আমরা যুদ্ধ জিতেছি, তবে শান্তি চাই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দাবি
Published: 17th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গতকাল শুক্রবার বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধ জিতেছি, তবে শান্তি চাই।’ একই সঙ্গে তিনি ভারতকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর মতো সহাবস্থানের আহ্বান জানান। ‘অপারেশন বুনইয়ান উম মারসুস’-এর সাফল্য উদ্যাপন উপলক্ষে ইসলামাবাদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করার পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ৬-৭ মে রাতে ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়, যাতে বেসামরিক লোকজন নিহত হয়। এ ঘটনার পরবর্তী এক সপ্তাহে দুই পক্ষ একে অপরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, যার ফলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। দুই দেশের উত্তেজনা যখন চরমে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।
ইউম-ই-তাশাক্কুর বা ধন্যবাদ দিবস উপলক্ষে গতকাল ইসলামাবাদের পাকিস্তান মনুমেন্টে এক জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, তিন বাহিনীর প্রধানসহ বেসামরিক ও সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বক্তব্যের শুরুতে শহীদ ও তাঁদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধে জিতেছি, কিন্তু আমরা শান্তি চাই। আমরা শত্রুকে শিক্ষা দিয়েছি, তবে আমরা আগ্রাসনের নিন্দা করি। আমরা এই অঞ্চলে অন্য উন্নত দেশের মতো শান্তিপূর্ণ ও উন্নয়নশীল পরিবেশ চাই।’
শাহবাজ শরিফ বলেন, ৯ ও ১০ মে রাতে সেনাবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ভারতের আগ্রাসনের ‘সীমা লঙ্ঘনের’ পর একটি পরিমিত প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে সেনাপ্রধান আমাকে সিকিউর লাইনে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সাহেব, অনুমতি দিন, যাতে শত্রুকে এমনভাবে আঘাত করি যে তারা আজীবন মনে রাখে।”’
শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালানোর পর সেনাপ্রধান আবার বলেন, “আমরা জবাব দিয়েছি, এখন আমাদের কাছে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ আসছে। আপনার কী মত?” আমি বলেছি, “যখন শত্রুর মাথা ঘুরে যায়, তখনই আসল আঘাত; তাই এই প্রস্তাব গ্রহণ করুন।”’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রযুক্তি শত্রুকে হতবাক করেছে এবং মিত্রদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সাফল্যের ফলে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত—যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপান পর্যন্ত।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর কোনো বড় শক্তি পাকিস্তানের অগ্রগতির পথ আটকে রাখতে পারবে না। পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত গোটা জাতি এক হয়েছে সেনাবাহিনীর পেছনে দাঁড়িয়ে।’
শাহবাজ আরও বলেন, এই যুদ্ধ কিছুই অর্জন করেনি, বরং দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও সমস্যাই বাড়িয়েছে। একমাত্র সমাধান হচ্ছে আলোচনা—শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর মতো বসে সব বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে, যার মধ্যে প্রধান হলো জম্মু-কাশ্মীর।
শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘যদি আমরা স্থায়ী শান্তি চাই, তাহলে জম্মু-কাশ্মীর ও পানিবণ্টন ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান চাই। একবার এগুলো মিটে গেলে বাণিজ্য, ব্যবসা, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতাসহ বহু সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে ঐতিহ্যবাহী পাগলা গাছের মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের হামছাদী গ্রামে গাছের খুঁটিকে পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এই পূজা করছেন।পূজা উপলক্ষে সেখানে আয়োজন করা হয় মেলা। স্থানীয়রা মেলাটিকে ‘পাগলা গাছের মেলা’ নামেই চেনেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া মেলায় যোগ দিতে আশপাশের এলাকার মানুষ ভিড় করছেন হামছাদী গ্রামে। শনিবার (১৭ মে) শেষ হবে মেলার আনুষ্ঠানিকতা।
প্রতি বছর ৩১ বৈশাখ থেকে জৈষ্ঠ মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়। মূলত ৩১ বৈশাখ দুপুর থেকে হামছাদী গ্রামের বটতলায় মেলার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। মেলার আনুষ্ঠানিকতা পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
আরো পড়ুন:
মঙ্গলবার দিনব্যাপী কবি সুকান্ত মেলা, প্রস্তুতি সম্পন্ন
টাঙ্গাইলে জামাই মেলায় দর্শনার্থীদের ঢল
এলাকাবাসী জানান, ৫০০ বছর আগে হামছাদী গ্রামের ফনি সেন ও সুরেন্দ্র সেন নামের দুই ভাই ঘর তৈরির জন্য বার্মা থেকে ২০টি খুঁটি কিনে আনেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের ১ তারিখ রাতে তারা দুই ভাই স্বপ্নে দেখেন, তাদের কেনা খুঁটি থেকে দুইটি খুঁটি নিজেদের দেবতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। খুঁটি দুইটি পাগল রূপ ধারণ করে তাদের উদ্দেশ্যে বলছিল, আমাকে ঘরের খুঁটির কাজে লাগাবে না। আমি তোমাদের দেবতা। আমাদের উপাসনা কর। এতে তোমাদের মঙ্গল হবে। পাপ থেকে মুক্তি পাবে। রোগ নিরাময় হবে।
এ ঘটনার পরের দিন দুই ভাই বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে একটি পুকুর পাড়ে খুঁটি দুইটি দেখতে পান। এরপর থেকে তারা দুই ভাই খুঁটিগুলোকে দেবতা মনে করে পূজা করতে থাকেন। তখন থেকে ওই এলাকার হিন্দুরা গাছের খুঁটি দুইটিকে প্রতিবছর পহেলা জ্যৈষ্ঠে পূজা করতে শুরু করেন। পরে একটি খুঁটি হারিয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানান, খুঁটিটি পূজামণ্ডপের পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে সারা বছর ডুবিয়ে রাখা হয়। পাগল ভক্তরা প্রতিবছর পুকুর থেকে খুঁটিটি উঠিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করান। তারা ফল, ঘি, খাসি ও পাঠা পাগলা খুঁটির নামে উৎসর্গ করেন। পূজা শেষে খুঁটিটি আবারো ওই পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়।
পূজা উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হিন্দুরা যোগ দিতে আসেন। অন্য ধর্মের লোকরাও আসেন।
শুক্রবার (১৬ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় নাগর দোলা, বাঁশের বাঁশি, কাঠের চেয়ার, হাতপাখা, চৌকি, মোড়া, চুড়ি, প্লাস্টিকের খেলনা, মিষ্টির দোকানসহ বিভিন্ন সামগ্রী সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
হামছাদী গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, “পূজা উপলক্ষে মেলার আয়োজন হয়। এই মেলায় যোগ দিতে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই আসেন আত্মীয়-স্বজনরা। প্রতিবছর এ মেলার জন্য স্বজনরা অপেক্ষায় থাকেন।”
পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, “এ মেলা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য বহন করে। মেলার আনুষ্ঠানিকতা পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।”
তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে মেলা উদযাপনের লক্ষ্যে এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় গীতা পাঠ ও কীর্তন পরিবেশিত হয়। এই পাগলা গাছের মেলা দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিণত হয়।”
ঢাকা/মাসুদ