জাহাঙ্গীরনগরে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের আয়োজনের প্রতিবাদে মানববন্ধন
Published: 20th, April 2025 GMT
মহাপরিকল্পনা ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের আয়োজনের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন একদল শিক্ষার্থী। আজ রোববার বিকেলে ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের পেছনে গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য বরাদ্দ করা স্থান ও সবুজে ঘেরা ‘সুইজারল্যান্ড’ এলাকায় প্ল্যাকার্ড হাতে তাঁরা মানববন্ধন করেন।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পেছনে ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সামনের জঙ্গলের গাছ কেটে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের আয়োজন সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে আজ সকালে প্রথম আলো অনলাইনে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার গাছে কেটে ভবনের আয়োজন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বিকেলে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের হাতে ‘শিয়াল, সিভেট, গুইসাপ, প্রশাসনকে দেবে অভিশাপ’, ‘দেড় শ গাছের কান্না, জাবি প্রশাসন শুনবে না’, ‘অবিলম্বে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন টেন্ডার আহ্বান কর’, ‘লেকচার থিয়েটার থাকবে ফাঁকা, সব বিভাগের আলাদা ভবন লাগবে কাকা’সহ বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রশাসনে। মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডার নিয়ে টালবাহানা, যত্রতত্র গাছ কাটার আয়োজন ও লেকগুলোকে মাঠ হতে দেওয়াসহ নানা কাজে প্রশাসনের চটুলতা দেখা যাচ্ছে। আমরা চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রশাসন যত্রতত্র শপিং লিস্ট উন্নয়ন না করে মাস্টারপ্ল্যানের ভিত্তিতে কাজ করুক, লেকগুলো খননের কাজ শুরু করুক।’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সামনের জঙ্গলে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে ওই স্থানে সুতা টাঙিয়ে লাল পতাকা ঝুলিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানটিতে ভবন নির্মাণ করা হলে অন্তত ৬০টি গাছ কাটা পড়বে। এর আগে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের পাশের জলাশয় ভরাট করে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের উদ্যোগ নেয় আগের প্রশাসন। শিক্ষার্থী ও পরিবেশবিদদের বাধার মুখে ওই স্থান থেকে সরে আসে বর্তমান প্রশাসন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভবন ন র ম ণ র জ হ ঙ গ রনগর ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
১৫ শর্তে দুই দিনের জন্য মাদারীপুরে কুন্ডুবাড়ির মেলার অনুমতি দিল প্রশাসন
মাদারীপুরের কালকিনিতে দীপাবলি ও কালীপূজা উপলক্ষে প্রায় আড়াই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ির মেলা দুই দিনের জন্য শুরু হচ্ছে। এর আগে মেলা বন্ধের জন্য একটি পক্ষ মানববন্ধন, লিখিত অভিযোগ ও নানা বাধা সৃষ্টি করে, যা নিয়ে জেলাজুড়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এসবের মধ্যে রোববার বিকেলে ১৫টি শর্ত দিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দুই দিনের জন্য মেলার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। যদিও আগে পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে বসত এই মেলা।
মঙ্গলবার মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আজ সোমবারই শুরু হয়ে গেছে কুন্ডুবাড়ির ঐতিহ্যবাহী এই মেলা। মেলা ঘিরে গত শুক্রবার আসতে শুরু করেছেন দোকানিরা। পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ভিড় বাড়তে শুরু করেছে মেলা প্রাঙ্গণে।
আজ দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক–সংলগ্ন কালকিনি উপজেলার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে গোপালপুর পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে দোকানপাট। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঠের আসবাবের সমারোহ ঘটেছে এই মেলায়। মেলায় ফরিদপুর, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন।
দর্শনার্থী, ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, এ বছর মেলায় দুই শতাধিক বিভিন্ন স্টল বসেছে। মেলায় কাঠের তৈরি আসবাব, বেতের তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, শিশুদের খেলনা, মাটির পণ্য, বিভিন্ন প্রকার খাবারের দোকানে শিশু, নারীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড় পড়েছে।
মাদারীপুর সদর থেকে আসা দর্শনার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেলায় কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যই আছে। দামটা এবার বেশি মনে হচ্ছে। মেলার পরিবেশ বেশ গোছানো। নিরাপত্তাও ভালো। পরিবার নিয়ে আবারও মেলায় এসে কেনাকাটা করব। আপাতত সব দেখে গেলাম।’
উপজেলা প্রশাসন, আয়োজক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি ও কালীপূজা উৎসব ঘিরে কালকিনি উপজেলার ভূরঘাটা এলাকায় কুন্ডুবাড়ি মেলার আয়োজন করা হয়। প্রায় ২৫০ বছর ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হলেও দুই বছর ধরে বন্ধ করতে একটি মহল নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ বছর মেলায় অশ্লীলতা, চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়াসহ একাধিক অভিযোগ এনে ১৬ অক্টোবর কালকিনির ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয় আলেম সমাজের একটি অংশ। পরে এটি নিয়ে উপজেলা ও জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
তবে কালকিনির ভূরঘাটা কুন্ডুবাড়ি কালীমন্দির কমিটির আবেদনের পরিপেক্ষিতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়। এ বছর আগামীকাল মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিন চলবে ঐহিত্যবাহী এই মেলা।
প্রশাসন সূত্র বলছে, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় ১৫টি বিধিনিষেধ করা হয়েছে। এর মধ্যে আসামাজিক কর্মকাণ্ড বন্ধ, জুয়া-মাদক নিষেধ, উচ্চ স্বরের শব্দযন্ত্র পরিহার, অবৈধ পণ্য কেনাবেচা বন্ধ, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ওপর দোকানপাট বসানো যাবে না, রাত ১১টার পর মেলায় দর্শনার্থী প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিহার করতে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ উল আরেফিন বলেন, ‘মেলা সংস্কৃতির অংশ। আর যেহেতু কুন্ডুবাড়ির মেলাটি ঐতিহ্যবাহী, তাই মেলাটি বন্ধের পক্ষে নয় প্রশাসন। মেলা বন্ধ নিয়ে একটি পক্ষ মানববন্ধন করে। লিখিত অভিযোগও করে। যেসব অভিযোগে মেলা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছিল, সেসব কর্মকাণ্ড মেলায় কখনোই করতে দেওয়া হবে না। মেলা ও মন্দির কমিটি, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মেলা সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে। মেলায় আগত দোকানি, দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে প্রশাসন।’
কালকিনির ভূরঘাটা কুন্ডুবাড়ি কালীমন্দিরের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি স্বপন কুমার কুন্ডু বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের কাছে মেলার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। পরে প্রশাসন নানান দিক বিবেচনা করে দুই দিনের মেলার অনুমতি দিয়েছে। একসময় মেলা পাঁচ থেকে সাত দিন অনুষ্ঠিত হতো। মেলার সময়সীমা বাড়ানো হলে ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপকার হয়। এই পুরোনো মেলাকে ঘিরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও স্থানীয় লোকজন বেশ সহযোগিতা করেন। সবকিছু মিলিয়ে প্রতিবছর কুন্ডুবাড়ি মেলা মিলনমেলায় পরিণত হয়।’