মাতারবাড়ীতে ওরিয়ন গ্রুপের কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবি
Published: 6th, May 2025 GMT
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ওরিয়ন গ্রুপের প্রস্তাবিত ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাঁধে নতুন করে ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা ‘ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা’ চাপানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ‘থ্রি জিরো’ নীতির সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোটের (বিডব্লিউজিইডি) সদস্যসচিব হাসান মেহেদী। তিনি বলেন, বিতর্কিত আইনের অধীন বাতিল প্রযুক্তি দিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের এ চুক্তি পুরোপুরি অবৈধ।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকিতে পড়বে দাবি করে হাসান মেহেদী বলেন, আশপাশের এলাকায় প্রতিবছর কমপক্ষে ১ হাজার ৩২৮ টন ফ্লাই অ্যাশ এবং ১৩৩ টন বটম অ্যাশ ছড়িয়ে পড়বে; যা বক্ষব্যাধি ও ক্যানসারের অন্যতম কারণ। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে বছরে ৭০০ মিলিয়ন টন গরম পানি সমুদ্রে নিষ্কাশিত হবে। ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও জুপ্ল্যাঙ্কটন ধ্বংস হয়ে যাবে।
হাসান মেহেদী বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে প্রতিবছর ৪১ লাখ ৩৮ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড, ১ হাজার ৭৭৩ টন কার্বন মনো–অক্সাইড, ১ হাজার ২৭৭ টন নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং ৪৯৬ টন সালফার অক্সাইডের নিঃসরণ হবে। এ দূষণ মানুষের স্বাস্থ্য ও ফসলের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানিতে প্রতিবছর ১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা এবং ২৫ বছরে ৩৯ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা খরচ হবে। শুধু কয়লা কেনার টাকা দিয়েই ৬৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিবছরের ক্যাপাসিটি চার্জের ২ হাজার ২০৩ কোটি টাকা, ২৫ বছরে ৫৫ হাজার ৮৪ কোটি টাকার ব্যয় সাশ্রয় হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর ওয়াসিউর রহমান বলেন, ‘শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রভাব অত্যন্ত বিপজ্জনক। মানুষের ক্ষতি করে এমন উন্নয়ন চাই না। তাই ওরিয়নের কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলে এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধান উপদেষ্টার ‘থ্রি জিরো’ নীতির অন্যতম স্তম্ভ ‘জিরো কার্বন’ নিশ্চিতে কয়লাসহ সব ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিষিদ্ধ করা এবং সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৫টি দাবি উপস্থাপন করা হয়।
দাবিগুলো হচ্ছে অবিলম্বে ওরিয়নের মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের ত্রুটিপূর্ণ ইআইএ বাতিল, নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যর্থ হওয়ায় ওরিয়নের সঙ্গে ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত পিপিএ বাতিল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ওরিয়ন পাওয়ারের ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব বাতিল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনাবিরোধী ইজারা বাতিল করে সরকারি ২ হাজার একর জমিতে অতি দ্রুত সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করার প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ‘থ্রি জিরো’ নীতি বাস্তবায়ন।
উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) অপারেশন কো-অর্ডিনেটর মাহবুব আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন একশনএইডের প্রতিনিধি হামিদুর রহমান ও সংশপ্তকের উপপরিচালক অগ্রদূত দাসগুপ্ত।
যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিডব্লিউজিইডি ও ক্লিন। সহ–আয়োজক বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), মহেশখালী জনসুরক্ষা মঞ্চ এবং সংশপ্তক। আগামী শনিবার (১০ মে) মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ বন্ধের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প
ইয়েমেনে বোমা হামলা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে তারা আর লড়াই করতে চায় না। আমরা তাদের এ প্রতিশ্রুতিকে সম্মান জানাব এবং বোমাবর্ষণ বন্ধ করব। হুতিরা আত্মসম্পর্ণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের প্রতিশ্রুতি বিবেচনায় নেব। হুথিরা জানিয়েছে, তারা আর জাহাজ ধ্বংস করবে না। আর আমরা এটির জন্যই বোমাবর্ষণ করছিলাম। আমি মনে করি এটি একটি ইতিবাচক বিষয়। তারা সমুদ্রে চলা অনেক জাহাজ উড়িয়ে দিচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের ওপর এ মুহূর্ত থেকে বোমা হামলা বন্ধ করে দেবে। খবর আলজাজিরার
গত মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন জায়গায় বোমাবর্ষণ শুরু করে মার্কিন সেনারা। হুতিরা ফিলিস্তিনিদের পক্ষ হয়ে লোহিত সাগর ও বাব আল-মান্দাব প্রণালীসহ বিভিন্ন জায়গায় দখলদার ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছিল। তবে তারা যেন এসব হামলা না চালাতে পারে সেজন্য হুতিদের অবকাঠামো লক্ষ্য করে ব্যাপক পাল্টা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। পরবর্তীতে ওমান জানায়, তাদের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও হুতিদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং হুতি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের এ আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ কারও ওপর এবং লোহিত সাগর ও বাব-আল মান্দাব প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের ওপর হামলা চালাবে না। এরমাধ্যমে জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক শিপিং সুন্দরভাবে হওয়া নিশ্চিত হয়েছে। তবে হুতিরা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি।