Prothomalo:
2025-11-03@05:13:19 GMT

ডাকটিকিটে নজরুল

Published: 25th, May 2025 GMT

কাজী নজরুল ইসলাম জীবদ্দশায় নিজেকে দেখে গেছেন ডাকটিকিটে। এমন রাজকীয় সমাদর জগতের খুব কম মনীষীর জুটেছে। ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী এ কবি কত না চিঠি পাঠিয়েছেন খামের ওপর ব্রিটিশরাজের প্রতিকৃতি-সংবলিত ডাকটিকিট এঁটে! কিন্তু নিজের প্রতিকৃতি-সংবলিত ডাকটিকিট নজরুল তাঁর কোনো চিঠির খামের ওপর সেঁটেছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

পাকিস্তান ডাক বিভাগ ১৯৬৮ সালের ২৫ জুন নজরুলকে নিয়ে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ করে। অবিকল নকশায় ১৫ ও ৫০ পয়সা মূল্যের ডাকটিকিট দুটি প্রকাশ করার কথা ছিল ১৯৬৮ সালের ২৫ মে কবির ৬৯তম জন্মবার্ষিকীতে। সেই মোতাবেক ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে ১৭ মে একটি ঘোষণা আসে এবং পরের দিন জাতীয় দৈনিকে ঘোষণাটি প্রকাশিত হয়। তবে মুদ্রণের পর ডাকটিকিটে দেখা গেল মস্তবড় ভুল—কবির জন্মবর্ষ ১০ বছর পিছিয়ে লেখা হয়েছে ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দ। অল্প সময়ের মধ্যে নতুন ডাকটিকিট প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না, তাই প্রকাশের তারিখ গেল পিছিয়ে। ভুল সংশোধন করে এক মাস পর ২৫ জুন প্রকাশ করা হলো নজরুলের কাঙ্ক্ষিত সেই ডাকটিকিট। ভুল তবু রয়েই গেল, এবার কবিতায়। ডাকটিকিটে ছাপা হলো—‘গাহি সাম্যের গান—/ মানুষের চেয়ে নাহি কিছু বড়/ নাহি কিছু মহীয়ান।’ কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামের ‘মানুষ’ কবিতার এই অংশে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দুভাষী নকশাকার ফজল করিম। কবিতায় আছে—‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই,/ নহে কিছু মহীয়ান।’ ডাক বিভাগ দ্বিতীয়বার ভুল সংশোধনীতে গেল না। 

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে পৃথক হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অতঃপর ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবার স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় এবং এ দেশের মাটিতেই ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখে দুটি ডাকটিকিট প্রকাশের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৭ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত ৪০ পয়সা ও ২ টাকা ২৫ পয়সা মূল্যের সেই ডাকটিকিটগুলোতে দেখা যায়, কবির প্রতিকৃতিসহ তাঁর রচিত বাংলাদেশের রণসংগীতের চারটি চরণ—‘ঊষার দুয়ারে হানি’ আঘাত/ আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,/ আমরা টুটাব তিমির রাত,/ বাধার বিন্ধ্যাচল’ এবং ‘বিদ্রোহী’ কবিতার দুটি চরণ— ‘বল বীর—/ চির উন্নত মম শির!’

পরবর্তীকালে কবির জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ আরও একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। ছয় টাকা মূল্যমানের ওই টিকিটে পুনরাবৃত্তি হয়েছে ‘মানুষ’ কবিতার অংশবিশেষ। ভারতের ডাক বিভাগও কাজী নজরুল ইসলামের শততম জন্মবর্ষ স্মরণীয় করে রাখে তিন রুপি মূল্যমানের একটি ডাকটিকিট প্রকাশের মধ্য দিয়ে। 

২০০৪ সালের ৩ জুন ‘ইরান-বাংলাদেশ মৈত্রী স্মারক’ শিরোনামে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ১০ টাকা মূল্যের দুটি আলাদা ডাকটিকিটে স্থান পেয়েছেন ফার্সি ভাষার কবি হাফিজ সিরাজী ও বাংলা ভাষার কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

নজরুলের ‘বিদ্রোহী কবি’ খেতাব জুটেছিল তাঁর তুমুল আলোচিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জন্য। কবিতাটি তিনি লিখেছেন ১৯২১ সালের শেষ দিকে। বিদ্রোহী কবিতা রচনার ৯০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২০১১ সালে নজরুলের চারটি ডাকটিকিটসহ একটি সু৵ভেনির শিট প্রকাশ করে। 

সু৵ভেনির শিটে বিদ্রোহী কবিতার প্রথম কয়েকটি চরণ মুদ্রিত হয়, ‘বল বীর—/ বল উন্নত মম শির!/ শির নেহারি’ আমারি,/ নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির!/ বল বীর—/ বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’/ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’/ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,/ খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া/ উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!/ মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!/ বল বীর—/ আমি চির-উন্নত শির!’ 

একই সঙ্গে কবীর চৌধুরীর অনুবাদে কবিতাটির ওই অংশের ইংরেজি অনুবাদও যুক্ত করা হয়। কবিতার পাশাপাশি একশ টাকা মূল্যমানের ওই সু৵ভেনিরে দেখা যায়, সৈনিক বেশে নজরুলের আলোকচিত্র ঘিরে রেখেছে চারটি স্মারক ডাকটিকিট এবং প্রতিটি টিকিটের বুকে রয়েছে কবির নানা বয়সের প্রতিকৃতি। প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যমানের ডাকটিকিটে কবির প্রতিকৃতি ছাড়াও বাংলাদেশে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থাপত্য উঠে এসেছে। কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২০২২ সালের ২৪ মে সর্বশেষ ডাকটিকিট প্রকাশ করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নজর ল ইসল ম নজর ল র বল ব র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেসবুকে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য না করার নির্দেশনা সিলেট জেলা বিএনপির

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দায়িত্বহীন, অশালীন বা বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট, মন্তব্য কিংবা তথ্য শেয়ার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি। দলের কেউ এ নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন জেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম।
এদিকে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ ও শিষ্টাচার–বহিভূর্ত মন্তব্য করায় গতকাল রাতে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবেদুর রহমানকে (আছকির) সাময়িক বহিষ্কারের পাশাপাশি সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছে জেলা বিএনপি। এ ছাড়া অনলাইন গণমাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী বক্তব্য দেওয়ার জন্য জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফখরুল ইসলামকে (ফারুক) সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট জেলা বিএনপির আওতাধীন কিছু ইউনিটের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যক্রমে অনভিপ্রেত ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বনাথ উপজেলা, বিশ্বনাথ পৌরসভা ও ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, কটূক্তি ও বিভাজন সৃষ্টিকারী পোস্ট প্রচারিত হয়েছে। যা দলীয় শৃঙ্খলা ও ঐক্যের পরিপন্থী।

বিএনপি সব সময় সংগঠনের ঐক্য, শালীনতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের রাজনীতি বিশ্বাস করে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দলের কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মীর কাছ থেকে বিভেদমূলক আচরণ, বিদ্বেষ ছড়ানো বা প্রকাশ্যে অপপ্রচার কখনোই কাম্য নয়। অতএব জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটের নেতা-কর্মীদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হচ্ছে, যেন ভবিষ্যতে তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বহীন, অশালীন বা বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট, মন্তব্য বা শেয়ার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকেন।

যোগাযোগ করলে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি ফেসবুকে কিছু নেতা-কর্মীকে একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় জেলা বিএনপি একটি নির্দেশনা দিয়েছে। তা অমান্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ