Samakal:
2025-05-01@05:42:09 GMT

ব্যবসায় সুদিন নেই বেজ নারীদের

Published: 27th, March 2025 GMT

ব্যবসায় সুদিন নেই বেজ নারীদের

আগে ঈদ এলে বেচাকেনা কয়েক গুণ হতো। এখন গ্রামের নারীরা হাট-বাজার তথা শহর থেকে মালপত্র কিনে ফেলেন। তাই আগে থেকে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। কোনো দিন ২-৩শ, কোনো দিন বেশি বেচাকেনা হলে ৪-৫শ টাকা আয় করা যায়। এ আয় দিয়ে নিত্যদিনের খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়ে। জানাচ্ছিলেন বেজ (বেদে) সম্প্রদায়ের নেওয়ারুন বেগম। তিনি বলেন, ‘আমরার মতো গরিব মাইনষের ঈদ-পরব নাই।’ 
নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করা বেজ সম্প্রদায়ের মানুষের পরিবার চলে নারীর উপার্জনে। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় নৌকা ছেড়ে তাদের একাংশ স্থায়ী ঠিকানার সন্ধান পেলেও ভাগ্যের চাকার বদল ঘটেনি। 
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা তীরের নতুনবস্তী গ্রামের খাসভূমিতে বসবাস করছে কয়েকশ বেজ পরিবার। প্রতিদিন সকাল হলেই বিভিন্ন বয়সী শতাধিক নারী মাথায়  পণ্যসামগ্রীর বোঝা নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের উদ্দেশে বের হোন। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চুড়ি-ফিতা, নারীর অন্তর্বাস, কসমেটিক্স, ইমিটেশন ও সিরামিকের তৈজসপত্র। প্রত্যন্ত লোকালয়ে মাথায় বোঝা নিয়ে ঘুরে বিক্রির আয়ে চলে তাদের নিত্যদিনের পারিবারিক খরচ।
বেজ সম্প্রদায়ের এমন এক নারী ফুলতেরা বেগম (৬০)। তিনি জানান, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা তিনি। গত ২০ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর চর এলাকায় বসবাস করে আসছেন। প্রতিদিনের জীবন সম্পর্কে ফুলতেরা বেগম বলেন, ‘রাত পোহাইলে কেমনে ভাত চাইট্টা (অল্প-স্বল্প) খাইয়া মাথায় বোঝা লইয়া বাইর হইতাম এই চিন্তায় থাকি। হাঞ্জা (সন্ধ্যা) হইলে বাড়িত আইয়া রান্না-ভারা করে জামাই (স্বামী), হুরুতারে (ছেলে-মেয়ে) খাওয়াইয়া কেমনে চাটিত (বিছানায়) পড়তাম এটাই চিন্তা থাকে। শরীর এর বাইরে অন্য কিছু সায় দেয় না।’ 
ঈদ উদযাপনের বিষয়ে কথা হয় এ সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গে। তারা একই সুরে বলেন, নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তাদের আবার ঈদের আনন্দ! ওইদিন তারা গাঁওয়ে (ব্যবসার উদ্দেশে গ্রামে বের হওয়া) যেতে পারেন না, আয়-উপার্জনও হয় না। এদিন তাদের ব্যবসা হয় না। 
ঈদ কোন দিন আয় আর কোন দিন যায় ইতা (এসব) নিয়ে তেমন ভাবনা-চিন্তা নাই– বললেন বেজ সম্প্রদায়ের লাকি বেগম (৪০)। তিনি বলেন, ‘আগে মা-মই (খালা) ও দাদি-নানিরা নৌকায় থাইক্কা একেক জায়গায় একেক সময় নৌকা ভিড়াইয়া চুড়িবাঙ্গী (চুড়ি-ফিতা) বেইচা জীবন-জীবিকা চালাইতেন। এখন দিনের পরিবর্তন হইছে, গাঙ-বিল ভরি গেছে। আগের মতো অবাদে (অবাধে) নৌকা চলাচলের সুযোগ কমে গেছে। এখন চর এলাকায় সরকারি (খাস) জমিতে ঘর বানাইয়া তারা কয়েকশ পরিবার থাকে। দিন আনি দিন খাই, সকলে মিলেমিশে এক জাগাত এখন বসবাস করি। এই-ই আমাদের আনন্দ।’ 
সিরামিকের থালা-বাটি, কাচের গ্লাস গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন মাহফুজা বেগম (৫০)। তিনি জানান, তাঁর ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাঁকে ঈদ উপলক্ষে একটা শার্ট-কিংবা প্যান্ট কিনে দিতে হবে। না হলে বন্ধুদের কাছে শরমিন্দা (লজ্জা) পাবে ছেলে। 
ব্যবসায় আগের সুদিন নেই জানিয়ে আক্ষেপ জানিয়ে সেবিনা বেগম (৪০) জানান, আগে বেজ সম্প্রদায়ের নারীরা গ্রামে গ্রামে চুড়ি-ইমিটেশন সামগ্রী বিক্রির জন্য বেরিয়ে গেলে তাদের স্বামীরা নৌকায় ছেলেমেয়েদের দেখভাল করতেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায় এবং স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠায় সংসারে আয় বাড়তে তাদের স্বামীরাও নানা পেশায় জড়িয়েছেন। ছাতা মেরামত, মাছ ধরাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন পরিবারের পুরুষরা। এতেও পরিবারের ভরণ-পোষণে কষ্ট হয়। ছেলেমেয়ের জন্য ঈদে নতুন কাপড় কেনা দূরে থাক, একটু সেমাই আর মুরগির মাংস দিয়ে খাওয়াতে পারলেই গরিবের আনন্দ। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস পর ব র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ