অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করছে পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদ
Published: 25th, May 2025 GMT
১০ দফা দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদ।
দাবি পূরণ না হওয়ায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ রোববার সকাল ছয়টা থেকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। চলবে বেলা দুইটা পর্যন্ত।
১১ মে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদ বলেছিল, ২৪ মের মধ্যে দাবি আদায় না হলে তারা ২৫ মে প্রতীকী কর্মসূচি পালন করবে। এদিন (আজ) তারা সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সারা দেশের সব পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি চালানোর ক্ষেত্রে কর্মবিরতি পালন করবে।
বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ে এই পরিষদ গঠিত। পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো.
পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী, কর্মবিরতিতে জ্বালানি তেলের উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণন বন্ধ থাকবে। তবে হজ ফ্লাইট ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সচল রাখার জন্য উড়োজাহাজের তেল পরিবহন চালু থাকবে। শুধু অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও যেসব পেট্রলপাম্পের সঙ্গে পুলিশের গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহের চুক্তি আছে, কেবল তারই পুলিশের গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহ করতে পারবে।
পরিষদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে তেল বিক্রির কমিশন ন্যূনতম ৭ শতাংশ করা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ইজারা ভূমির ইজারা মাশুল আগের মতো বহাল রাখা। পাম্প-সংযোগ সড়কের ইজারা নবায়নে আবেদনপত্রের সঙ্গে নির্ধারিত পে-অর্ডার জমা দিলেই তা নবায়ন বিবেচিত করা। বিএসটিআই শুধু ডিসপেন্সিং ইউনিট স্ট্যাম্পিং ও পরিমাপ যাচাই করবে। আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ক্যালিব্রেশন, ডিপ রড পরীক্ষণ ফি ও নিবন্ধনপ্রথা বাতিল করা। পরিবেশ, কলকারখানা ও ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্সের বিধান বাতিল করা। ঘরের মধ্যে বা খোলা স্থানে অবৈধভাবে মেশিন বসিয়ে জ্বালানি বিক্রি বন্ধ করা এবং ডিলারশিপ ছাড়া বিপণন কোম্পানির সরাসরি তেল বিক্রি বন্ধ করা। ট্যাংকলরির চালকদের লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স ইস্যু সহজ করা। রাস্তায় যেখানে-সেখানে ট্যাংকলরি থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা না করে তা তেলের ডিপো গেটেই সম্পন্ন করা। সব ট্যাংকলরি জন্য আন্তজেলা রুট পারমিট ইস্যু করা।
পরিষদ বলছে, লাইসেন্স, বিদ্যুৎ, স্টাফের বেতনসহ সব খরচ বেড়েছে; কিন্তু কমিশন কমে গেছে। নতুন করে পরিবেশ, ফায়ার, বিএসটিআই, কলকারখানা ও বিআরসি লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এগুলোর ফি অনেক বেশি। ডিপো নেই—এমন জেলায় তেল নিতে গিয়ে আন্তজেলা পারমিট না থাকলে ট্যাংকলরির চালকেরা হয়রানির শিকার হন। রাস্তার ওপর কাগজপত্র পরীক্ষা বন্ধ ও ডিপোয় তা নিশ্চিত করার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিএসটিআই এখন নানা যন্ত্রাংশের জন্য অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ইজারার হার হঠাৎ ১৫০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই অযৌক্তিক খরচ আর বর্তমান কমিশনের হারে ব্যবসা চালানো অসম্ভব। তাই তাঁরা যৌক্তিক দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন চান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ট রলপ ম প ও র ইজ র
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’