গোখাদ্যের লাগামহীন দাম বাড়াতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে গরু পালনকারী খামারিরা বিপদে পড়েছেন। আসছে ঈদুল আজহার জন্য প্রস্তুত গরু বিক্রি করে লোকসানের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
গরুর জন্য প্রস্তুত খাবারে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে খাবারের উচ্চমূল্যের কথা জানিয়েছেন খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
কিছুদিন পরে কোরবানির ঈদ। এরই মধ্যে দফায় দফায় বেড়েছে গোখাদ্যের দাম। এতে বেকায়দায় পড়েছেন খামারিরা। উপজেলার অনেক খামারেই দানাদার খাবারের পরিবর্তে ঘাস জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে গবাদি পশুকে। অপরদিকে হঠাৎ গোখাদ্যের দাম বাড়ার ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারিরাও। দীর্ঘদিন ধরে দুধের দাম না বাড়লেও বেড়েছে খাদ্যের দাম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুত গোখাদ্যের দাম কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর দাম এক মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৭-৮ টাকা বেড়েছে। গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত ঘাস বড় গোলাই (আঁটি) ৯৫ থেকে ১০০ টাকা এবং ছোট গোলাই ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই মাস আগে একই পরিমাণ ঘাস ৬৫ থেকে ৭০ এবং ছোট গোলাই ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হতো।
গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়বাবুর পাড়া মহল্লার খামারি আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে দুধের দাম ৫০-৬০ টাকা লিটার চলছে। দুধের দাম বাড়েনি। অথচ গোখাদ্যের দাম প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। দুই সপ্তাহ আগেও এক বস্তা (৩৭ কেজি) ভুসির দাম ছিল এক হাজার ৫০০ টাকা, তা এখন এক হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি আট টাকার বেশি বেড়েছে। তিনি আরও জানান, তাঁর মোট ৯টি গাভি রয়েছে। এর মধ্যে চারটি গাভি দুধ দেয়। এ পরিস্থিতিতে তিনি প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়ছেন। এভাবে চলতে থাকলে খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
একই এলাকার খামারি তাজেল মোল্লা জানান, তৈরি গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় তিনি তা গরুকে খাওয়াতে পারেন না। ভুসিরও অনেক দাম। এছাড়া খড় তো পাওয়াই যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, তাঁর কোনো আবাদি জমি নেই। ছয়টি গাভির ছোট একটি খামার তাঁর। খামার থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে সংসার। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। গরুগুলোকে আগের মতো খাবার দিতে পারছেন না। গরুকে ঠিকমতো খাবার দিতে গেলে সংসারে টানাপোড়েন শুরু হয়ে যায়। গোখাদ্যের দাম বাড়ায় তাদের মতো অনেক খামারি খামারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ চরপাঁচুরিয়া গ্রামের কৃষক হাবিব শেখ জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে গরু পালন করেন। তাঁর খামারে ১৪টি ষাঁড় গরু রয়েছে। সবক’টিই এবারের কোরবানির ঈদে বিক্রির আশা করছেন। গোখাদ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় গরু পালনে খরচ বেড়ে গেছে, সেই তুলনায় দাম পাবেন কিনা জানেন না। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে আগামীতে হয়তো গরুর খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
উপজেলার তেনাপচা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত অ্যামপ্রোল অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী এসএম জসিম উদ্দিন বলেন, তিনি তাঁর খামারের গরুর জন্য নানান ধরনের পুষ্টির সংমিশ্রণে নিজেই গোখাদ্য তৈরি করে থাকেন। এরজন্য তাঁকে বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল কিনতে হয়। গোখাদ্যের দাম বাড়ার জন্য কোনো সিন্ডিকেট নেই। কাঁচামালের দাম বেড়ে গেলে এমনিতেই গোখাদ্যের দাম বেড়ে যায়।
গোয়ালন্দ ফিড মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মো.
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন জানান, গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে খামারিদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গোখাদ্যের পরিবর্তে কাঁচা ঘাস ও অন্যান্য খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আমদানি বৃদ্ধি ইতিবাচক, ধারাবাহিকতা থাকতে হবে
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার হারে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটিকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তবে তিন মাসের চিত্র দিয়ে সামগ্রিক অবস্থা এখনো মূল্যায়ন করার সময় হয়নি।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে হঠাৎ প্রায় ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। এটা সুখবর হলেও কোনো বড় প্রকল্পের মালামাল আমদানিতে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি সত্যিকারের নতুন নতুন কারখানার যন্ত্রপাতি আমদানির মাধ্যমে এ প্রবৃদ্ধি ঘটে, তাহলে তা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ধারাবাহিকতা থাকলেই বলা যাবে, দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে। বিনিয়োগ হলে সামনে কর্মসংস্থানও বাড়বে। আর তাতে অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার হবে।
মূলধনি যন্ত্রপাতির মতো ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার হারও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাসের যে তুলনা করে দেখিয়েছে, তাতে ঋণপত্র খোলার হার ২০ শতাংশ বেড়েছে।
সব মিলিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা আগামী কয়েক মাস অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে।
মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার, পরিচালক, টি কে গ্রুপ