গাজীপুর মহানগরীর তেলিপাড়া এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া, একাডেমিক কার্যক্রম চালুসহ একাধিক দাবিতে আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা তিনটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৫ মে অনুষ্ঠিত জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনিবার্য কারণবশত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইউনিভার্সিটির সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এই আদেশ ১৬ মে শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে।

এমন অবস্থায় আজ সকালে ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, তাঁদের কিছু দাবি ছিল, সেগুলো দুই সপ্তাহ আগে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কাছে জানানো হয়েছিল। কিন্তু দাবিগুলো না মেনে হঠাৎ করেই নোটিশ দিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউনিভার্সিটি বন্ধ। এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গেট তালাবদ্ধ করে রেখেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো কথা বলছে না।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—এক মাসের মধ্যে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যোগ্য উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের নিয়োগ সম্পন্ন করা; সব বিভাগে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগসহ শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর ১০ বছর হয়ে গেলেও এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না, দ্রুততম সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের পদক্ষেপ নেওয়া; ওয়েবসাইট ও শিক্ষার্থীদের জন্য ই-সেবা পোর্টাল চালু করা; সব বিভাগে পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি সুবিধা নিশ্চিত করা; প্রশাসনিক সেকশনে শিক্ষার্থীরা যেন কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন মনি বলেন, ‘আমাদের কোনো কিছু না জানিয়ে গতকাল রাত ৮টায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওনারা এখন আমাদের মুখোমুখি হচ্ছে না। আমরা অনেক টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো সদুত্তর দিচ্ছে না। তালা দিয়ে রেখেছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য মো.

ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। তারা দীর্ঘ তিন বছর ধরে দাবি জানি আসলেও উপাচার্য পাচ্ছে না। নিয়মিত উপাচার্য ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সনদ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি জানাচ্ছে যার সঙ্গে তিনিও একমত। এর আগে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি জানিয়ে একটি আবেদন করেছিল। সেই আবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে দিয়েছেন। এরই মধ্যে উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষার্থীরা তাদের নানা ফেসবুক গ্রুপে নানা ধরনের আলোচনা করছেন, সেগুলো আমাদের কাছে এসেছে। ধারণা করছি, তারা হয় তো জোর করে পদত্যাগপত্র নেওয়াতে পারেন। এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য বাধ্য হয়ে গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট উপ চ র য র জন য ব

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার শুধু সাংবিধানিক জায়গায় আটকে আছে: হোসেন জিল্লুর রহমান

ত্বত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সংস্কার টপ প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। সংস্কার আলোচনা শুধু সাংবিধানিক জায়গায় আটকে আছে। জনগণের প্রাত্যহিক জীবন নির্বিঘ্ন করার বিষয়গুলো বিশেষত পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট এক পাশে ফেলে দেওয়া আছে, জনপ্রশাসন রিপোর্টটাও একই।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে 'গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘ইউনিটি ফর বাংলাদেশ' সংগঠনের আয়োজনে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবির, লেখক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দর্শন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ নিজার আলম।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সংস্কার টপ প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। এটার পলিটিক্যাল ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। কক্সবাজার একজন কাউন্সিলরকে মেরে ফেলছে, অন ক্যামেরায় পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির রিপোর্ট হবে ইন্টেলিজেন্ট কিন্তু অনেক রিপোর্ট শুধুমাত্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ইন্টেলিজেন্ট নয়। কাজে এটা সংস্কার হতে হবে। আমার মনে হয়, সংস্কার আর্মির নেতৃত্বেও এটি হতে পারে। এটা অবশ্যই হতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। এটা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি। সক্ষম রাষ্ট্রের জন্য চারটি বিষয় জরুরি। সার্বভৌমত্ব বলতে আমরা বুঝি জিওগ্রাফিক, এটার অন্যতম হলো নীতি সার্বভৌমত্ব। স্বৈরাচারের সময় দেখেছি নীতি নেওয়া হচ্ছে, তবে সার্বভৌমভাবে নেওয়া হচ্ছে না। পলিটিক্যাল সার্বভৌমত্ব আছে তবে ভেতরে অন্তঃসারশূন্য।

তিনি আরও বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে। সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক তার একটি অংশ। রিফর্ম নিয়ে একধরনের সাংবিধানিক বিষয়গুলোর আলোচনাই প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু জনগণের প্রাত্যহিক জীবনের বিশেষ করে পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট পাশে ফেলে দেওয়া আছে। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনায় রিপোর্টটাই নাই। প্রশাসন সংস্কারের রিপোর্টটাই একইভাবে পড়ে আছে।

সাংবিধানিক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতার ভারসাম্য জরুরি মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নতি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের প্রয়োজন যদি মেটানো না যায়, আইনশৃংখলা/নিরাপত্তার বিষয়গুলো যদি মেটানো না যায়, তাহলে আজাদী মিথ্যা হয়ে উঠতে পারে এমন মনে হবে। এদিকে নজর দেওয়া দরকার।

নূরুল কবির বলেন, ‘সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করা ঠিক না' এটা হচ্ছে সবচেয়ে বেঠিক কথা। সেনাবাহিনী যদি রাজনীতি না বুঝে তাহলে তারা দেশের ক্রান্তিলগ্নে সিভিলিয়ানদের সাথে একযোগে কাজ করতে পারবে না। আপনারা রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণকে এক করে মিলাবেন না।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য একটি ভালো সেনাবাহিনী দরকার কিন্তু সেনাশাসন দরকার নেই। সিভিল এবং মিলিটারি সম্পর্ক একটি বাইনারি অপজিশন। সেনাপ্রধান যখন এরশাদকে বলে মিলিটারি আর আপনার সঙ্গে নেই, তখনই এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। আবার গত ৩ আগস্ট যখন বর্তমান সেনাপ্রধান জুনিয়র অফিসারদের দাবির মুখে হাসিনাকে সেনাবাহিনীর অপারগতার কথা জানিয়ে দেন, তখনই হাসিনার পতন তরান্বিত হয়। ২০১৪ সাল নির্বাচন পরবর্তী সময়েই যদি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী অসন্তোষ প্রকাশ করতো, তাহলে জুলাইয়ে দেড় হাজার মানুষের প্রাণ দেওয়া লাগতো না।

সৈয়দ নিজার আলম বলেন, মিলিটারি সম্পর্কে একটি বাইনারি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ এ সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক হওয়ার কথা না। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক থেকে শুরু করে মিলিটারি সবাই আমরা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রজন। তাই সবাইকে এক কাতারে থেকে দেশের সেবা প্রদান করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ