ছেলে থাকেন ঢাকায়, মায়ের পোকা ধরা লাশ মিলল ঘরে
Published: 15th, May 2025 GMT
রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার মাস্টারপাড়া গ্রামের একচালা টিনের ঘরে বছর পাঁচেক ধরে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছিলেন ঊর্মিলি বেগম (৬০)। স্বামী তোজাম্মেল হোসেন নিরুদ্দেশ, ছেলে থাকেন ঢাকায়। তিনি একাই রান্না করে খেতেন। স্বজনেরা কিংবা আশপাশের কেউ সেভাবে খোঁজখবর রাখতেন না। আগে মাঝেমধ্যে গ্রামে অন্যের বাড়িতে কাজ করলেও বয়স বেড়ে যাওয়ায় কুলাতে পারতেন না। একমাত্র ছেলে প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠাতেন, তা দিয়েই চলতেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিবেশীরা ঘরের দরজা ভেঙে তাঁর লাশ উদ্ধার করেন। প্রতিবেশী রেজাউল ইসলাম ও তহমিনা বেগম জানান, গতকাল বুধবার বিকেল থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। রাত কাটানোর পরে দুর্গন্ধ আরও বেড়ে যায়। উৎকণ্ঠিত হয়ে আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রতিবেশী কয়েকজন ঊর্মিলির ঘরের দরজার সামনে গিয়ে বুঝতে পারেন, ভেতর থেকে দুর্গন্ধ আসছে। কিন্তু কাঠের দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। পরে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে খাটের ওপরে লাশ দেখতে পান। তাতে পোকা ধরে গেছে।
প্রতিবেশীরা জানান, ঊর্মিলির জীবন ছিল নিঃসঙ্গতায় ভরা। ঘরে একা থাকতেন। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়তেন। দিনে ঘরের আশপাশে একা বসে কাটাতেন, কখনো বিড়বিড় করে কথা বলতেন। কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না। স্বজনেরাও তেমন খোঁজখবর রাখতেন না।
ঊর্মিলি বেগম ঠিক কবে মারা গেছেন, তা প্রতিবেশীরা কেউ জানেন না। প্রতিবেশী তহমিনা বেগম বলেন, সর্বশেষ গত রোববার দুপুরে তিনি বৃদ্ধ ঊর্মিলিকে তাঁর ঘরের পাশে একা বসে থাকতে দেখেছেন। এরপর আর দেখেননি। স্থানীয় রেজাউল করিম বলেন, ‘লাশ পচে দুর্গন্ধ না ছড়ালে আমরা বুঝতেই পারতাম না ঊর্মিলি বেগম মারা গেছেন। আমরা ধারণা করছি, তাঁর মৃত্যুটা ঘরের ভেতরে স্বাভাবিকভাবে হয়েছে।’
ঊর্মিলির একমাত্র ছেলে আনারুল ইসলাম বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছেলে আনারুল ইসলাম ঢাকা থেকে দুপুরে বদরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, তাঁর মা একা থাকতেই পছন্দ করতেন। বাবার সঙ্গে তাঁর কিংবা মায়ের যোগাযোগ ছিল না। প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মাকে পাঠাতেন। এই টাকা খরচ করে মা একা রান্না করে খেতেন।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ঘরের ভেতরে ঊর্মিলি বেগমের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। লাশের সুরতহালের সময় তাঁর শরীরে কোনো আঘাত বা জখমের চিহ্ন পাননি। ঠিক কবে ওই নারী মারা গেছেন, প্রতিবেশীরা কেউ জানেন না। লাশে পচনসহ পোকা ধরেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চার থেকে পাঁচ দিন আগে ওই নারী মারা গেছেন। তাঁর একমাত্র ছেলে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছেন। তিনি আসার পর কথা বলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ঠেকান শিক্ষক ইকবাল
বিদ্যালয়ে না গিয়ে বাবার সঙ্গে পেঁয়াজখেতে কাজ করছিল রাফিউল ইসলাম (১০)। বাবাও খুশি সহযোগী হিসেবে ছেলেকে কাছে পেয়ে। খবর পেয়ে মাঠে হাজির হন রাফিউলের শিক্ষক ইকবাল হোসেন। মাঠ থেকে তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। এখন সে নিয়মিত ছাত্র।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কোনাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন এভাবে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে ফেরান। পাশাপাশি দুর্বল শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনায় ভালো হয়, সেই চেষ্টা করেন।
সহকর্মী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কোনাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন ইকবাল হোসেন। এরপর বিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশ ভালো হয়। প্রত্যেক শিক্ষকের প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার ‘হোম ভিজিট’ করার নিয়ম থাকলেও তিনি একাধিকবার ভিজিট করেন। বিদ্যালয়ের টিফিনের সময় ছাড়াও ছুটির পর পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকা ও অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি যান তিনি। সহকর্মীদেরও বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন কোন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ও পড়ালেখায় দুর্বল, খোঁজখবর নিয়ে টিফিনের সময় ও বিদ্যালয় ছুটির পর তাদের বাড়ি যান ইকবাল হোসেন। বাড়িতে না থাকলে যেখানে শিক্ষার্থী থাকে, সেখানে যান। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অনেক ক্ষেত্রে শিশুশ্রমে ব্যবহার করা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে শিশুদের শ্রেণিকক্ষে ফেরান। কাজটি তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে করে আসছেন।
প্রধান শিক্ষকের হোম ভিজিট ও দুর্বলদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার সুফল পেতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। একসময়ের অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা এখন নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছে। পড়ালেখায়ও উন্নতি হয়েছে বলে অভিভাবক ও শিক্ষকেরা বলছেন।
কোনাবাড়িয়া গ্রামের অভিভাবক রেনুকা খাতুন বলেন, তাঁর ছেলে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। জ্বরের কারণে একটানা দুই দিন স্কুলে যেতে পারেনি। পরদিন প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন কিছু খাবার নিয়ে বাড়িতে হাজির হন। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষকেরা এভাবে বাড়ি এসে খোঁজখবর নেওয়ায় তাঁরা খুশি।
প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, হোম ভিজিটের নির্দেশনা আছে। তিনি কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে না এলে বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেন। টিফিনের সময় ও বিদ্যালয় ছুটি শেষে অনুপস্থিত ও দুর্বল শিক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে কাজটি করেন। বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া ছাড়া বিদ্যালয়ে এনে দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রতি আলাদা যত্ন নেন। এসব করতে ভালো লাগে। তাঁর এ কাজে সহকর্মী, শিক্ষা কর্মকর্তা ও অভিভাবকেরা সহযোগিতা করেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, টিফিনের সময় শিক্ষকদের তিন মাসে একবার হোম ভিজিটের নির্দেশনা আছে। কোনাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়মিত কাজটি করেন, যা প্রশংসনীয়। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। তাঁকে দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।