চূড়ান্ত হচ্ছে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, বিবিসিকে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা
Published: 14th, January 2025 GMT
গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি দিতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে একটি চুক্তির শর্তাবলি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত আলোচনা সম্পর্কে অবগত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে এ কথা বলেছেন।
চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি এমন সময় সামনে এল যখন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ‘চলতি সপ্তাহে’ একটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত চুক্তি হতে পারে।
ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। কয়েক ঘণ্টা, দিন বা এর বেশি সময়ের মধ্যে চুক্তি হওয়া সম্ভব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ছাড়া গতকাল সোমবার তিনি কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গেও আলাপ করেছেন, যিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন।
জ্যাক সুলিভান বলেছেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও আলাপ করার কথা রয়েছে জো বাইডেনের।
এদিকে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন জোটের ভেতর থেকে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টির কয়েকজনসহ জোটের ১০ জন ডানপন্থী সদস্য যুদ্ধবিরতির বিরোধিতার করে তাঁত কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের যে কর্মকর্তা যুদ্ধবিরতির চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন, তিনি বিবিসিকে আরও বলেন, সোমবার ইসরায়েল ও হামাসের কর্মকর্তারা একই ভবনের ভেতরে পরোক্ষ আলাপ-আলোচনা করেছেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির কিছু সম্ভাব্য বিবরণ প্রকাশ করে ফিলিস্তিনি ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিস্তারিত কৌশলগত আলোচনার জন্য যথেষ্ট সময় লেগেছে।’
উভয় পক্ষ রাজি হয়েছে যে, চুক্তির প্রথম দিন হামাস তিন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। এর পর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে ইসরায়েল।
এর সাত দিন পর হামাস আরও চার জিম্মিকে মুক্তি দেবে। দক্ষিণ গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের উত্তর গাজায় ফেরার অনুমতি দেবে ইসরায়েল। তবে তাঁরা শুধু উপকূলীয় রাস্তা দিয়ে হেঁটে ফিরতে পারবেন। সালাহ আল-দিন সড়ক সংলগ্ন একটি পথ দিয়ে কার, পশু–চালিত গাড়ি ও ট্রাক চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। কাতার ও মিসরের পরিচালিত একটি এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে এ পথ দিয়ে গাড়ি চলাচল পর্যবেক্ষণ করা হবে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনারা ফিলাডেলফি করিডরে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। চুক্তির প্রথম ধাপ ৪২ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে। এ সময় পূর্ব ও উত্তর সীমান্তে ৮০০ মিটার নিরপেক্ষ অঞ্চল হিসেবে বজায় থাকবে।
ইসরায়েল এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। এর মধ্যে ১৯০ জন ১৫ বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে সাজা ভোগ করছেন। বিনিময়ে হামাস ৩৪ জিম্মিকে মুক্তি দেবে।
যুদ্ধবিরতির ১৬তম দিনে চুক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
এদিকে গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, সোমবার গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
বেসামরিক প্রতিরক্ষার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেন, ‘তারা (ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী) স্কুল, বাড়িঘর এমনকি জনসমাগমের মধ্যেও বোমা নিক্ষেপ করেছে।’
আরও পড়ুনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবের চেয়ে গাজায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৪১ শতাংশ বেশি: ল্যানসেটের গবেষণা১০ জানুয়ারি ২০২৫২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে এক ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে ১ হাজার ২৫০ জন নিহত হয়। ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। আর এ হামলাকে কেন্দ্র করে গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত।
ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল বলেছে, জিম্মিদের মধ্যে ৯৪ জন এখনো গাজায়। ৩৪ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া যুদ্ধের আগে অপহরণ হওয়া চার ইসরায়েলির মধ্যে দুজন মারা গেছেন।
আরও পড়ুন:
আরও পড়ুনযুদ্ধাপরাধের বিচারের ভয় পেয়ে বসেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে০৯ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনগাজায় দায়িত্ব পালন করা ইসরায়েলি সেনারা বিদেশে গ্রেপ্তার হতে পারেন০৬ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজপরিবারের সঙ্গে সমঝোতা চান প্রিন্স হ্যারি
রাজপরিবারের সঙ্গে সমঝোতার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন প্রিন্স হ্যারি। যুক্তরাজ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ে হারের পর বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডিউক অব সাসেক্স হেনরি চার্লস আলবার্ট ডেভিড এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। আবেগঘন ওই সাক্ষাৎকারে বাবা রাজা চার্লসের স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ জানান তিনি।
হ্যারি বলেন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত এইসব কারণে বাবা (চার্লস) তার সঙ্গে কথা বলবেন না। কিন্তু তিনি আর লড়তে চান না। তাছাড়া, বাবা কতদিন বাঁচবেন তাও তিনি জানেন না।
১৫ মাস আগে যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লসের ক্যান্সার ধরা পড়ে। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে। কিছুদিন আগে চার্লস ব্যক্তিগত এক বার্তায় তার ক্যান্সারের অভিজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। এরপরই বাবাকে নিয়ে ওই কথা বললেন প্রিন্স হ্যারি।
যুক্তরাজ্যে সফরকালে হ্যারি ও তার পরিবারের পুলিশি নিরাপত্তার মাত্রা নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায়ে হেরে যান প্রিন্স হ্যারি। শুক্রবার মামলার রায় ঘোষণা করে লন্ডনের আপিল আদালত।
২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের দায়িত্ব ছেড়ে স্ত্রী মেগান মার্কেলকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান প্রিন্স হ্যারি। এরপর যুক্তরাজ্য সরকার হ্যারিকে আর আগের মতো সরকার-প্রদত্ত নিরাপত্তা না দেওয়া এবং প্রতিটি সফরের ক্ষেত্রে তা আলাদাভাবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রথম মামলায় হারের পর হ্যারি আপিল করেন। তার আইনজীবীদের অভিযোগ ছিল, হ্যারিকে ‘অযৌক্তিক ও কম মানের’ নিরাপত্তা দিয়ে অন্যদের তুলনায় আলাদাভাবে দেখা হয়েছে। কিন্তু আদালত সেই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে।
সরকারের পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, হ্যারির নিরাপত্তা কমানোর কারণ হচ্ছে, তার রাজকীয় অবস্থানের পরিবর্তন। তিনি এখন বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে বাস করেন।
মামলায় পুনরায় পরাজয়ের পর হ্যারি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমি আমার পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে চাই। আইনি লড়াই করার আর কোনও মানে হয় না। জীবন মূল্যবান।
তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারের কিছু সদস্য ও আমার মধ্যে অনেক মতবিরোধ, মতভেদ আছে। কিন্তু এখন সেগুলো ক্ষমা করে দিয়েছি।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্ত্রী মেগান এবং সন্তানকে রাজপরিবারে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব না, সেকথাও বলেছেন হ্যারি। নিরাপত্তা সংক্রান্ত মামলায় আদালত যে রায় দিয়েছে তার ফলে পরিবারসহ নিরাপদে যুক্তরাজ্যে ফেরা ‘অসম্ভব’ হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।