বাংলাদেশ রেলওয়ে এক টাকা আয় করতে গিয়ে খরচ করছে আড়াই টাকার বেশি। সরকারের এই পরিবহন সংস্থা লোকসান দিচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। আয়-ব্যয়ের এই ফারাক কমাতে একগুচ্ছ কর্মসূচি সামনে এনেছে রেলওয়ে। লক্ষ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে এক টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় দুই টাকার নিচে নামিয়ে আনা। দীর্ঘ মেয়াদে রেলওয়েকে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে চায় সরকার।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, ব্যয় কমাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। জনগণের ওপর চাপ না বাড়িয়ে রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় কমানো, লোকসানি পথে (রুট) ট্রেনের চলাচল কমিয়ে লাভজনক পথে তা বাড়ানো; রেলের বিপুল ভূসম্পত্তি ইজারা (লিজ) দিয়ে আয় করার ওপর জোর দিতে চায় রেলওয়ে। এর বাইরে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে অপচয় কমানোরও লক্ষ্য থাকছে।

রেলের হিসাবে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত—ছয় মাসে রেলওয়ে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় করেছে ৮৩৬ কোটি টাকা। এ সময় ব্যয় করেছে ২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবছর গড়ে দুই হাজার কোটি বা এর বেশি লোকসান দিচ্ছে রেলওয়ে। ২০০৫ সালে ১ টাকা আয়ের বিপরীতে ১ টাকা ৪৬ পয়সা ব্যয় করত রেলওয়ে।

রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, স্বাধীনতার পর ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে একবারই লাভ করেছিল রেলওয়ে। ওই অর্থবছরে সংস্থাটি ১ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় করেছিল ৯৫ দশমিক ৯ পয়সা। এরপর দিন দিন আয়–ব্যয়ের ফারাক বেড়েছে।

আয়-ব্যয়ের অনুপাতের ক্ষেত্রে রেল দৈনন্দিন কাজে মূলত যে ব্যয় করে, সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে বেতন-ভাতা, অবসরে যাওয়া কর্মীদের প্রাপ্য সুবিধা, জ্বালানি খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। রেলের আয়ের উৎস মূলত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন। এর বাইরে নিজেদের ভূমি ইজারা দিয়ে কিছু আয় করে থাকে রেলওয়ে।

কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির আয় ও ব্যয়ের অনুপাত ‘অপারেটিং রেশিও’ দিয়ে নির্ধারণ করা যায়। এর মাধ্যমে রেলব্যবস্থা কতটা দক্ষ ও লাভজনক, তা বোঝা যায়। অপারেটিং রেশিও মূলত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট ব্যয়কে মোট আয় দিয়ে ভাগ করা। অপারেটিং রেশিও যত বেশি হবে, ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালন দক্ষতা তত দুর্বল হিসেবে গণ্য করা হয়।

আয়-ব্যয়ের অনুপাতের ক্ষেত্রে রেল দৈনন্দিন কাজে মূলত যে ব্যয় করে, সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে বেতন-ভাতা, অবসরে যাওয়া কর্মীদের প্রাপ্য সুবিধা, জ্বালানি খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। রেলের আয়ের উৎস মূলত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন। এর বাইরে নিজেদের ভূমি ইজারা দিয়ে কিছু আয় করে থাকে রেলওয়ে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেলের পরিচালন খাতে প্রতিবছর কমবেশি ১০ শতাংশ হারে ব্যয় বেড়েছে। সে তুলনায় আয় বাড়ছে গড়ে ৫ শতাংশের কম। রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিমেন্ট, সার, পাট, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্য পরিবহনে উল্লেখযোগ্য আয় করে আসছিল। ধীরে ধীরে এসব পণ্যের পরিবহন কমছে। পণ্য পরিবহন বাড়ানোর বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে রেলের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই ছিল বিদেশি ঋণ। এর মধ্যে পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথ (রেললিংক), চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণসহ বড় বড় প্রকল্পের ঋণের সুদসহ কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই বিপুল ব্যয়ের বিষয়টি অবশ্য অপারেটিং রেশিওতে বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আয়-ব্যয়ের এই নেতিবাচক ফারাক দিনের পর দিন বহন করা রাষ্ট্রের জন্য কঠিন। এর প্রতিকার খুঁজে বের করতেই হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন রেললাইন, ইঞ্জিন-কোচ কেনা হয়েছে বিপুল টাকায়। এগুলো আগামী দিনে পুরোনো হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় বাড়বে। তখন আয়-ব্যয়ের ফারাক আরও বাড়তে পারে।

রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিমেন্ট, সার, পাট, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্য পরিবহনে উল্লেখযোগ্য আয় করে আসছিল। ধীরে ধীরে এসব পণ্যের পরিবহন কমছে। পণ্য পরিবহন বাড়ানোর বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ব্যয় সংকোচনের নানা উদ্যোগ

সড়ক ও রেলের অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুল ব্যয়ে অদরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রকল্পের ব্যয় দফায় দফায় বৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনা আছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে প্রকল্পের ব্যয় কমাতে তৎপর হয়েছে। এর বাইরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দৈনন্দিন ব্যয় কমানোরও নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর রেলওয়ে ব্যয় সংকোচনের কিছু খাত চিহ্নিত করেছে।

রেলের আয় বাড়ানো এবং ব‍্যয় হ্রাসে করণীয় নির্ধারণে সংস্থাটির বিভিন্ন বিভাগ থেকে লিখিত মতামত নেওয়া হয়। এরপর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহাপরিচালক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে গত ছয় মাসে একাধিক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। আয় বাড়ানোবিষয়ক প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য গত ৩০ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশন, রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আয়-ব্যয়ের এই নেতিবাচক ফারাক দিনের পর দিন বহন করা রাষ্ট্রের জন্য কঠিন। এর প্রতিকার খুঁজে বের করতেই হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন রেললাইন, ইঞ্জিন-কোচ কেনা হয়েছে বিপুল টাকায়। এগুলো আগামী দিনে পুরোনো হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় বাড়বে। তখন আয়-ব্যয়ের ফারাক আরও বাড়তে পারে।বুয়েট পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেলওয়ে পরিচালনা খাতে মোট ব্যয় করেছে ৩ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরজনিত সুবিধা বা পেনশনের পেছনে ব্যয় হয়েছে ৯৪৬ কোটি টাকা। এ ব্যয় কমানোর সুযোগ নেই। তবে রেলওয়ে চাইছে এই ব্যয় নিজস্ব বাজেট থেকে নয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকে যেন পরিশোধ করা হয়। কারণ, সরকারের অন্যান্য দপ্তরের এই সুবিধা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিশোধ করা হয়ে থাকে।

এর বাইরে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা পরিহার এবং মেরামত খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশ–বিদেশে ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাও নিয়েছে সংস্থাটি। রেলসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রাধিকারভুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও নানাভাবে গাড়ি ব্যবহারের রীতি রয়েছে। প্রাধিকারের বাইরে গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করে ব্যয় সংকোচনের চিন্তা আছে রেলওয়ের। এ ক্ষেত্রে জ্বালানি ও মেরামত খাতে ব্যয় কমবে এবং চালকের বেতন-ভাতা পরিশোধ কমে যাবে। রেলে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় থাকা গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার এবং অস্থায়ী ভিত্তিতে চালক নিয়োগ দিয়ে তা পরিচালনা করা হয়।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, রেলের ভবন, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে ব্যয় সাশ্রয়, রেলের বিভিন্ন কাজ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী শ্রমিক ও কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকৃত প্রয়োজন যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, রেলের ব্যয় কমাতেই হবে। কীভাবে অপচয় কমানো হবে এবং আয় বাড়ানো যায়, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। দ্রুতই কিছু উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত আসবে।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেলওয়ে পরিচালনা খাতে মোট ব্যয় করেছে ৩ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরজনিত সুবিধা বা পেনশনের পেছনে ব্যয় হয়েছে ৯৪৬ কোটি টাকা। এ ব্যয় কমানোর সুযোগ নেই।

যে পথে আয় বৃদ্ধি করতে চায় রেলওয়ে

স্বল্প মেয়াদে আয় বৃদ্ধির জন্য কতগুলো উদ্যোগের কথা বলছে রেলওয়ে। এর মধ্যে রয়েছে—মালামালের পরিবহন বাড়াতে মিটারগেজ ও ব্রডগেজের জন্য ২৬টি ইঞ্জিন ও চালক যুক্ত করা। আন্তনগর ট্রেনগুলোর চলাচলের পথ মূল্যায়ন করা। অর্থাৎ যেসব পথে যাত্রী কম, সেই পথ থেকে ট্রেন কমিয়ে অন্য পথে চালানো।

রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা–কক্সবাজার রেলপথে যাত্রীদের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এই রেলপথে চাইলে আরও কিছু আন্তনগর ট্রেন চালু করা যায়। কম আয়ের লোকজনের জন্য চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন নেই। কিছু মেইল ট্রেন চালু করা গেলে মানুষের উপকার হবে, আয়ও বাড়বে।

বর্তমানে অধিকাংশ আন্তনগর ট্রেন ১০ থেকে ১৪টি কোচ দিয়ে পরিচালনা করা হয়। এর ফলে ইঞ্জিন ও লোকবলের সদ্ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ জন্য প্রতিটি আন্তনগর ট্রেনে ১৮ থেকে ২০টি বগি নিয়ে চলাচল নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এতে জ্বালানি খরচ না বাড়িয়ে আয় বাড়ানো সম্ভব।

রেলওয়ের অপটিক্যাল ফাইবারের কিছু কিছু অংশ অব্যবহৃত আছে। সেগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার চিন্তা করছে রেলওয়ে। গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন ও ট্রেনের ভেতর টিকিট পরীক্ষা জোরদার করা হবে, যাতে বিনা টিকিটে যাত্রী যাতায়াত করতে না পারে। অবৈধভাবে দখলে থাকা ভূমি উদ্ধার করে তা বিভিন্ন মেয়াদে ইজারা দিয়েও আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব।

সরকারি নথি বলছে, সারা দেশে রেলওয়ের মোট জমি আছে প্রায় ৬২ হাজার একর। এর মধ্যে কাগজে-কলমে দখলে আছে ৫৮ হাজার ৬০৬ একর। প্রায় ৩ হাজার ৬১৪ একর জমি বেদখল হয়ে আছে। তবে রেলের যেসব কর্মকর্তা জমিজমা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের ধারণা, বেহাত হওয়া জমির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা–কক্সবাজার রেলপথে যাত্রীদের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এই রেলপথে চাইলে আরও কিছু আন্তনগর ট্রেন চালু করা যায়। কম আয়ের লোকজনের জন্য চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন নেই। কিছু মেইল ট্রেন চালু করা গেলে মানুষের উপকার হবে, আয়ও বাড়বে।

মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খাদ্যশস্য, সার, জ্বালানিসহ বিভিন্ন সরকারি মালামাল রেলের মাধ্যমে পরিবহন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে চায় রেলওয়ে। ট্রেনের ভেতরে, স্টেশনে ও রেলের জমিতে বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যবস্থা করে আয় বাড়ানোরও লক্ষ্য রয়েছে। আগে রেলের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ জরিমানা আদায় করতেন। এ ক্ষমতা এখন রেলের কর্মকর্তাদের নেই। তা পুনরায় চালু করার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত চায় রেলওয়ে। যমুনা রেলসেতু চালু হওয়ার ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে রেলপথে মালামাল পরিবহনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর জন্য ঢাকার কাছাকাছি তেজগাঁও ও টঙ্গী রেলস্টেশনে মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য জায়গা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এর বাইরে আয় বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদি ৯টি উদ্যোগের কথা বলছে রেলওয়ে। এর মধ্যে রয়েছে রেল পরিচালনায় সরাসরি যুক্ত নয়, এমন জমিতে বহুতল বিপণিবিতান, আবাসিক হোটেল ও অফিস ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া। বেশি সংখ্যায় ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যে ৮০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি ৫০০টি ব্রডগেজ ও মিটারগেজ কোচ এবং দুই শতাধিক মালামাল পরিবহনের কনটেইনার সংগ্রহ করা হবে। ভবিষ্যতে ঢাকার আশপাশে কমিউটার ট্রেন বাড়াতে এর ২৫০টি কোচ সংগ্রহের কথাও বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে খালাস হওয়া মালামালের ৮০ শতাংশই ঢাকামুখী। এ জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুর বা মৌচাক, মুন্সিগঞ্জের নিমতলী, ঢাকার তেজগাঁও ও গাজীপুরের টঙ্গীতে আধুনিক সুবিধাসংবলিত মালামাল রাখার জায়গা তৈরির কথা বলা হয়েছে। পদ্মা সেতু হয়ে মোংলা বন্দরের মালামাল পরিবহন বাড়াতে নিমতলীতে আরেকটি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

দীর্ঘ মেয়াদে আরও কিছু রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কথা বলছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে কুমিল্লার লাকসাম হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নতুন লাইন নির্মাণ করা। এতে রেলপথে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার কমে যাবে। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত শুধু মালামাল পরিবহনের জন্য লাইন নির্মাণ করা।

কানাডার রেলব্যবস্থা গত বছর প্রতি ১ ডলার আয় করতে ৬৩ সেন্ট খরচ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রেল পরিচালনা করা হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই আয়ের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম খরচ করে থাকে।

অনেক দেশেই রেল লাভজনক

সেবার মান ও লাভজনক বিবেচনায় পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষে ভারতের রেলব্যবস্থা। দেশটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ রুপি আয়ের বিপরীতে ৯৮ দশমিক ৩২ রুপি খরচ করেছে। অর্থাৎ তাদের রেলওয়ে লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। কানাডার রেলব্যবস্থা গত বছর প্রতি ১ ডলার আয় করতে ৬৩ সেন্ট খরচ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রেল পরিচালনা করা হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই আয়ের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম খরচ করে থাকে।

সার্বিক বিষয়ে বুয়েটের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, রেলের আয় বাড়ানোর স্বীকৃত পথ হচ্ছে কনটেইনার ও মালামাল পরিবহন বাড়ানো। রেলের অনেক জমি থেকে আয় আসছে না। সেগুলো ইজারা নিয়ে কিংবা অবৈধভাবে দখল করে প্রভাবশালীরা লাভবান হচ্ছেন, সুবিধা পাচ্ছেন কিছু অসাধু কর্মকর্তা। জমি থেকে বেশি আয় করতে হবে। সর্বোপরি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনতে হবে।

রেল এখনো দূরপাল্লার গণপরিবহন রয়ে গেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক সামছুল হক কমিউটার ট্রেন, সার্কুলার ট্রেন বা শহরকেন্দ্রিক ট্রেন বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এ জন্য মাসিক টিকিটের ব্যবস্থা করা যায়। এতে রেল বেশি পরিমাণে ও অগ্রিম আয় করার সুযোগ পাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ও ম ল ম ল পর বহন ল ইন ন র ম ণ র কর মকর ত পর বহন ব ড় প রকল প র চ য় র লওয় পর বহন র আয় ব দ ধ আয় ব ড় ন ন র জন য র ল র আয় ব সরক র সরক র র র লওয় র ব যবহ র ব যবস থ ল ভজনক আয় করত খরচ কর পর শ ধ র ল পর কম ন র ন র পর লক ষ য য় করত

এছাড়াও পড়ুন:

উৎসবের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে পারে মোহামেডান

অপেক্ষার প্রহর শেষ প্রায়। প্রথমবারের মতো পেশাদার ফুটবল লিগ জয়ের দ্বারপ্রান্তে এখন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। আজ কুমিল্লায় চট্টগ্রাম আবাহনীকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে কার্যত শিরোপার বন্দরে নোঙর করেছে ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালো শিবির।

স্কোরলাইনই বলছে, প্রিমিয়ার লিগ থেকে গত ম্যাচেই অবনমন নিশ্চিত হয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ৩ পয়েন্ট পেতে কোনো সমস্যাই হয়নি মোহামেডানের। ৪ গোলের ২টি করেছেন এমানুয়েল সানডে। বাকি দুই গোলও দুই বিদেশির—দিয়াবাতে ও মোজাফফরভ।

১৮ ম্যাচের লিগে ১৫ ম্যাচ শেষে মোহামেডানের পয়েন্ট ৩৮। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ১৪ ম্যাচে ২৮ পয়েন্টে।

আরও পড়ুননেপালকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ৩৫ মিনিট আগে

পরিস্থিতি এখন এমন—আগামী মঙ্গলবার কুমিল্লায় রহমতগঞ্জকে হারালে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই লিগ শিরোপা ঘরে তুলবে মতিঝিলের ক্লাবটি। তবে আগামীকাল কুমিল্লায় যদি ১৫তম রাউন্ডে ফর্টিস এফসির কাছে আবাহনী হেরে যায়, তাহলে কালই নিশ্চিত হয়ে যাবে মোহামেডানের শিরোপা জয়। তিন ম্যাচ বাকি থাকতে তখন দুই দলের মধ্যে পয়েন্টের ব্যবধান দাঁড়াবে ১০। তাই এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মোহামেডানের। দলটির সমর্থকদের মুখে আগাম বিজয়ের হাসি।

আজকের ম্যাচে ২৯ মিনিটে মোহামেডানকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে। ৪৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমানুয়েল সানডে।

বিরতির পর প্রথম মিনিটেই আরেক বিদেশি মোজাফফরভ দারুণ এক শটে তৃতীয় গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন। ৬০ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোলটি করেন সানডে। ৪-০ হওয়ার পর চট্টগ্রাম আবাহনীর সুমন ৪-১ করেন।

গত পাঁচ মৌসুম ধরে লিগ শিরোপার একচ্ছত্র অধিপতি ছিল বসুন্ধরা কিংসের। এবার তারা ১৪ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা লড়াইয়ে নেই। পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান তিনে। আজ কিংস ১৫তম রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ এফসির। কিংস অ্যারেনায় ম্যাচ শুরু হয়েছে সন্ধ্যা ৬টায়।

আরও পড়ুনমোস্তাফিজ আইপিএলে চলে যাবেন বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচ খেলেই২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ