসতে চান না। কারণ, পাহাড়ের ওপর হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাতে পাহাড়ের পথ ধরে মাদকসেবীরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে অবস্থান করে। ছিনতাই ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণেই রোগীরা অন্যত্র চলে যান।

চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ২৫টি শয্যা সংরক্ষিত আছে। এসব শয্যায় অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবন দুটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে গেছে। ফাটল ধরেছে কিছু স্থানে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন গুটিকয় নার্স। প্রসূতি বিভাগে নার্সের উপস্থিতি বেশি। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ব্লকের অন্তত ৫টি বেড খালি। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। রোগী বেশি মেডিসিন বিভাগে।

হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায়ই অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রংমহল পাহাড়ের ওপর। এর পেছনের দিকে কাটা পাহাড় লেন। আগে এ সড়ক দিয়েই হাসপাতালে ঢুকতে হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ এ পাহাড়ি পথ ধরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢোকে। নিরাপত্তা না থাকায় মাদকসেবীরাও পাহাড়ে ওঠে।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।

শুরুতে এটি কেবল একটি ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতাল ১৯৮৬ সালে ৮০ শয্যা এবং পরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে যায় ১০০ শয্যার। সেই পুরোনো জনবল কাঠামোতেই সর্বশেষ ২০১২ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার সেবা শুরু হয়। তবে এখনো জনবল সে–ই অর্ধেক।

হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা ২৫০টি হলেও এখানে চিকিৎসক ও নার্স আছেন প্রয়োজনের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্ট মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ জন চিকিৎসক আছেন। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৬৫ থেকে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, যে সংখ্যক রোগী এখানে আসেন, এর জন্য ১০০ জনের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। নেই পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফও।

এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায় সময় অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে সংকট সত্ত্বেও বহির্বিভাগের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রোগীরা। তবে বিভিন্ন সময় এসে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭২ জন রোগী। জরুরি সেবা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে সেবা চলছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

হাসপাতালে বিভিন্ন চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা বাড়লেও সেখানে পদ বাড়ানো হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ৩০ জন আনসার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না