কেকেআরের বিদায়: চ্যাম্পিয়নদের পতনের পেছনের কারণগুলো
Published: 18th, May 2025 GMT
আইপিএলের এবারের আসরের গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)। গতকাল শনিবার (১৭ মে) রাতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) বিপক্ষের ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। তাতে কেকেআরের প্লে-অফে ওঠার শেষ আশাটিও নিভে যায়। তবে শুধুমাত্র এই ম্যাচের ফলাফল নয়, পুরো মৌসুমজুড়েই কেকেআরের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। চলুন চ্যাম্পিয়নদের পতনের পেছনের কারণগুলো জানার চেষ্টা করা যাক।
অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাটিং লাইনআপ:
কেকেআরের ব্যাটিং লাইনআপ মৌসুমজুড়ে ছিল অস্থির। উইকেটে গিয়ে স্থায়ী জুটি গড়তে ব্যর্থ হন ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে মিডল অর্ডারে আন্দ্রে রাসেল, রিঙ্কু সিং ও রামানদীপ সিং প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স করতে পারেননি। রাসেল ৮ ম্যাচে মাত্র ৫৫ রান করেন, যা তার মানের খেলোয়াড়ের নামের পাশে সত্যিই বেমানান।
বোলিংয়ে ধারাবাহিকতার অভাব:
বোলিং বিভাগেও কেকেআর ছিল অনিয়মিত। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বোলাররা উইকেট নিতে ব্যর্থ হন। ফলে প্রতিপক্ষ দলগুলো বড় স্কোর গড়তে সক্ষম হয়। বিশেষ করে ডেথ ওভারে বোলিংয়ে কেকেআরের দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
আরো পড়ুন:
কোহলির দশম শ্রেণির মার্কশিট ভাইরাল
জাবি ও ঢাবির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ
দল নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত:
মৌসুম শুরুর আগে দল গঠনে কেকেআরের কিছু সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। শ্রেয়াস আইয়ারকে ছেড়ে দেওয়া এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দলকে ভুগিয়েছে। শ্রেয়াস আইয়ার পাঞ্জাব কিংসের হয়ে ৪০৫ রান করলেও কেকেআরের মিডল অর্ডার ছিল দুর্বল।
অভিজ্ঞদের ব্যর্থতা:
দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সও ছিল হতাশাজনক। আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারেননি। যা দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে।
বৃষ্টির কারণে শেষ সুযোগ হারানো:
আরসিবির বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় কেকেআর ১ পয়েন্ট পায়, যা প্লে-অফে ওঠার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এই ম্যাচে জয় পেলে কেকেআরের প্লে-অফে ওঠার সম্ভাবনা টিকে থাকত। কিন্তু প্রকৃতির বাধায় সেই সুযোগ হাতছাড়া হলো।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রফরম য ন স ক ক আর র আইয় র
এছাড়াও পড়ুন:
পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে
পিঠে থুরুং (ঝুড়ি) বাঁধা এক জুমিয়া নারী। মাথায় পাগড়ির বা শিরস্ত্রাণের মতো একটা ট্যাংক। ছবির পরিসরজুড়ে বিশালাকৃতির সেই নারীর চারপাশে বন্দুকধারী অসংখ্য ছায়ামূর্তি। তাদের আকৃতি নারীর তুলনায় বহুগুণ খর্বকায়। ট্যাংকের নল দিয়ে সেসব ছায়ামূর্তির ওপর পড়ছে পাতা আর ফুল।
শিল্পী জয়দেব রোয়াজা কালি ও কলমে এই ছবি এঁকেছিলেন ২০২৩ সালে। তাঁর অন্য সব ছবির মতোই এটিও পাহাড়ের সমকালীন অবস্থাই কেবল তুলে ধরে না; বরং তাকে ভীষণভাবে ছাপিয়ে যায়। বাস্তবতা পেরিয়ে জাদুবাস্তবতার সীমায় এসে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন, সংগ্রাম আর প্রকৃতি সব ভেঙেচুরে কবিতার একটি পঙ্ক্তির ভেতরে যেন প্রবেশ করে।
১৯৭৩ সালে খাগড়াছড়ির খামারপাড়ার একটি ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম জয়দেব রোয়াজার। মা নীহারিকা ত্রিপুরা আর বাবা হিরণ্ময় রোয়াজা। হিরণ্ময় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। শান্ত নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা আর জুমখেত দেখতে দেখতে বড় হওয়া। স্কুলে কবিতার বইয়ের ইলাস্ট্রেশন নকল করে খাতায় আঁকতেন। কবিতার চেয়ে ভালো লাগত ইলাস্ট্রেশন। শেষে এই ভালো লাগারই জয় হলো। বাংলাদেশের এই সময়কার এক উজ্জ্বল শিল্পী জয়দেব। তাঁর শিল্পকর্মের পরিচিতি ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে।
একনজরে জয়দেবচারুকলার নতুন মাধ্যম পারফরম্যান্স আর্ট। জয়দেব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই এই মাধ্যমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই ধারার শিল্পীরা নিজের শরীরকেই করে তোলেন ক্যানভাস। সঙ্গে থাকে নানা প্রকাশভঙ্গি। পারফরম্যান্স করতে গিয়ে ছবি আঁকা ছাড়েননি তিনি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের যেমন স্টোরিবোর্ড, তেমনি জয়দেবের পারফরম্যান্সের প্রতিটি ভঙ্গির ছবি আঁকা থাকে তাঁর স্কেচ খাতায়। এভাবেই দুই মাধ্যমকে যুক্ত করেছেন নিজের ধরনে। পাশাপাশি বড় ক্যানভাসেও ছবি আঁকেন। কালি ও কলমেই সিদ্ধহস্ত তিনি।
ভারতের কোচি বিয়েনাল, হংকং আর্ট বেজেল, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রায়েনিয়ালে অংশ নিয়েছেন তিনি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১১টির বেশি দেশে তিনি পারফরম্যান্স করেছেন। হয়েছে চিত্র প্রদর্শনীও। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, চীনের হংকংয়ের এম প্লাস, ফ্রান্সের প্যারিসের ক্যাডিস্ট ফাউন্ডেশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির গুগেনহাইম, ভারতের নয়াদিল্লির কিরণ নাদার মিউজিয়ামসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বহু জাদুঘরে তাঁর শিল্পকর্ম রক্ষিত আছে। বাংলাদেশে তাঁর শিল্পসংগ্রহ রয়েছে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন এবং দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে। শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আর্ট রিভিউ এশিয়া, আর্ট নিউজ, ফোর্বস এবং ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকায় তাঁর শিল্পকর্মের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। আবুধাবির গুগেনহাইম মিউজিয়াম জয়দেবের একটি শিল্পকর্ম বেশ ভালো দামে কিনে নিয়েছে। বর্তমানে তিনি মুম্বাইভিত্তিক ঝাভেরি কনটেমপোরারি গ্যালারির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।
পাহাড় আর ঝিরির পথে পথেখাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির ঝিরি পথে বা কাপ্তাই হ্রদের নির্জনতায় সময় কাটে জয়দেব রোয়াজার। আন্তর্জাতিক খ্যাতি এলেও জীবন কাটান পাহাড়ি জুমিয়াদের মতো। কখনো মাছ ধরতে চলে যান জেলেদের সঙ্গে। আবার কখনো ঝিরি পথে হেঁটে হেঁটে দিন কাটে তাঁর। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কামিলাছড়ি গ্রামে নির্জন হ্রদের ধারে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। সেখানে সপ্তাহের দুই দিন কাটে তাঁর। পাহাড় ও পাহাড়ের মানুষজনকে নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বুনে তোলেন ক্যানভাসে।
জয়দেব দেশের শিল্পীসমাজ ও শিল্পবোদ্ধাদের জগৎ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর কথায়, ঢাকা তাঁকে কখনো টানে না। দু-এক দিন ঢাকা বা দেশের বাইরে থাকলে হাঁপিয়ে ওঠেন। ভাবেন, কখন ফিরবেন পাহাড়ে।
সম্প্রতি কামিলাছড়িতে তাঁর স্টুডিওতে গিয়ে দেখা গেল আট ফুট দীর্ঘ একটি ক্যানভাসে কাজ করছেন তিনি। তিনতলা স্টুডিওর বারান্দায় এসে দাঁড়ালে অবারিত নীল হ্রদের হাতছানি। হ্রদের পাড়ে ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি। সেদিকে তাকালে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে হয়। বারান্দায় বসে কথায় কথায় জানালেন নির্জন এই পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ছবি বিক্রির টাকায় এই স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী হাসনাহেনা পরশের সঙ্গে মিলে জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন। একটাই চাওয়া, একটু আড়াল, একটু নির্জনতা। ছবি আঁকার জন্য এটুকু পরিসর চেয়েছেন জীবন থেকে।
জয়দেব রোয়াজা