ছয় বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। ইউরোপিয়ান ফুটবলে যাকে এক সময় সৃষ্টিশীলতার প্রতীক বলা হতো, সেই ইসকো আবার ফিরেছেন স্পেন জাতীয় দলে। ৩৩ বছর বয়সী এই প্লেমেকারকে জায়গা দিয়েছেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে। আসন্ন উয়েফা নেশন্স লিগ সেমিফাইনাল সামনে রেখে ঘোষিত স্কোয়াডে।

২০১৮ বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যায়নি ইসকোকে। রিয়াল মাদ্রিদে খেলার সময় সুযোগের অভাবে ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন। পরে সেভিয়া হয়ে এখন রিয়াল বেতিসে থিতু হন। আর সেখানেই ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনির অধীনে নিজের পুরনো ছন্দ ও শ্রেষ্ঠত্বে ফেরেন। চলতি মৌসুমে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বেতিস কনফারেন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে। এই কীর্তির পরই নজর কাড়েন জাতীয় দলের কোচের।

ফুয়েন্তের ভাষায়, “ইসকোকে ফেরানোর এখনই উপযুক্ত সময়। সে আমাদের খেলায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।” নিজেও দারুণ উচ্ছ্বসিত ইসকো, “এতোদিন পর জাতীয় দলে ফেরাটা গর্বের। এটা শুধু ফিরে আসা নয়, এটা আবার প্রমাণ করার সুযোগ।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে স্পেনের পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস

পর্তুগাল ও স্পেনে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পর্যুদস্তু জনজীবন

স্পেনের ঘোষিত স্কোয়াডে আরও বেশ কিছু চমক রয়েছে। উদীয়মান তারকা ডিন হুইজেন প্রথমবারের মতো জায়গা পেয়েছেন, তবে রাউল অ্যাসেন্সিওর জায়গা হয়নি। চোট কাটিয়ে ফিরেছেন তরুণ ডিফেন্ডার পাউ কুবারসি ও মিডফিল্ডার গাভি। যিনি দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন এসিএল ইনজুরির কারণে। তবে ইনিগো মার্টিনেজ ও ব্যালন ডি'অর জয়ী রদ্রি এখনও সেরে না ওঠায় এই তালিকায় নেই।

চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মেও জায়গা হয়নি ফেরান তোরেসের। অ্যাপেন্ডিসাইটিস সার্জারির জন্য ছিটকে গেছেন তিনি। গোলরক্ষক পজিশনে আস্থা রাখা হয়েছে উনাই সিমন, ডেভিড রায়া ও অ্যালেক্স রোমেরোর ওপর। চমকপ্রদভাবে বাদ পড়েছেন লা লিগার অন্যতম সেরা পারফর্মার হুয়ান গার্সিয়া, এয়োজে পেরেজ ও ব্রায়ান জারাগোজা।

স্কোয়াড বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সর্বোচ্চ ছয়জন খেলোয়াড় এসেছেন বার্সেলোনা থেকে। রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের মতো শীর্ষ ক্লাব থেকেও মাত্র একজন করে খেলোয়াড় জায়গা পেয়েছেন। এই বৈচিত্র্য স্পেন কোচের সাহসী সিদ্ধান্তের পরিচয় দেয়।

স্পেন স্কোয়াড এক নজরে:
গোলরক্ষক: উনাই সিমন, ডেভিড রায়া ও অ্যালেক্স রোমেরো।

ডিফেন্ডার: পেদ্রো পোরো, অস্কার মিঙ্গুয়েজা, পাউ কুবারসি, রবিন লে নরম্যান্ড, দানি ভিভান, ডিন হুইজেন, আলেহান্দ্রো গ্রিমালদো ও মার্ক কুকুরেয়া।

মিডফিল্ডার: মার্টিন জুবিমেন্দি, মিকেল মেরিনো, পেদ্রি, গাভি, ফেরমিন লোপেজ, ইসকো, অ্যালেক্স বায়েনা ও ফাবিয়ান রুইজ।

ফরোয়ার্ড: লামিনে ইয়ামাল, নিকো উইলিয়ামস, ইয়েরেমি পিনো, দানি ওলমো, সামু আঘেহোয়া, আলভারো মোরাতা ও মিকেল ওয়ারজেবাল।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল জ ত য় দল

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুর রুটে বাস বন্ধের নেপথ্যে যুবদল নেতার ৫ কোটির চাঁদা!

ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামের একটি পরিবহনের একাধিক বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বাস মালিকদের দাবি চাঁদার পাঁচ কোটি টাকা না পেয়ে স্থানীয় সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম ও তার অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। 

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে যাত্রাবাড়ী-শরীয়তপুর রুটে পরিবহনটির যাত্রীসেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। 

এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি ভুক্তভোগী বাস মালিকদের। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম। আর এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার। 

জেলার বাস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে শরীয়তপুর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় নিয়মিত যাত্রীপরিবহন করে আসছে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের দুই শতাধিক বাস। এ রুট ধরে প্রতিনিয়ত ঢাকা ও শরীয়তপুরে যাতায়াত করে অন্তত ৩০ হাজার যাত্রী। 

সম্প্রতি এ রুটে চলা পরিবহনগুলোর মালিকদের কাছে পাঁচ কোটি চাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ ওঠে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিমের বিরুদ্ধে। এদিকে তাকে চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও বেশ কয়েকজন শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর থেকেই বাস শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে চাঁদাবাজি বন্ধ ও অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। 

শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের চালক মাসুদ রানা বলেন, “যাত্রাবাড়ী গেলেই বিএনপির কিছু নেতা আমাদের বাস ভেঙে ফেলে। শ্রমিকদের মারধর করে। সেই ভয়ে পাঁচ দিন ধরে বাস চালাতে পারছি না। আমরা বিষয়টির সমাধান চাই। আমার পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে।”

মারধরের শিকার হওয়া নয়ন ব্যাপারী নামের এক বাস শ্রমিক বলেন, “যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পর হঠাৎ আমাদের বাসে হামলা চালায় ফাহিমের লোকজন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা বাসের গ্লাস ভেঙে ফেলে। আমাকেও জখম করা হয়েছে। আমরা যাত্রাবাড়ী রুটে বাস চালাতে পারছি না।”

বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। সিদ্দিক নামের এক যাত্রী বলেন, “আগে আমরা সরাসরি ঢাকার যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নামতাম। এখন শুনলাম চাঁদার টাকার জন্য সেখানে বাস না গিয়ে ধোলাইপাড় এলাকায় যাবে। আমরা খুবই ঝামেলার মধ্যে পড়েছি। আমরা সমস্যার সমাধান চাই।”

শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ চৌকিদার অভিযোগ করে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে যাত্রাবাড়ী রুটে চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল, তবে সেটা সহনশীল পর্যায়ে ছিল। সম্প্রতি এক যুবদল নেতা আমাদের মালিক সমিতির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। তাকে টাকা না দেওয়ায় আমাদের বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের মারধর করা হচ্ছে। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।”

বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার বলেন, “যুবদল নেতা ফাহিম চাঁদার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি প্রতিমাসে আমাদের গাড়ি থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে। তবে তিনি আরও বড় অংকের টাকা (৫ কোটি) দাবি করছেন। আমরা তার সেই দাবি না মেনে বিএনপির হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। এরপর থেকে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমাদের বাসগুলোতে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমরা চাঁদাবাজমুক্ত পরিবহন সেক্টর চাই।”

চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিম বলেন, “আমাদের গাড়ির রুটপারমিট থাকার পরেও শরীয়তপুরের বাস মালিক সমিতি সেগুলোকে অন্য উপজেলায় যেতে দিচ্ছে না। এখন তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি কারো কাছে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করিনি। আমি চাঁদাবাজি করে থাকলে আমরা বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। অভিযোগ প্রমাণ হলে আমি আমার অপরাধ মাথা পেতে নেব।” 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামের একটি পরিবহন যাত্রাবাড়িতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। কতিপয় দুষ্কৃতকারী চাঁদাদাবি করেছে এবং বাসে ভাঙচুর করছে। আমরা ঘটনাটি জানার পর ডিএমপির সংশ্লিষ্ট ক্রাইম বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছি। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির সাথে যৌথভাবে কাজ করছি।”

ঢাকা/আকাশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ