Samakal:
2025-10-27@15:20:25 GMT

ব্যবসায় সুদিন নেই বেজ নারীদের

Published: 27th, March 2025 GMT

ব্যবসায় সুদিন নেই বেজ নারীদের

আগে ঈদ এলে বেচাকেনা কয়েক গুণ হতো। এখন গ্রামের নারীরা হাট-বাজার তথা শহর থেকে মালপত্র কিনে ফেলেন। তাই আগে থেকে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। কোনো দিন ২-৩শ, কোনো দিন বেশি বেচাকেনা হলে ৪-৫শ টাকা আয় করা যায়। এ আয় দিয়ে নিত্যদিনের খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়ে। জানাচ্ছিলেন বেজ (বেদে) সম্প্রদায়ের নেওয়ারুন বেগম। তিনি বলেন, ‘আমরার মতো গরিব মাইনষের ঈদ-পরব নাই।’ 
নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করা বেজ সম্প্রদায়ের মানুষের পরিবার চলে নারীর উপার্জনে। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় নৌকা ছেড়ে তাদের একাংশ স্থায়ী ঠিকানার সন্ধান পেলেও ভাগ্যের চাকার বদল ঘটেনি। 
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা তীরের নতুনবস্তী গ্রামের খাসভূমিতে বসবাস করছে কয়েকশ বেজ পরিবার। প্রতিদিন সকাল হলেই বিভিন্ন বয়সী শতাধিক নারী মাথায়  পণ্যসামগ্রীর বোঝা নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের উদ্দেশে বের হোন। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চুড়ি-ফিতা, নারীর অন্তর্বাস, কসমেটিক্স, ইমিটেশন ও সিরামিকের তৈজসপত্র। প্রত্যন্ত লোকালয়ে মাথায় বোঝা নিয়ে ঘুরে বিক্রির আয়ে চলে তাদের নিত্যদিনের পারিবারিক খরচ।
বেজ সম্প্রদায়ের এমন এক নারী ফুলতেরা বেগম (৬০)। তিনি জানান, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা তিনি। গত ২০ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর চর এলাকায় বসবাস করে আসছেন। প্রতিদিনের জীবন সম্পর্কে ফুলতেরা বেগম বলেন, ‘রাত পোহাইলে কেমনে ভাত চাইট্টা (অল্প-স্বল্প) খাইয়া মাথায় বোঝা লইয়া বাইর হইতাম এই চিন্তায় থাকি। হাঞ্জা (সন্ধ্যা) হইলে বাড়িত আইয়া রান্না-ভারা করে জামাই (স্বামী), হুরুতারে (ছেলে-মেয়ে) খাওয়াইয়া কেমনে চাটিত (বিছানায়) পড়তাম এটাই চিন্তা থাকে। শরীর এর বাইরে অন্য কিছু সায় দেয় না।’ 
ঈদ উদযাপনের বিষয়ে কথা হয় এ সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গে। তারা একই সুরে বলেন, নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তাদের আবার ঈদের আনন্দ! ওইদিন তারা গাঁওয়ে (ব্যবসার উদ্দেশে গ্রামে বের হওয়া) যেতে পারেন না, আয়-উপার্জনও হয় না। এদিন তাদের ব্যবসা হয় না। 
ঈদ কোন দিন আয় আর কোন দিন যায় ইতা (এসব) নিয়ে তেমন ভাবনা-চিন্তা নাই– বললেন বেজ সম্প্রদায়ের লাকি বেগম (৪০)। তিনি বলেন, ‘আগে মা-মই (খালা) ও দাদি-নানিরা নৌকায় থাইক্কা একেক জায়গায় একেক সময় নৌকা ভিড়াইয়া চুড়িবাঙ্গী (চুড়ি-ফিতা) বেইচা জীবন-জীবিকা চালাইতেন। এখন দিনের পরিবর্তন হইছে, গাঙ-বিল ভরি গেছে। আগের মতো অবাদে (অবাধে) নৌকা চলাচলের সুযোগ কমে গেছে। এখন চর এলাকায় সরকারি (খাস) জমিতে ঘর বানাইয়া তারা কয়েকশ পরিবার থাকে। দিন আনি দিন খাই, সকলে মিলেমিশে এক জাগাত এখন বসবাস করি। এই-ই আমাদের আনন্দ।’ 
সিরামিকের থালা-বাটি, কাচের গ্লাস গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন মাহফুজা বেগম (৫০)। তিনি জানান, তাঁর ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাঁকে ঈদ উপলক্ষে একটা শার্ট-কিংবা প্যান্ট কিনে দিতে হবে। না হলে বন্ধুদের কাছে শরমিন্দা (লজ্জা) পাবে ছেলে। 
ব্যবসায় আগের সুদিন নেই জানিয়ে আক্ষেপ জানিয়ে সেবিনা বেগম (৪০) জানান, আগে বেজ সম্প্রদায়ের নারীরা গ্রামে গ্রামে চুড়ি-ইমিটেশন সামগ্রী বিক্রির জন্য বেরিয়ে গেলে তাদের স্বামীরা নৌকায় ছেলেমেয়েদের দেখভাল করতেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায় এবং স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠায় সংসারে আয় বাড়তে তাদের স্বামীরাও নানা পেশায় জড়িয়েছেন। ছাতা মেরামত, মাছ ধরাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন পরিবারের পুরুষরা। এতেও পরিবারের ভরণ-পোষণে কষ্ট হয়। ছেলেমেয়ের জন্য ঈদে নতুন কাপড় কেনা দূরে থাক, একটু সেমাই আর মুরগির মাংস দিয়ে খাওয়াতে পারলেই গরিবের আনন্দ। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস পর ব র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সচিবালয়ে ৩ দিনব্যাপী ব্রেস্ট ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি

ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা মাস উপলক্ষে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তিন দিনব্যাপী ব্রেস্ট ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

৯ সচিব বাধ্যতামূলক অবসরে 

উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের প্রশিক্ষণ শুরু ২০ অক্টোবর

এতে বলা হয়, নারীদের মধ্যে ক্যানসারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ স্তন ক্যানসার। ব্রেস্ট ক্যানসারের ভয়াবহতা মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ সচিবালয় ক্লিনিকে একটি বিশেষ তিন দিনব্যাপী ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্ক্রিনিং কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অক্টোবর মাসকে ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এই সচেতনতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, সচিবালয়ের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে, এর লক্ষ্য হলো ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতার এই বার্তা সমাজে একটি সচেতনতা তৈরি করবে।

তিন দিনব্যাপী ব্রেস্ট ক্যানসার স্ক্রিনিং প্রোগ্রামটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

এই প্রোগ্রামের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং তাদের স্তন স্ব-পরীক্ষা এবং প্রাথমিক শনাক্তকরণের পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা ও নির্দেশনা দেওয়া।

এই কর্মসূচিতে সরকারি নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একজন যোগ্য স্বাস্থ্য সেবা পেশাদার কর্তৃক গোপনীয় স্তন স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং ও পরামর্শের সুবিধা। প্রাথমিক স্তন স্ব-পরীক্ষার পদ্ধতিগুলো সহজে বোঝানোর জন্য স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল কিয়স্ক, যেখানে স্থানীয় ভাষায় অ্যানিমেটেড ভিডিও প্রদর্শিত হবে। সন্দেহজনক স্তনের চাকা বা ফোলা অংশের ক্ষেত্রে দ্রুত মূল্যায়ন এবং পরবর্তী চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় আল্ট্রাসনোগ্রাফি স্ক্যান ও বিশেষজ্ঞের কাছে রেফারেলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এছাড়া সচেতনতা বাড়াতে অন-সাইটে মেডিকেল পেশাদার এবং নারী নার্স কাউন্সেলরের মাধ্যমে সরাসরি প্রশ্নোত্তর ও ব্যক্তিগত পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি স্ব-পরীক্ষা পদ্ধতি ও স্ক্রিনিং কেন্দ্র সম্পর্কিত প্রচারপত্র বিতরণ করা হবে। স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সংহতি প্রকাশের জন্য গোলাপি রিবন বিতরণ করা হবে।

এর মাধ্যমে সচিবালয়ের কর্মীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার সচেতনতা সম্পর্কে সরাসরি শিক্ষা প্রদান, পেশাদার পরিবেশে স্ক্রিনিং নিয়ে আলোচনার স্বাভাবিকীকরণ এবং ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মসূচির জন্য একটি টেকসই সচেতনতা মডেল তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই রোগ সম্পর্কে সমাজের ভুল ধারণা দূরীকরণে এবং প্রাথমিক রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে সবার অংশগ্রহণ জরুরি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ