যে ভোটের জন্য এত রক্ত ঝরেছে, সে ভোট তো এখনো পেলাম না: রিজভী
Published: 17th, May 2025 GMT
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘যে ভোটের জন্য অনেক নেতা–কর্মী ক্রসফায়ারে জীবন দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, যে ভোটের জন্য এত রক্ত ঝরেছে, সে ভোট তো আমরা এখনো পেলাম না। ভোটের জন্যই তো এত লড়াই, এত সংগ্রাম। জনগণ যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবে, যে দলকে ইচ্ছা সে দলকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে সরকারে বসাবে। কিন্তু সেটা এখনো কেন ফিরে আসছে না, সেটা নিয়ে এত গড়িমসি কেন?’
আজ শনিবার বিকেলে নরসিংদীর মনোহরদীর ছাদত আলী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিএনপি আয়োজিত আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে গত ১৫ বছর অসংখ্য মামলায় রিমান্ডে ও কারাগারে থেকেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। ওই ত্যাগ স্বীকারের মধ্যে যে ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে, তার ওপরই জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে পালাতে হয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘আপনারা সংস্কারের বিষয়ে বলছেন, আগে সংস্কার সম্পূর্ণ করবেন। কখন সম্পূর্ণ করবেন, কীভাবে সম্পূর্ণ করবেন। সংস্কার পদ্মার পানির মতো, বঙ্গোপসাগরের স্রোতের মতো চলমান। সময়ে সময়ে, যুগে যুগে যখন জনগণের প্রয়োজন, সে অনুযায়ী সংস্কারের স্রোত অব্যাহত থাকবে। সংস্কার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, দেশে নির্বাচিত সরকার থাকলে যে কাজগুলো করতে পারত, সে কাজগুলো আটকে আছে। শেয়ারবাজার অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কোরবানির আগে মসলার দাম বেড়ে গেছে। জবাবদিহিমূলক সরকার এলে জনগণের এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হতো।
বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক–বিষয়ক সহসম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ও ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।
টুর্নামেন্টের ফাইনালে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সাতপাইকা ফুটবল একাদশ ও গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আলফাজ উদ্দিন মুক্তার ফাউন্ডেশন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। খেলায় ২-০ গোলে সাতপাইকা ফুটবল একাদশ বিজয়ী হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ট র জন য ব এনপ র জনগণ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, “আজ এই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নানা মহলে নানা আলোচনা চলছে। আলোচনার বিস্তারে না গিয়ে আমি শুধু এতটুকুই বলব-আমরা বলেছি, লেবার পার্টি বলেছে, যে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। আমি এখানে উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুদের সামনে প্রশ্ন রাখতে চাই-যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারা শুধু বলুন, কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত? কারণটা কী?”
শুক্রবার (১৬ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে মাওলানা মতিনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে গত আগস্টে ঘোষিত এক দফার একটি পর্যায় ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এখন মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের দাবির অবশিষ্ট অংশ পূরণের আশায়। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। অনেক তরুণ আছেন, যাদের বয়স কম, কিন্তু ভোটার হয়েছেন অনেকদিন আগে-তবুও আজ পর্যন্ত তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তারা সেই অধিকার প্রয়োগ করতে চায়, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের মতামত জানাতে চায়।এটি তাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার।এই অধিকার অর্জনের জন্যই হাজার হাজার মানুষ কারারুদ্ধ হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।”
আরো পড়ুন:
পাবনায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, ২৩ মোটরসাইকেল ভাঙচুর
বিদেশে পালানোর সময় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আটক
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই বলেছে, তারা জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো অসুবিধাই থাকার কথা নয়।অনেকে বলছেন, আগে সংস্কার করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন আসে, আপনারা কবে থেকে সংস্কারের কথা বলছেন? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তো ১৯৭৬-৭৭ সালেই ১৯ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে অত্যন্ত সুবিন্যস্ত ২০৩০ ভিশন দিয়েছিলেন, যা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা। এরপর ২০২২ সালে তারেক রহমান ২৭ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেটি সমৃদ্ধ করে, আন্দোলনে যুক্ত সবার অংশগ্রহণে ২০২৩ সালে আমরা ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচি ঘোষণা করি।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আমরা সংস্কারের বিপক্ষে নই, আমরা পরিপূর্ণভাবে সংস্কারের পক্ষে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে-সংস্কার কি একবারেই সম্পন্ন করার বিষয়? পরিবর্তনের দুটি পথ-একটি বিপ্লব, অন্যটি সংস্কার। বৈপ্লবিক পরিবর্তন দ্রুত ঘটে যায়, আর সংস্কার হয় একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, সবার সম্মতিতে-বিশেষ করে যারা স্টেকহোল্ডার। কারো দল গোছানোর জন্য সময় দরকার, কারো বন্ধু জোগাড় করার জন্য সময় দরকার।কিন্তু তার জন্য জনগণের ভোট দেওয়ার যে মৌলিক মানবাধিকার বিলম্বিত হবে-এটা হতে পারে না।”
তিনি বলেন, “অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানিয়েছেন, মে মাসের মধ্যেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে কোন কোন প্রস্তাবে সব দল একমত এবং কোন কোন প্রস্তাবে ভিন্নমত রয়েছে। যদি মে মাসের মধ্যেই এই বোঝাপড়া স্পষ্ট হয়ে যায়, তাহলে জুন মাসের মধ্যেই তা সংকলন করে একটি সনদ হিসেবে তৈরি করা সম্ভব-যাতে সব রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করবে, একমত হবে। যেসব সংস্কার তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা আইনের বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর হবে; যেগুলোর জন্য সংবিধান পরিবর্তন দরকার, তা নির্বাচিত সংসদে হবে।এই কাজ যদি জুনের মধ্যেও সম্ভব না হয়, জুলাইয়ের মধ্যেও হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন হলো-ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধাটা কোথায়?”
তিনি আরো বলেন,“জনগণের নির্বাচিত সরকার ধীর হতে পারে, ভুল করতেও পারে, কিন্তু এর চেয়ে ভালো পদ্ধতি আজও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই আমাদের এই পথেই এগোতে হবে—জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের সাথীরা, যারা জীবন দিয়েছেন, তারা এই গণতন্ত্রের জন্যই জীবন দিয়েছেন, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছেন, ফ্যাসিবাদ উৎখাতের জন্য জীবন দিয়েছেন। সেই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আমাদের সামনে নতুন পরিবর্তনের সূচনা হবে। আর যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, অবহেলা করবে, তাদের প্রতিস্থাপনের ক্ষমতাও থাকবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই। আমরা সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই যুক্ত হতে চাই।”
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান ইরান, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
ঢাকা/এম/এসবি