বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে চলাচলে ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকার লোকজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চারটি স্থানে সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। চারটিরই নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দু’পাশে সড়ক না থাকায় সেগুলো কাজে আসছে না। এতে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চারটি সেতু অকেজো পড়ে আছে। মানুষের চলাচলে ভোগান্তিও বেড়েছে।
একটি প্রকল্পের ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় এবং সড়ক নির্মাণে আলাদা বরাদ্দ না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এতে ভোগান্তির শিকার কুশাহাটা গ্রামের আব্দুস সামাদের ভাষ্য, “আমরা একটি সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন মহলে ধরনা দিয়েছি দীর্ঘদিন। সেতু নির্মাণ করা হলেও দু’পাশে সড়ক না থাকায় এগুলো কাজে আসছে না। সেতু নির্মাণ করা হলেও আমাদের কোনো উপকার হলো না।”
উপজেলার হাটফুলবাড়ি ইউনিয়নের হসপিতলা-কুশাহাটা এলাকায় একটি সেতুর অভাবে এলাকার মানুষ দুর্ভোগের শিকার দীর্ঘদিন ধরে। 
বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। এ কারণে স্থানীয় লোকজনের আবেদনে ৬ কোটি ৫১ লাখ 
১৬ হাজার টাকা ব্যয় ধরে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ১ এপ্রিল।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল। কাজ চলমান অবস্থায় নির্মাণসামগ্রীর 
ব্যয় বেড়ে গেলে আরও প্রায় ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজটি প্রায় এক বছর আগে শেষ হলেও দু’পাশে সড়ক না থাকায় মানুষ চলাচল করতে পারছেন না।
স্থানীয় হাটফুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক মোহাম্মদ বলেন, সেতু মানুষের উপকারে আসতে হলে দু’পাশে সড়ক থাকা জরুরি। সেটি না থাকায় বিপুল টাকা অপচয়ের শামিল হয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফিরোজ কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি রাজিব আহসানের ভাষ্য, ‘আমাদের কাজ ছিল সেতু নির্মাণ করা। সড়কের জন্য বরাদ্দ ছিল না বলে আমরা নির্মাণ করিনি। এতে এলাকার মানুষ সুফল পাচ্ছে না।’
দু’পাশে সড়ক নির্মাণের জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নিতে হবে বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী তুহিন সরকার। তিনি বলেন, সড়ক ছাড়া সেতুটি মানুষ ব্যবহার করতে পারবেন না।
পৌর এলাকার দেলুয়াবাড়ী-কৈয়রপাড়া এলাকায় সড়ক না থাকায় সেখানে নতুন নির্মাণ করা তিনটি ছোট আকারের সেতুও কাজে আসছে না। জানা গেছে, দেলুয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কৈয়রপাড়া জামে মসজিদ পর্যন্ত সড়কটি পুনর্নির্মাণ ও মেরামতের কাজ ফেলে রেখেই ঠিকাদার ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পালিয়ে যান। এতে সড়কের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। ফলে দেলুয়াবাড়ী, কৈয়রপাড়া, নবাদরী, দিঘলকান্দি, আন্দরবাড়ি, ধাপ কুঠিবাড়ীসহ কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে তিনটি সেতু (কালভার্ট) ও দু’পাশে মাটির সড়কের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কের কাজ ২০২৩ সালে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে সেতুগুলোর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।
আন্দরবাড়ি গ্রামের খোকন প্রামাণিক ও কৈয়রপাড়ার ময়েজ উদ্দিন বলছিলেন, সড়ক নির্মাণ না করে কালভার্টগুলো করায় কোনোটিই কাজে আসছে না। আগের চেয়ে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। বন্যার সময় চলাচল করা যায় না। কৃষিজমিতে যেতে পারেন না। ফসল বাড়িতে আনতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন গ্রামের শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ যাতায়াত করে। এখন সবাই কষ্ট পাচ্ছে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মেসার্স শান্ত ইসলাম গ্রুপ কাজটি পেয়েছিল। এ ব্যাপারে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ফয়েজ উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জহিরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার লাপাত্তা হওয়ায় 
মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। প্রকল্পটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ফের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সড়ক নির্মাণ করতে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক ন র ম ণ ন র ম ণ কর প রকল প র জন য এল ক র উপজ ল সরক র সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নকে সাময়িক বরখাস্ত করলেন আদালত, কারণ কী

ফোনের কথাবার্তা ফাঁসের ঘটনায় থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়েছেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত। প্রতিবেশী দেশ কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বিরোধকে ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে ফোনের কথাবার্তা ফাঁসের পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁর পদত্যাগের জোর দাবি উঠেছে। তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানী ব্যাংককে।

গত মে মাসে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিতর্কিত এক সীমান্ত অঞ্চলে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নের সঙ্গে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের ফোনের আলোচনা ফাঁস হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুনথাইল্যান্ডের নতুন ও সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী কে এই পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা১৭ আগস্ট ২০২৪

ফোনে ওই আলোচনায় পেতংতার্ন থাইল্যান্ডের এক সেনা কর্মকর্তার সমালোচনা করেন এবং হুন সেনকে ‘আংকেল’ বলে ডেকে তাঁর প্রতি অতিমাত্রায় নমনীয় আচরণ করেন বলে জনগণের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়। এরপরই পেতংতার্নের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে নামেন মানুষ। সাংবিধানিক আদালতে পিটিশন দায়ের করা হয়।

সাংবিধানিক আদালতে আজ মঙ্গলবার ভোটাভুটি হয়। আদালত ৭-২ ভোটে প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেন। প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত দেশের ভারপ্রাপ্ত নেতার দায়িত্ব পালন করবেন।

থাইল্যান্ডে সেনাবাহিনীর প্রকাশ্যে সমালোচনার সুযোগ নেই বললে চলে। কারণ, দেশটির সেনাবাহিনী রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক প্রভাব বজায় রেখে আসছে। ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

আরও পড়ুনথাই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ২৮ জুন ২০২৫

সাংবিধানিক আদালতে প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন পদচ্যুত হলে ২০২৪ সালের আগস্টে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট। থাইল্যান্ডে তিনিই হচ্ছেন সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৭ বছর। পেতংতার্ন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ফিউ থাই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রার ছোট মেয়ে।

পেতংতার্ন ব্যাংককের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। উং ইং ডাকনামেও পরিচিত পেতংতার্ন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ২০২১ সালে। তখন ফিউ থাই পার্টির ইনক্লুশন অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির প্রধান হন তিনি।

আরও পড়ুনপেতংতার্ন ৩৭ বছরে, কম বয়সে আরও যাঁরা দেশ চালানোর ভার নিয়েছিলেন২০ আগস্ট ২০২৪

২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় সন্তানের মা হন পেতংতার্ন। নির্বাচনে তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় প্রার্থী। পেতংতার্ন থাকসিন পরিবার থেকে সরকারের শীর্ষ পদে আসা তৃতীয় ব্যক্তি। বাবা থাকসিনের পাশাপাশি পেতংতার্নের ফুপু ইংলাক সিনাওয়াত্রাও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আরও পড়ুনথাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নের ২১৭ হাতব্যাগ, ৫০ লাখ ডলারের ঘড়ি০৩ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ