গবাদিপশুর পেটের মিথেন রোধ করবে ছত্রাক
Published: 27th, May 2025 GMT
জলবায়ু পরিবর্তনের বড় কারণগুলোর একটি হলো মিথেন গ্যাস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে এ গ্যাস কমাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে এক বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর মাধ্যমে উঠে এসেছে নতুন সম্ভাবনা। গবাদিপশুর হজম প্রক্রিয়ায় মিথেন উৎপাদন রোধে একটি প্রাকৃতিক ছত্রাক উদ্ভাবন করেছেন জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী। এ ছত্রাক ব্যবহারে গবাদিপশু থেকে নির্গত মিথেন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্ভাবনের কথা জানান ড.
ড. আবেদ জানান, গরু, ছাগল, মহিষের মতো জাবরকাটা প্রাণীর পেটে খাবার হজমের সময় গ্যাস তৈরি হয়। ঢেঁকুর, নিশ্বাস ও মলমূত্রের মাধ্যমে এ গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে যায়। এর বড় অংশ হলো মিথেন। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর গবাদিপশু থেকেই নির্গত হয় প্রায় ১০০ মিলিয়ন টন মিথেন। বাংলাদেশে প্রতিবছর নির্গত হয় প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন মিথেন।
ড. আবেদ বলেন, আমাদের উদ্ভাবিত ছত্রাক পশুখাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে তা হজম প্রক্রিয়ায় কাজ করে এবং মিথেন গ্যাস তৈরি হওয়া বন্ধ করে। এটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক, কোনো জেনেটিক পরিবর্তন করা হয়নি এবং পশুর স্বাস্থ্যের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না।
এই গবেষণা ২০২৬ সালের মার্চ মাসে বায়োটেকনোলজি রিপোর্টস সাময়িকীতে প্রকাশিত হবে। এরই মধ্যে গবেষণার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে রোম এগ্রিকালচার নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দেশের খামারিরা নিজেরাই ছোট ইউনিটে এ ছত্রাক উৎপাদন করতে পারবেন, যা প্রযুক্তিকে গ্রামপর্যায়ে সহজে পৌঁছে দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সঠিক প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গবাদিপশুর মিথেন নির্গমন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সবুজ অর্থনীতির সম্ভাব্য বাজারমূল্য দাঁড়াতে পারে ১.৫ বিলিয়ন ডলার।
মেধাসুমের সহসভাপতি শামসুল হুদা বলেন, এ প্রযুক্তি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় মোকাবিলায় অনেক এগিয়ে দেবে। ই-কমার্স উদ্যোক্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, এই উদ্ভাবন শুধু পরিবেশ রক্ষা নয়, কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গর
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুর রুটে বাস বন্ধের নেপথ্যে যুবদল নেতার ৫ কোটির চাঁদা!
ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামের একটি পরিবহনের একাধিক বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বাস মালিকদের দাবি চাঁদার পাঁচ কোটি টাকা না পেয়ে স্থানীয় সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম ও তার অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে যাত্রাবাড়ী-শরীয়তপুর রুটে পরিবহনটির যাত্রীসেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।
এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি ভুক্তভোগী বাস মালিকদের। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম। আর এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার।
জেলার বাস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে শরীয়তপুর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় নিয়মিত যাত্রীপরিবহন করে আসছে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের দুই শতাধিক বাস। এ রুট ধরে প্রতিনিয়ত ঢাকা ও শরীয়তপুরে যাতায়াত করে অন্তত ৩০ হাজার যাত্রী।
সম্প্রতি এ রুটে চলা পরিবহনগুলোর মালিকদের কাছে পাঁচ কোটি চাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ ওঠে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিমের বিরুদ্ধে। এদিকে তাকে চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও বেশ কয়েকজন শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর থেকেই বাস শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে চাঁদাবাজি বন্ধ ও অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের চালক মাসুদ রানা বলেন, “যাত্রাবাড়ী গেলেই বিএনপির কিছু নেতা আমাদের বাস ভেঙে ফেলে। শ্রমিকদের মারধর করে। সেই ভয়ে পাঁচ দিন ধরে বাস চালাতে পারছি না। আমরা বিষয়টির সমাধান চাই। আমার পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে।”
মারধরের শিকার হওয়া নয়ন ব্যাপারী নামের এক বাস শ্রমিক বলেন, “যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পর হঠাৎ আমাদের বাসে হামলা চালায় ফাহিমের লোকজন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা বাসের গ্লাস ভেঙে ফেলে। আমাকেও জখম করা হয়েছে। আমরা যাত্রাবাড়ী রুটে বাস চালাতে পারছি না।”
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। সিদ্দিক নামের এক যাত্রী বলেন, “আগে আমরা সরাসরি ঢাকার যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নামতাম। এখন শুনলাম চাঁদার টাকার জন্য সেখানে বাস না গিয়ে ধোলাইপাড় এলাকায় যাবে। আমরা খুবই ঝামেলার মধ্যে পড়েছি। আমরা সমস্যার সমাধান চাই।”
শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ চৌকিদার অভিযোগ করে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে যাত্রাবাড়ী রুটে চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল, তবে সেটা সহনশীল পর্যায়ে ছিল। সম্প্রতি এক যুবদল নেতা আমাদের মালিক সমিতির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। তাকে টাকা না দেওয়ায় আমাদের বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের মারধর করা হচ্ছে। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।”
বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার বলেন, “যুবদল নেতা ফাহিম চাঁদার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি প্রতিমাসে আমাদের গাড়ি থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে। তবে তিনি আরও বড় অংকের টাকা (৫ কোটি) দাবি করছেন। আমরা তার সেই দাবি না মেনে বিএনপির হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। এরপর থেকে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমাদের বাসগুলোতে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমরা চাঁদাবাজমুক্ত পরিবহন সেক্টর চাই।”
চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিম বলেন, “আমাদের গাড়ির রুটপারমিট থাকার পরেও শরীয়তপুরের বাস মালিক সমিতি সেগুলোকে অন্য উপজেলায় যেতে দিচ্ছে না। এখন তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি কারো কাছে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করিনি। আমি চাঁদাবাজি করে থাকলে আমরা বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। অভিযোগ প্রমাণ হলে আমি আমার অপরাধ মাথা পেতে নেব।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামের একটি পরিবহন যাত্রাবাড়িতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। কতিপয় দুষ্কৃতকারী চাঁদাদাবি করেছে এবং বাসে ভাঙচুর করছে। আমরা ঘটনাটি জানার পর ডিএমপির সংশ্লিষ্ট ক্রাইম বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছি। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির সাথে যৌথভাবে কাজ করছি।”
ঢাকা/আকাশ/এস