চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, দুজনের স্থায়ী বহিস্কার বহাল
Published: 21st, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের বহিষ্কারের ঘটনায় নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বহিষ্কৃত ১১ ছাত্রীর মধ্যে ৬ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৩ জনের বহিষ্কারের মেয়াদ কমিয়ে ২ বছর থেকে ৬ মাস করা হয়েছে। তবে দুজন ছাত্রীর স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। এদের একজনের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননা ও আরেকজনের বিরুদ্ধে প্রক্টরকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ বুধবার বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো.
এর আগে সহকারী প্রক্টরকে শারীরিক লাঞ্ছনা ও ধর্ম অবমাননার ঘটনায় চলতি বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি ১২ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছিল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১১ জনই ছাত্রী। তাঁদের একজনকে ধর্ম অবমাননা ও বাকি ১০ জনকে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনায় বহিষ্কার করা হয়েছিল।
জানতে চাইলে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ম অবমাননার দায়ে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের শাস্তি অপরিবর্তিত থাকছে। আর শিক্ষককে শারীরিক লাঞ্ছনা করা এক ছাত্রীর স্থায়ী বহিষ্কারের আদেশও বহাল থাকছে। আর বাকি ৬ জনের বহিষ্কারদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ আদেশ ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, বহিষ্কারের আদেশ থাকা অবস্থায় দেওয়া পরীক্ষা বাতিল হবে। এসবের বিস্তারিত বহিষ্কারের চিঠিতে জানানো হবে। আবার এ সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটেও যাবে। সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রীদের বিজয় ২৪ হলের সামনে রাখা নৌকা আকৃতির বসার স্থান ভাঙচুর করতে যাওয়া কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিতণ্ডাও হয়েছিল আবাসিক ছাত্রীদের।
ছাত্রীদের অভিযোগ, মধ্যরাতে একদল শিক্ষার্থী হলে এসে ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছে। এসব ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডিকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এ কারণেই তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সহকারী প্রক্টর কোরবান আলীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে দেখা গেছে এক ছাত্রীকে। এ ছাড়া কয়েকটি ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্যকে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা যায়।
এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায় ছাত্রীদের বহিষ্কার করতে প্রশাসনকে চাপ দিতে ‘অনুগত’ ছাত্রদের বলেছিলেন দুজন সহকারী প্রক্টর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এসব নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া এসব স্ক্রিনশটে ছিল সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নুরুল হামিদের সঙ্গে তাঁদের ‘অনুগত’ ছাত্রদের কথোপকথন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত একটি সংস্কারও করতে পারেনি: মান্না
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাড়ে ৯ মাসে একটি সংস্কারও করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
আজ বুধবার দুপুরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের ‘ফ্যাসিবাদ, গণ–অভ্যুত্থান, বিপ্লব ও সংবিধান বিতর্ক’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বেলা সোয়া ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এই সভা শুরু হয়। সভার আয়োজক ‘কালের দাবি প্রকাশনা’।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ হলো নির্বাচনের, সংস্কারের ব্যবস্থা করা। কিন্তু একটা সংস্কারও এই সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি।
মান্না বলেন, ‘ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার করে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪৬টিতে সবগুলো দল একমত হয়েছে। বেশির ভাগই তো ঐক্য হয়েছে। তারপরও নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন না কেন?’
স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাইবার সিস্টেমের কর্তৃত্ব বিদেশিদের কাছে চলে যাচ্ছে কি না অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বর্তমানে দেশে বিদেশি পাসপোর্টধারী কতজন আছেন, সেই হিসাব পাওয়া মুশকিল বলে উল্লেখ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ওই রকম একজন মানুষ, যিনি বাংলাদেশে এর আগে কখনো সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ছিলেন না, তাঁকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন আবার শুনছি সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার আর্মির ওপর কন্ট্রোল নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করছেন। জানি না। তবে এগুলো মানুষের মধ্যে গুজব বা সংশয় তৈরি করছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার তার এজেন্ডার বাইরে গিয়ে অনেক কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে উচ্চ আদালতের রায়ে একজন মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। একই উচ্চ আদালতের রায়ে বিএনপির ইশরাক মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। কিন্তু সেটি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা শহরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রিট করা হয়েছে। তার মানে আইন কি একেক শহর বা ব্যক্তির জন্য একেক রকম?
মিয়ানমারে করিডর বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সঙ্গে সরকারের খোলাখুলি কথা বলা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, এটি নিরাপত্তাব্যবস্থাকে কতটা সাহায্য বা বিপদজনক করে তুলবে, সেটির বাস্তব বিশ্লেষণ হওয়া উচিত। দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়, এমন কিছু দেশের মানুষ মেনে নেবে না বলেও মনে করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার বিষয়ে মাহবুব উল্লাহ বলেন, আধুনিক বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাইরের এজেন্সিকে দিয়ে কিছু কাজ করানো অযৌক্তিক কিছু নয়। সে জন্য পুরোনো মাইন্ডসেট থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে আরেক সদস্য আকবর খান।
সভায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক, লেখক অনিন্দ্য আরিফ, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, কবি মোহন রায়হান ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুন নুর।