Samakal:
2025-11-27@18:03:05 GMT

ব্যবসায় সুদিন নেই বেজ নারীদের

Published: 27th, March 2025 GMT

ব্যবসায় সুদিন নেই বেজ নারীদের

আগে ঈদ এলে বেচাকেনা কয়েক গুণ হতো। এখন গ্রামের নারীরা হাট-বাজার তথা শহর থেকে মালপত্র কিনে ফেলেন। তাই আগে থেকে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। কোনো দিন ২-৩শ, কোনো দিন বেশি বেচাকেনা হলে ৪-৫শ টাকা আয় করা যায়। এ আয় দিয়ে নিত্যদিনের খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়ে। জানাচ্ছিলেন বেজ (বেদে) সম্প্রদায়ের নেওয়ারুন বেগম। তিনি বলেন, ‘আমরার মতো গরিব মাইনষের ঈদ-পরব নাই।’ 
নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করা বেজ সম্প্রদায়ের মানুষের পরিবার চলে নারীর উপার্জনে। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় নৌকা ছেড়ে তাদের একাংশ স্থায়ী ঠিকানার সন্ধান পেলেও ভাগ্যের চাকার বদল ঘটেনি। 
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা তীরের নতুনবস্তী গ্রামের খাসভূমিতে বসবাস করছে কয়েকশ বেজ পরিবার। প্রতিদিন সকাল হলেই বিভিন্ন বয়সী শতাধিক নারী মাথায়  পণ্যসামগ্রীর বোঝা নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের উদ্দেশে বের হোন। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চুড়ি-ফিতা, নারীর অন্তর্বাস, কসমেটিক্স, ইমিটেশন ও সিরামিকের তৈজসপত্র। প্রত্যন্ত লোকালয়ে মাথায় বোঝা নিয়ে ঘুরে বিক্রির আয়ে চলে তাদের নিত্যদিনের পারিবারিক খরচ।
বেজ সম্প্রদায়ের এমন এক নারী ফুলতেরা বেগম (৬০)। তিনি জানান, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা তিনি। গত ২০ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর চর এলাকায় বসবাস করে আসছেন। প্রতিদিনের জীবন সম্পর্কে ফুলতেরা বেগম বলেন, ‘রাত পোহাইলে কেমনে ভাত চাইট্টা (অল্প-স্বল্প) খাইয়া মাথায় বোঝা লইয়া বাইর হইতাম এই চিন্তায় থাকি। হাঞ্জা (সন্ধ্যা) হইলে বাড়িত আইয়া রান্না-ভারা করে জামাই (স্বামী), হুরুতারে (ছেলে-মেয়ে) খাওয়াইয়া কেমনে চাটিত (বিছানায়) পড়তাম এটাই চিন্তা থাকে। শরীর এর বাইরে অন্য কিছু সায় দেয় না।’ 
ঈদ উদযাপনের বিষয়ে কথা হয় এ সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গে। তারা একই সুরে বলেন, নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তাদের আবার ঈদের আনন্দ! ওইদিন তারা গাঁওয়ে (ব্যবসার উদ্দেশে গ্রামে বের হওয়া) যেতে পারেন না, আয়-উপার্জনও হয় না। এদিন তাদের ব্যবসা হয় না। 
ঈদ কোন দিন আয় আর কোন দিন যায় ইতা (এসব) নিয়ে তেমন ভাবনা-চিন্তা নাই– বললেন বেজ সম্প্রদায়ের লাকি বেগম (৪০)। তিনি বলেন, ‘আগে মা-মই (খালা) ও দাদি-নানিরা নৌকায় থাইক্কা একেক জায়গায় একেক সময় নৌকা ভিড়াইয়া চুড়িবাঙ্গী (চুড়ি-ফিতা) বেইচা জীবন-জীবিকা চালাইতেন। এখন দিনের পরিবর্তন হইছে, গাঙ-বিল ভরি গেছে। আগের মতো অবাদে (অবাধে) নৌকা চলাচলের সুযোগ কমে গেছে। এখন চর এলাকায় সরকারি (খাস) জমিতে ঘর বানাইয়া তারা কয়েকশ পরিবার থাকে। দিন আনি দিন খাই, সকলে মিলেমিশে এক জাগাত এখন বসবাস করি। এই-ই আমাদের আনন্দ।’ 
সিরামিকের থালা-বাটি, কাচের গ্লাস গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন মাহফুজা বেগম (৫০)। তিনি জানান, তাঁর ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাঁকে ঈদ উপলক্ষে একটা শার্ট-কিংবা প্যান্ট কিনে দিতে হবে। না হলে বন্ধুদের কাছে শরমিন্দা (লজ্জা) পাবে ছেলে। 
ব্যবসায় আগের সুদিন নেই জানিয়ে আক্ষেপ জানিয়ে সেবিনা বেগম (৪০) জানান, আগে বেজ সম্প্রদায়ের নারীরা গ্রামে গ্রামে চুড়ি-ইমিটেশন সামগ্রী বিক্রির জন্য বেরিয়ে গেলে তাদের স্বামীরা নৌকায় ছেলেমেয়েদের দেখভাল করতেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায় এবং স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠায় সংসারে আয় বাড়তে তাদের স্বামীরাও নানা পেশায় জড়িয়েছেন। ছাতা মেরামত, মাছ ধরাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন পরিবারের পুরুষরা। এতেও পরিবারের ভরণ-পোষণে কষ্ট হয়। ছেলেমেয়ের জন্য ঈদে নতুন কাপড় কেনা দূরে থাক, একটু সেমাই আর মুরগির মাংস দিয়ে খাওয়াতে পারলেই গরিবের আনন্দ। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস পর ব র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুপক্ষের বিরোধের জেরে গুলি, আহত ৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের বিরোধের জেরে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন কান্দিপাড়ার টুটুল মিয়া (৪৬), মো. শিহাব উদ্দিন ওরফে সোয়েব (২৭) ও  মো. সানজু (২২)।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে কান্দিপাড়ার মাদ্রাসার রোডে পপুলার প্রেসের সামনে দাঁড়িয়ে টুটুল মিয়াসহ কয়েকজন চা পান করছিলেন। এ সময় একদল লোক এসে গুলি ছোড়ে। এতে টুটুল, শিহাব ও সানজু ছররা গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।

আহত টুটুল মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে সাকিলের বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় সে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নূর ইবনে বিন সিফাত জানান, একজনের পায়ে ২০-২৫টির মতো রাবার বুলেট রয়েছে। তবে আহত ব্যক্তিরা শঙ্কামুক্ত। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলি বের করার জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়তে পারে।

অভিযুক্ত সাকিল সিকদার কান্দিপাড়ার বাসিন্দা ও সদর উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে গুলি করিনি। তারা নিজেরা গুলি করে আমার বিরুদ্ধে বলছে এখন।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, গুলিবিদ্ধ টুটুল ও শিহাব জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেনের (দিলীপ) পক্ষের লোক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাকিলসহ কয়েকজন গুলি করেছে তিনি বলে শুনেছেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, এলাকায় সাকিল ও দিলীপের পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় তিনজন আহত হয়েছেন। তবে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কি না, তা তিনি জানেন না। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ