জালিয়াতির মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার অভিযোগে বাগেরহাটে নির্বাচন কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার দুদকের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. সাইদুর রহমান বাদী হয়ে দুদকের বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন।

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় পারস্পরিক যোগসাজশে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে এনআইডি তৈরির অভিযোগ করা হয়। আসামিরা হলেন বাগেরহাট সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমানে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার (৪৭), চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন (৬৫) ও চিতলমারী উপজেলার আড়ুয়াবর্নি গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনাসদস্য মো.

মোশাররফ হোসেন মোল্লা (৫৭)।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস না করা সত্ত্বেও ফণীভূষণ ওরফে মনি মণ্ডল এবং প্রতুল চন্দ্র মণ্ডলের নামের দুই সহোদরকে চিতলমারী থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ ও তা ব্যবহার করে একজনকে এনআইডি তৈরি করে দেওয়া হয়। ওই দুজন ভারতীয় নাগরিক হলেও আড়ুয়াবর্নি গ্রামে থাকা তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রির জন্য স্থানীয় মোশাররফ হোসেন মোল্লা তাঁদের দেশে নিয়ে আসেন এবং ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করান।

দুদক সূত্র বলছে, আবেদনের নির্ধারিত ফরমে ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারিতে ফণীভূষণ মণ্ডল এবং ১৯৫৩ সালের ৪ এপ্রিল প্রতুল মণ্ডলের জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়। আবেদনের চার দিন পর তাঁদের দুই ভাইকে জন্মনিবন্ধন দেন চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন। এরপর ওই জন্মনিবন্ধন দিয়ে এনআইডির জন্য নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে তাঁরা আবেদন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে ফণীভূষণের নামে এনআইডি (নম্বর: ১৯৪৮০১২০৮০০০০০০০১) ইস্যু করা হয়।

অনুসন্ধানকালে ফণীভূষণ নামে তৈরি করা এনআইডি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাঁর জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৪৮ সাল। কিন্তু তাঁর এনআইডি তৈরি করা হয় ২০১৭ সালে, যা তাঁর জন্মের ৬৯ বছর পর। ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার কারণ হিসেবে ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৩২ নম্বর ঘরে উল্লেখ করা হয়, চিকিৎসার জন্য এলাকার বাইরে থাকা। ফণীভূষণের বাবার নাম মৃত শশধর মণ্ডল দেওয়া হলেও তৈরি করা এনআইডিতে বাবার নাম মৃত রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল। ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৭ নম্বর ঘরে বাবার মৃত্যু হয়েছে ১৯৪৪ সালে। সেই অনুযায়ী, বাবার মৃত্যুর চার বছর পরে ফণীভূষণের জন্ম। ফরমে শনাক্তকারী হিসেবে সুষেন মণ্ডল নামের একজনের এনআইডি নম্বর ব্যবহার করে তাঁর স্বাক্ষর জাল করে শনাক্তকারী হিসেবে দেখানো হয়। ফণীভূষণের বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয় বাগেরহাট পৌরসভার সোনাতলা গ্রাম। তবে তদন্তকালে দুদক ওই এলাকায় সেই ব্যক্তির কোনো অস্তিত্ব পায়নি। এমন আরও অনেক জাল–জালিয়াতি হয়েছে এবং ওই এনআইডি ব্যবহার করে ফণীভূষণকে দাতা দেখিয়ে সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে।

দুদকের বাগেরহাট কার্যালয়ের এডি মো. সাইদুর রহমান বলেন, ফণীভূষণকে তৎকালীন বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদারের সময়ে এনআইডি দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা অসৎ উদ্দেশ্যে মোশাররফ হোসেন মোল্লার সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে জাল–জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এনআইডি করেছেন, যা দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র জন ম র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুর গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা, নির্বাচনী আচরণবিধির সংশোধন চায় ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনে নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের কাছে এ স্মারকলিপি দেন ছাত্রদলের নেতারা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠী জকসু সংবিধি এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। ন্যায্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতে আমাদের অনুরোধ, ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় প্রত্যেক ভোটারের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচনে অমোচনীয় কালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং স্বচ্ছ, নাম্বারযুক্ত ব্যালট বক্স রাখা আবশ্যক।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যালট ছাপার সংখ্যা, ভোট প্রদানকারীর সংখ্যা এবং নষ্ট ব্যালটের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। মিডিয়া ট্রায়াল বা ভুল তথ্য প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার অনুমোদিত সব মিডিয়াকে নির্বাচনকালীন সময়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ডাকসুর তফসিল ঘোষণার ৪১ দিন, চাকসুর ৪৪ দিন, রাকসুর ৮০ দিন এবং জাকসুর তফসিল ঘোষণার ৩১ দিন পর নির্বাচন হয়েছে। যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এ ছাড়া বাকি চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিল ঘোষণার সময় ও নির্বাচনের মধ্যবর্তী পার্থক্য বিবেচনা করে জকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, এজন্য ছাত্রদল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আশা করছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ