কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না সরকারি হাসপাতালে, ফায়দা লুটছে ক্লিনিক
Published: 11th, May 2025 GMT
যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে রয়েছে সব সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু জনবল সংকটে প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। এ সুযোগে ফায়দা লুটছে মানহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। এ অবস্থা কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়।
নাঙ্গলকোটে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের বাস। স্বাস্থ্যসেবার জন্য তাদের ভরসাস্থল ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে রয়েছে চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু জনবল সংকট আর অবহেলার কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। এই সুযোগে ব্যবসা করছে মানহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। নাঙ্গলকোটে ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ হাসপাতালের লাইসেন্স নেই।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সারমিন, সাফায়েত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, জান্নাত বেগম, মনোয়ারা, মুক্তাসহ একাধিক রোগী জানান, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত বা হাড়ভাঙা রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলেও গত ১৪ বছরে এক্স-রে কিংবা ইসিজি সেবা পাননি। সম্প্রতি এসব যন্ত্রপাতি সচল হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। যার কারণে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয় তাদের। এই সুযোগে রোগীর পকেট কাটছে ক্লিনিক ব্যবসায়ী ও দালাল চক্র।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি জুনিয়র কনসালট্যান্টের পদের মধ্যে চারটি ফাঁকা, মেডিকেল অফিসারের তিনটি পদের মধ্যে তিনটিই শূন্য, প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, হিসাবরক্ষক, ক্যাশিয়ারের একটি করে পদ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের দুটি পদ খালি। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (রেডিওথেরাপি) পদ শূন্য থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর বছরখানেক আগে সপ্তাহে দুই দিনের জন্য যন্ত্রটি চালু করা হয়। কারিগরি ত্রুটির কারণে দুই মাস ধরে মেশিনটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সপ্তাহে দুই দিন এসে রোগীর আলট্রাসনোগ্রাম করাতেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাগজে-কলমে রয়েছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া)। প্রায় দুই বছর ধরে কর্মস্থলে তিনি অনুপস্থিত থাকায় অস্ত্রোপচারের আগে রোগীদের অবশ করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যে কারণে বিভিন্ন অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিরাপত্তারক্ষীর দুটি পদ ফাঁকা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাঁচটি পদের মধ্যে দুটিই শূন্য। যে কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন স্থান অপরিচ্ছন্ন দেখা গেছে।
উপজেলার বাঙ্গড্ডা গ্রামের সালমা আক্তার জানান, তিনি অন্তঃসত্ত্বা অস্থায় চিকিৎসা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগে যান। ডাক্তার দেখে সিজার করার পরামর্শ দেন এবং বলেন সিজার করতে হলে দুই দিন পর করতে
হবে। কেন দুই দিন পর করতে হবে, জানতে চাইলে বলেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবশ করানোর ডাক্তার নেই। লাকসাম হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসতে হবে সে জন্য সময় লাগবে। পরে বেসরকারি হাসপাতালে সিজার করান তিনি।
পেরিয়া ইউনিয়নের চাঁন্দপুর গ্রামের সারমিন আক্তার বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বড় বড় ডাক্তার থাকেন, সে জন্য আমরা সেবা নিতে যাই। আমার পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গেলে ডাক্তার বলেন, আলট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে। হাসপাতালের মেশিন নষ্ট, বাইরে থেকে করে নিয়ে আসেন। অনেক টাকা দিয়ে পরে প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে আলট্রাসনোগ্রাম করাই।’
নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকার নিয়োগ দিলে জনবল পাওয়া যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স ন ঙ গলক ট সরক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের পদ বৃদ্ধির দাবিতে যমুনামুখী বিক্ষোভ, পুলিশের বাধা
৪৪তম বিসিএসের পদসংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যাওয়ার চেষ্টা করেছেন বিসিএস প্রার্থীরা। তারা যমুনার সামনের রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে রমনা পার্কের ‘অরুণোদয়’ গেট দিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে আসে বিক্ষোভকারীদের একটি দল। তারা সোজা যমুনার সামনের সড়ক অবরোধ করতে চাইলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে বাধা দিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়।
প্রার্থীরা বলেন, সোমবার ৪৪তম বিসিএসের ফলাফল দেওয়ার কথা। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সাড়ে তিন লক্ষাধিক শূন্যপদ রয়েছে। এ পদগুলোতে জনবল নিয়োগের অভাবে জনগণ ঠিকমতো সেবা পাচ্ছে না। সেবা পেতে তাদের দপ্তরে দপ্তরে ঘুরতে হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনে জনবলের অভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার হিমশিম খাচ্ছে। অতীতের প্রায় সব বিসিএসের ফলাফলের আগে কিছু পদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এবার সবকিছু রেডি হওয়ার পরেও, অজানা কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
তারা বলেন, আমরা বারবার চেষ্টা করেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা যমুনার সামনে আসার চেষ্টা করেছি। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ৪৪তম বিসিএসে ১ হাজার ৩০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় উত্তীর্ণ ১০ সহস্রাধিক দক্ষ জনবল প্রস্তুত রয়েছে। এদের সবাইকে যথাস্থানে নিয়োগ দিলে জনগণেরও উপকার হয়, তাদের কর্মসংস্থানও হয়।
ঘটনাস্থলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, তারা রমনা পার্কের ‘অরুণোদয়’ গেট দিয়ে একজন একজন করে জড়ো হয়ে যমুনার সামনের সড়কে চলে আসে। এভাবে আন্দোলন করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এভাবে আন্দোলন করা অযৌক্তিক। তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।