রাজশাহীতে বিজিবির অভিযানে ২৪টি ‘ভারতীয়’ গরু জব্দ, দেশি দাবি করে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
Published: 21st, May 2025 GMT
রাজশাহীর পবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৪টি ‘ভারতীয়’ গরু জব্দের কথা জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে গরুগুলো ‘দেশি’ দাবি করে অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
আজ বুধবার দুপুরে নগরের শালবাগান এলাকায় বিজিবির রাজশাহী-১ সদর দপ্তরের সামনে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে তাঁরা বিক্ষোভ করেন। পরে বিজিবির সদস্যরা তাঁদের সরিয়ে দিলে ব্যবসায়ীরা সড়কের অপর পাশে অবস্থান নেন।
এ নিয়ে বিজিবি সদর দপ্তরে রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিজিবির সভা হয়েছে। সভা শেষে পৌনে চারটার দিকে ইজারাদাররা জানান, তাঁদের নিয়ে সন্ধ্যার আগে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে আরেকটি সভা হবে।
গরু ব্যবসায়ী ও হাট ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকালে পবা উপজেলার বাগধানী, বাগসারা ও দুয়ারী এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার গাড়ি গরু জব্দ করে বিজিবি। অভিযানে মোট ২৪টি গরু জব্দ করে বিজিবির সদর দপ্তরে আনা হয়। খবর পেয়ে ব্যবসায়ীরা দুপুরের দিকে সদর দপ্তরের সামনে জড়ো হন। তাঁদের সঙ্গে হাটের বিভিন্ন পর্যায়ের ইজারাদার এবং অন্যান্য গরু ব্যবসায়ীও জড়ো হন। তাঁরা সেখানে নানা স্লোগান দেন। পরে বিজিবির সদস্যরা তাঁদের সড়ক ছেড়ে দিতে বললে তাঁরা সড়ক ছেড়ে দেন।
গরু ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, আজ সকালে পবার দুয়ারী মোড় দিয়ে তানোর থেকে সিটি হাটের উদ্দেশে গরু আনছিলেন। তাঁদের গাড়িতে মোট আটটি গরু ছিল। গরুগুলো তাঁরা তানোরের বিভিন্ন গ্রামের চাষিদের থেকে কিনেছেন। সেগুলো নিয়ে চলে এসেছে বিজিবি। এগুলো দেশি গরু, ভারতীয় নয়।
সাফিউল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, গ্রামাঞ্চলের হালচাষের গরু তাঁরা কিনেছেন। সেগুলোসহ তাঁর ছয়টি গরু পবার বায়া থেকে তুলে আনা হয়েছে। সমস্ত পুঁজি খাঁটিয়ে ব্যবসা করছেন। গরুগুলো নিয়ে নিলে তিনি পথের ফকির হয়ে যাবেন বলে জানান।
শামসুল আলম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন ভারতের সীমান্তে প্রচুর নিরাপত্তা। তাহলে ভারতের গরু আসবে কী করে? আমরা গরু কিনে কয়েক মাস পুষেছি, তারপর হাটে তুলছি।’
সিটি হাটের ইজারাদার রুহুল আমিন বলেন, আজকে বিজিবি যে গরুগুলো নিয়ে গেছে, সেগুলো দেশি গরু। তাঁদের হাটে কোনো ভারতীয় গরু আসে না। তাঁরাও হাটে নজরদারি করে থাকেন। আর সীমান্তে এখন কড়াকড়ি। এ সময় ভারতীয় গরু আসবে কীভাবে? তিনি বলেন, এভাবে বিজিবি গরু নিয়ে গেলে হাটে প্রভাব পড়বে। কেউ আর হাটে গরু তুলতে সাহস করবেন না।
সভা শেষে রাজশাহী সিটি হাটের (গরুর হাট) সাব ইজারাদার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, দুই দিনে তাঁদের মোট ৩৭টি গরু বিজিবি তুলে এনেছে। গরুগুলো দেশি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁদের সভা হয়েছে। কিন্তু গরুগুলো কাস্টমসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিকেলে তাঁদের সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনারের সভা আছে। তাঁরা অন্যায় মেনে নেবেন না।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিজিবি-১-এর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র ইজ র দ র
এছাড়াও পড়ুন:
মুর্শিদাবাদ দাঙ্গা: তৃণমূলের এক নেতা ও পুলিশকে দায়ী কলকাতা হাইকোর্টের গঠন করে দেওয়া কমিটির
কলকাতা হাইকোর্টের গঠন করে দেওয়া তিন সদস্যের কমিটি মুর্শিদাবাদের দাঙ্গার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের এক স্থানীয় নেতা ও পুলিশকে দায়ী করেছে। কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন থেকে এমনটি জানা গেছে।
প্রতিবেদনের এক নম্বর অনুচ্ছেদে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মেহবুব আলমের কথা উল্লেখ করে হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আক্রমণগুলি স্থানীয় কাউন্সিলর মেহবুব আলম পরিচালনা করেছিলেন। স্থানীয় পুলিশ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় এবং অনুপস্থিত ছিল।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুর্বৃত্তরা একটি পানির বোতলের দোকান ধ্বংস করেছে এবং ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকাসহ ক্যাশ বাক্স লুট করেছে। ধুলিয়ান পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত একটি শপিং মলও সম্পূর্ণভাবে লুটপাট করা হয়েছে এবং তা বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় ঘোষপাড়ায় ২৯টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, উত্তম মুর্শিদাবাদের ‘সমসেরগঞ্জ, হিজলতলা, শিউলিতলা, (এবং) ডিগ্রির বাসিন্দারা তাদের মুখ ঢেকে এসেছিলেন। স্থানীয় কাউন্সিলর মেহবুব আলম দুর্বৃত্তদের সঙ্গে ১১ এপ্রিল ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) স্থানীয় বিধায়কও [ঘটনাস্থলে] উপস্থিত ছিলেন। তিনি ভাঙচুর দেখে চলে যান। তবে ১২ এপ্রিলও (শনিবার) সহিংসতা অব্যাহত ছিল।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াক্ফ সংশোধনী বিলকে কেন্দ্র করে ৯ থেকে ১২ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়। গত ১১ এপ্রিল তিনজন নিহত ও অনেকে আহত হন। বেশ কিছু দোকান ও বাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং আগুন লাগানো হয়।
সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন তদারকি করার জন্য কলকাতা হাইকোর্ট গত মাসে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন। কমিটিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রেজিস্ট্রার যোগিন্দর সিং, পশ্চিমবঙ্গ আইনি পরিষেবার সদস্যসচিব সত্য অর্ণব ঘোষাল এবং পশ্চিমবঙ্গ বিচার বিভাগীয় পরিষেবার রেজিস্ট্রার সৌগত চক্রবর্তীকে রাখা হয়েছে।
গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে এক নির্দেশে বলেছিলেন, মুর্শিদাবাদের সংঘর্ষে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের প্রত্যেককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ওই অঞ্চলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) একটি চৌকি স্থায়ী ভাবে রাখার জন্য স্থানীয় মানুষ আবেদন করেছেন। রাজ্য সরকার এই আবেদনটি বিবেচনা করে দেখতে পারেন।