আগে ঈদ এলে বেচাকেনা কয়েক গুণ হতো। এখন গ্রামের নারীরা হাট-বাজার তথা শহর থেকে মালপত্র কিনে ফেলেন। তাই আগে থেকে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। কোনো দিন ২-৩শ, কোনো দিন বেশি বেচাকেনা হলে ৪-৫শ টাকা আয় করা যায়। এ আয় দিয়ে নিত্যদিনের খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়ে। জানাচ্ছিলেন বেজ (বেদে) সম্প্রদায়ের নেওয়ারুন বেগম। তিনি বলেন, ‘আমরার মতো গরিব মাইনষের ঈদ-পরব নাই।’
নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করা বেজ সম্প্রদায়ের মানুষের পরিবার চলে নারীর উপার্জনে। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় নৌকা ছেড়ে তাদের একাংশ স্থায়ী ঠিকানার সন্ধান পেলেও ভাগ্যের চাকার বদল ঘটেনি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা তীরের নতুনবস্তী গ্রামের খাসভূমিতে বসবাস করছে কয়েকশ বেজ পরিবার। প্রতিদিন সকাল হলেই বিভিন্ন বয়সী শতাধিক নারী মাথায় পণ্যসামগ্রীর বোঝা নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের উদ্দেশে বের হোন। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চুড়ি-ফিতা, নারীর অন্তর্বাস, কসমেটিক্স, ইমিটেশন ও সিরামিকের তৈজসপত্র। প্রত্যন্ত লোকালয়ে মাথায় বোঝা নিয়ে ঘুরে বিক্রির আয়ে চলে তাদের নিত্যদিনের পারিবারিক খরচ।
বেজ সম্প্রদায়ের এমন এক নারী ফুলতেরা বেগম (৬০)। তিনি জানান, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা তিনি। গত ২০ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর চর এলাকায় বসবাস করে আসছেন। প্রতিদিনের জীবন সম্পর্কে ফুলতেরা বেগম বলেন, ‘রাত পোহাইলে কেমনে ভাত চাইট্টা (অল্প-স্বল্প) খাইয়া মাথায় বোঝা লইয়া বাইর হইতাম এই চিন্তায় থাকি। হাঞ্জা (সন্ধ্যা) হইলে বাড়িত আইয়া রান্না-ভারা করে জামাই (স্বামী), হুরুতারে (ছেলে-মেয়ে) খাওয়াইয়া কেমনে চাটিত (বিছানায়) পড়তাম এটাই চিন্তা থাকে। শরীর এর বাইরে অন্য কিছু সায় দেয় না।’
ঈদ উদযাপনের বিষয়ে কথা হয় এ সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গে। তারা একই সুরে বলেন, নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তাদের আবার ঈদের আনন্দ! ওইদিন তারা গাঁওয়ে (ব্যবসার উদ্দেশে গ্রামে বের হওয়া) যেতে পারেন না, আয়-উপার্জনও হয় না। এদিন তাদের ব্যবসা হয় না।
ঈদ কোন দিন আয় আর কোন দিন যায় ইতা (এসব) নিয়ে তেমন ভাবনা-চিন্তা নাই– বললেন বেজ সম্প্রদায়ের লাকি বেগম (৪০)। তিনি বলেন, ‘আগে মা-মই (খালা) ও দাদি-নানিরা নৌকায় থাইক্কা একেক জায়গায় একেক সময় নৌকা ভিড়াইয়া চুড়িবাঙ্গী (চুড়ি-ফিতা) বেইচা জীবন-জীবিকা চালাইতেন। এখন দিনের পরিবর্তন হইছে, গাঙ-বিল ভরি গেছে। আগের মতো অবাদে (অবাধে) নৌকা চলাচলের সুযোগ কমে গেছে। এখন চর এলাকায় সরকারি (খাস) জমিতে ঘর বানাইয়া তারা কয়েকশ পরিবার থাকে। দিন আনি দিন খাই, সকলে মিলেমিশে এক জাগাত এখন বসবাস করি। এই-ই আমাদের আনন্দ।’
সিরামিকের থালা-বাটি, কাচের গ্লাস গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন মাহফুজা বেগম (৫০)। তিনি জানান, তাঁর ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাঁকে ঈদ উপলক্ষে একটা শার্ট-কিংবা প্যান্ট কিনে দিতে হবে। না হলে বন্ধুদের কাছে শরমিন্দা (লজ্জা) পাবে ছেলে।
ব্যবসায় আগের সুদিন নেই জানিয়ে আক্ষেপ জানিয়ে সেবিনা বেগম (৪০) জানান, আগে বেজ সম্প্রদায়ের নারীরা গ্রামে গ্রামে চুড়ি-ইমিটেশন সামগ্রী বিক্রির জন্য বেরিয়ে গেলে তাদের স্বামীরা নৌকায় ছেলেমেয়েদের দেখভাল করতেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায় এবং স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠায় সংসারে আয় বাড়তে তাদের স্বামীরাও নানা পেশায় জড়িয়েছেন। ছাতা মেরামত, মাছ ধরাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন পরিবারের পুরুষরা। এতেও পরিবারের ভরণ-পোষণে কষ্ট হয়। ছেলেমেয়ের জন্য ঈদে নতুন কাপড় কেনা দূরে থাক, একটু সেমাই আর মুরগির মাংস দিয়ে খাওয়াতে পারলেই গরিবের আনন্দ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গাজার লাখ লাখ বাসিন্দার আশ্রয় স্থল প্লাবিত
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গাজার লাখ লাখ বাসিন্দা এবং তাদের আশ্রয়স্থল প্লাবিত হয়েছে। এই সময়ে আশ্রয়স্থলের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং বালির বস্তা ছিটমহলে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। শুক্রবার সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকাজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে দুই বছরের যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর আশ্রয়স্থল শত শত তাঁবু প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে একটি কন্যা শিশু কন্যার মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, নিচু, ধ্বংসস্তূপে ভরা এলাকায় প্রায় ৭ লাখ ৯৫ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ সম্ভাব্য বিপজ্জনক বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে পরিবারগুলো অনিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করছে। অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিও বাড়িয়েছে।
কাঠ এবং প্লাইউডের মতো আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করার জন্য উপকরণ, সেইসাথে বন্যা মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য বালির বস্তা এবং পানির পাম্পগুরো চলমান প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজায় প্রবেশ করতে বিলম্বিত হচ্ছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে এবং সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অদক্ষতা ও হামাসের চুরি রোধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে। তবে হামাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চললেও ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিনিয়ত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল গাজার বেশিরভাগ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে এবং জীবনযাত্রার অবস্থা ভয়াবহ করে তুলেছে।
ঢাকা/শাহেদ