Samakal:
2025-12-14@07:00:54 GMT

ব্যবসায় সুদিন নেই বেজ নারীদের

Published: 27th, March 2025 GMT

ব্যবসায় সুদিন নেই বেজ নারীদের

আগে ঈদ এলে বেচাকেনা কয়েক গুণ হতো। এখন গ্রামের নারীরা হাট-বাজার তথা শহর থেকে মালপত্র কিনে ফেলেন। তাই আগে থেকে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। কোনো দিন ২-৩শ, কোনো দিন বেশি বেচাকেনা হলে ৪-৫শ টাকা আয় করা যায়। এ আয় দিয়ে নিত্যদিনের খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়ে। জানাচ্ছিলেন বেজ (বেদে) সম্প্রদায়ের নেওয়ারুন বেগম। তিনি বলেন, ‘আমরার মতো গরিব মাইনষের ঈদ-পরব নাই।’ 
নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করা বেজ সম্প্রদায়ের মানুষের পরিবার চলে নারীর উপার্জনে। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় নৌকা ছেড়ে তাদের একাংশ স্থায়ী ঠিকানার সন্ধান পেলেও ভাগ্যের চাকার বদল ঘটেনি। 
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা তীরের নতুনবস্তী গ্রামের খাসভূমিতে বসবাস করছে কয়েকশ বেজ পরিবার। প্রতিদিন সকাল হলেই বিভিন্ন বয়সী শতাধিক নারী মাথায়  পণ্যসামগ্রীর বোঝা নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের উদ্দেশে বের হোন। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চুড়ি-ফিতা, নারীর অন্তর্বাস, কসমেটিক্স, ইমিটেশন ও সিরামিকের তৈজসপত্র। প্রত্যন্ত লোকালয়ে মাথায় বোঝা নিয়ে ঘুরে বিক্রির আয়ে চলে তাদের নিত্যদিনের পারিবারিক খরচ।
বেজ সম্প্রদায়ের এমন এক নারী ফুলতেরা বেগম (৬০)। তিনি জানান, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা তিনি। গত ২০ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর চর এলাকায় বসবাস করে আসছেন। প্রতিদিনের জীবন সম্পর্কে ফুলতেরা বেগম বলেন, ‘রাত পোহাইলে কেমনে ভাত চাইট্টা (অল্প-স্বল্প) খাইয়া মাথায় বোঝা লইয়া বাইর হইতাম এই চিন্তায় থাকি। হাঞ্জা (সন্ধ্যা) হইলে বাড়িত আইয়া রান্না-ভারা করে জামাই (স্বামী), হুরুতারে (ছেলে-মেয়ে) খাওয়াইয়া কেমনে চাটিত (বিছানায়) পড়তাম এটাই চিন্তা থাকে। শরীর এর বাইরে অন্য কিছু সায় দেয় না।’ 
ঈদ উদযাপনের বিষয়ে কথা হয় এ সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গে। তারা একই সুরে বলেন, নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তাদের আবার ঈদের আনন্দ! ওইদিন তারা গাঁওয়ে (ব্যবসার উদ্দেশে গ্রামে বের হওয়া) যেতে পারেন না, আয়-উপার্জনও হয় না। এদিন তাদের ব্যবসা হয় না। 
ঈদ কোন দিন আয় আর কোন দিন যায় ইতা (এসব) নিয়ে তেমন ভাবনা-চিন্তা নাই– বললেন বেজ সম্প্রদায়ের লাকি বেগম (৪০)। তিনি বলেন, ‘আগে মা-মই (খালা) ও দাদি-নানিরা নৌকায় থাইক্কা একেক জায়গায় একেক সময় নৌকা ভিড়াইয়া চুড়িবাঙ্গী (চুড়ি-ফিতা) বেইচা জীবন-জীবিকা চালাইতেন। এখন দিনের পরিবর্তন হইছে, গাঙ-বিল ভরি গেছে। আগের মতো অবাদে (অবাধে) নৌকা চলাচলের সুযোগ কমে গেছে। এখন চর এলাকায় সরকারি (খাস) জমিতে ঘর বানাইয়া তারা কয়েকশ পরিবার থাকে। দিন আনি দিন খাই, সকলে মিলেমিশে এক জাগাত এখন বসবাস করি। এই-ই আমাদের আনন্দ।’ 
সিরামিকের থালা-বাটি, কাচের গ্লাস গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন মাহফুজা বেগম (৫০)। তিনি জানান, তাঁর ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাঁকে ঈদ উপলক্ষে একটা শার্ট-কিংবা প্যান্ট কিনে দিতে হবে। না হলে বন্ধুদের কাছে শরমিন্দা (লজ্জা) পাবে ছেলে। 
ব্যবসায় আগের সুদিন নেই জানিয়ে আক্ষেপ জানিয়ে সেবিনা বেগম (৪০) জানান, আগে বেজ সম্প্রদায়ের নারীরা গ্রামে গ্রামে চুড়ি-ইমিটেশন সামগ্রী বিক্রির জন্য বেরিয়ে গেলে তাদের স্বামীরা নৌকায় ছেলেমেয়েদের দেখভাল করতেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায় এবং স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠায় সংসারে আয় বাড়তে তাদের স্বামীরাও নানা পেশায় জড়িয়েছেন। ছাতা মেরামত, মাছ ধরাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন পরিবারের পুরুষরা। এতেও পরিবারের ভরণ-পোষণে কষ্ট হয়। ছেলেমেয়ের জন্য ঈদে নতুন কাপড় কেনা দূরে থাক, একটু সেমাই আর মুরগির মাংস দিয়ে খাওয়াতে পারলেই গরিবের আনন্দ। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস পর ব র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

পানবোঝাই পিকআপ ভ্যান উল্টে দুজন নিহত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া এলাকায় পানবোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান উল্টে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন কমল চৌধুরী (৫৩) ও সমীর চৌধুরী (৫৪)। আহত হয়েছেন উজ্জ্বল চৌধুরী (৪৯)। এর মধ্যে সমীর চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার পশ্চিম দেওয়াননগর এলাকায়। কমল চৌধুরী ও উজ্জ্বল চৌধুরীর বাড়ি পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও এলাকায়।

হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, হতাহত ব্যক্তিরা পান ব্যবসায়ী। তাঁরা চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও এলাকা থেকে একটি পিকআপ ভ্যানে পান বোঝাই করে মিরসরাই উপজেলার মিঠাছড়া বাজারে যাচ্ছিলেন। রাত ১০টার দিকে তাঁদের পিকআপ ভ্যানটি সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিকআপটি উল্টে খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পর তিনজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। পিকআপ ভ্যানের চালক দুর্ঘটনার পর গাড়ি রেখে পালিয়ে গেছেন।

বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মোমিন দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তিদের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ