বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তা বৃদ্ধির প্রত্যাশা, শঙ্কায় দেশি প্রতিষ্ঠান
Published: 21st, May 2025 GMT
দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করল স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’। সরকারের প্রত্যাশা, যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্কের দ্রুততম স্টারলিংক চালু হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন। দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চ গতির ইন্টারনেট পৌঁছে যাওয়ায় বাড়বে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তবে ব্যবসা হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার স্টারলিংক তাদের এক্স হ্যান্ডেলে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরুর কথা জানায়। পরে প্রধান উপদেষ্টার টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুক পোস্টে জানান, শুরুতে দুটি প্যাকেজ দিয়ে বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হলো।
স্টারলিংকের আগ্রহে ২০২৩ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে বিশেষ উদ্যোগে দ্রুত লাইসেন্সের মাধ্যমে স্টারলিংককে ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছে। সরকার গত ২৯ মার্চ স্টারলিংককে বিনিয়োগের নিবন্ধন দেয়। আর ২৯ এপ্রিল বিটিআরসি ১০ বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়।
জানা যায়, তিন মাস পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাবে স্টারলিংক। মাসিক দুটি প্যাকেজের মধ্যে রেসিডেন্সে ৬ হাজার এবং রেসিডেন্স লাইটে খরচ পড়বে ৪ হাজার ২০০ টাকা। তবে সেবা পেতে যন্ত্রপাতি স্থাপনে লাগবে ৪৭ হাজার টাকা। যদিও স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে ঢাকার ঠিকানায় যন্ত্রাংশের অর্ডারে খরচ দেখাচ্ছে ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা। অতিরিক্ত ২ হাজার ৮০০ টাকা শিপিং ও হ্যান্ডেলিং চার্জ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিযোগাযোগ খাতের দু’জন উদ্যোক্তা ও এক বিশ্লেষক সমকালকে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার অংশ হিসেবে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছে।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে স্টারলিংকের সেবা ঘিরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
সরকার কেন স্টারলিংক নিয়ে তড়িঘড়ি করছে– প্রশ্নে ফয়েজ আহমদ বলেন, তিন বছর ধরে স্টারলিংক বাংলাদেশে আসার আগ্রহ দেখাচ্ছিল। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে এর প্রযুক্তি পরীক্ষা হয়েছিল। গত জুলাইয়ে আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধের কারণে বিনিয়োগ ক্ষতি হয়। তাই উচ্চ গতি ও মানের একটি টেকসই বিকল্প সরকার খুঁজছিল। সেখান থেকে স্টারলিংক এসেছে। এটি তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্ত নয়। সরকার বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছে, বাংলাদেশ বিনিয়োগবান্ধব এবং স্টারলিংক এলে অন্যরাও আসবে। ইতোমধ্যে অ্যামাজনের ‘কুইপার’, কানাডার ‘টেলিস্যাট’, যুক্তরাজ্যের ‘ওয়ানওয়েব’সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসার আগ্রহ দেখিয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে মাত্র ৩০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারে ফাইবার সংযোগ আছে। বাকিগুলোর সংযোগ লো-ক্যাপাসিটি মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে, যা গ্রাহকের জন্য দুর্বল গতির ইন্টারনেট তৈরি করে। কিন্তু মাত্র একটি স্টারলিংক যন্ত্র দিয়ে কোনো এলাকার ৫০ থেকে ৬০ মিটার পর্যন্ত উচ্চগতির নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, স্টারলিংক বাংলাদেশে সেবা দিতে ফাইবার অ্যাট হোমের অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করবে। একাধিক আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ের (আইআইজি) সঙ্গেও তাদের চুক্তি করতে হবে।
বাসাবাড়ির গ্রাহকদের বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো স্টারলিংকের ওয়েবসাইট থেকে প্যাকেজ কিনতে হবে। তবে করপোরেট গ্রাহকসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খুচরা সেবা পরিচালনার ক্ষেত্রে ছয়-সাত কোম্পানিকে স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ দেবে স্টারলিংক। এর মধ্যে দেশের তিন বেসরকারি মোবাইল অপারেটর– গ্রামীণ, রবি ও বাংলালিংকের সঙ্গে তারা প্রাথমিক আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সাশ্রয়ী
প্যাকেজ মূল্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ আহমদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম কম। প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ৭ হাজার টাকার বেশি; আমরা কিছুটা কমাতে সক্ষম হয়েছি। দাম পরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে; সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে না।
স্টারলিংককে উদ্যোক্তাবান্ধব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যেন সহজে স্টারলিংক নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। এ ইন্টারনেট শেয়ার এবং সেবাও বিক্রি করা যাবে– এ ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। আমরা চেষ্টা করব, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন স্টারলিংক উদ্যোক্তাদের অর্থের সংস্থান করে। এতে ‘ওয়াইফাই লেডি’ হিসেবে নতুন একটি উদ্যোক্তার ধারা সৃষ্টি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন ফয়েজ আহমদ।
স্টারলিংক ব্যবহারে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার এ বিশেষ সহকারী বলেন, ‘স্টারলিংকের স্থানীয় গেটওয়ে ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেট, মূল্য সংযোজন কর ও শুল্ক প্রযোজ্য হবে। বিটিআরসি থেকে অনুমোদন নিতে হবে। ফলে কোনোভাবেই জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব
বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রমে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়বে কিনা– প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। দেশে বহু প্রকল্প চীনা অর্থায়নে চলছে; মোবাইল অপারেটরের অনেক প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও তাদের। আমরা চাই, চীন-আমেরিকা উভয়ের কোম্পানি এখানে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করুক। আমরা সবাইকে সমান সুবিধা দিচ্ছি।’
দেশি উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন
স্টারলিংক বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করায় দেশি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম সমকালকে বলেন, ‘আমাদের মূল গ্রাহক করপোরেট প্রতিষ্ঠান। বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সেবা অনেকটাই ভর্তুকিমূলক। স্টারলিংক আসায় আমরা করপোরেট গ্রাহক হারানোর শঙ্কায় রয়েছি। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আমরা সরকারের কাছে প্রযুক্তিগত এবং কর-সংক্রান্ত সহযোগিতা চাইব। বিষয়টি নিয়ে শিগগির আমরা বিটিআরসি, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস র ব যবহ র গ র হক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আজ-কালের মধ্যে ইশরাকের শপথ না হলে বড় আন্দোলন হতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। আজ অথবা আগামীকালের মধ্যে ইশরাকের শপথ আয়োজন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে সিলেট নগরীতে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ঢাকায় কয়েকদিন ধরে জনগণ নগর ভবন তালাবদ্ধ করে রেখেছে, চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে রেখেছে এবং আলটিমেটাম দিয়েছে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে। আদালতের রায়ে মেয়র ঘোষিত হয়েছেন ইশরাক। নির্বাচন কমিশন আদালতের রায় মেনে যার নামে গেজেট প্রকাশ করেছে, তাকে আপনারা শপথ গ্রহণ করাবেন না, বিভিন্ন ইস্যু করছেন। তাহলে এটা আইনের শাসন হলো?'
তিনি বলেন, ‘ইউনুস সাহেব ও তার কমবয়সী উপদেষ্টারা মনে করছেন তারা আইন মানবেন না, কোর্টের আদেশ মানবেন না, ইলেকশন কমিশনের গেজেট নোটিফিকেশনকে তোয়াক্কা করবেন না। তাহলে গণতন্ত্রের বিপরীতে আপনাদের যাত্রা শুরু হলো।’
‘আমরা সবসময় আপনাদের সহযোগিতা করেছি। এই সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার মানে এই না যে আমরা দস্তখৎ দিয়েছি, আপনাকে যা করবেন তাই সহ্য করব,’ বলেন এই বিএনপি নেতা।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমি আহ্বান করছি অতি অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আদালত ঘোষিত ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় ঢাকার এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আরও বৃহৎ আন্দোলন হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি চিরতরে বন্ধ করতে হলে সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। আমরা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বসেছি—কীভাবে বিচার বিভাগের, প্রশাসনের কিংবা অন্যান্য খাতের সংস্কার হবে, কীভাবে বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারবে এবং সাংবিধানিকভাবে কোনো একনায়ক সৃষ্টি হতে পারবে না-সেজন্য আমরা কাজ করছি।’
‘এই সংস্কারের ফল যদি আমরা পেতে চাই, তাহলে নির্বাচিত সংসদের কোনো বিকল্প নেই। আমরা সে কথা বললে অন্তর্বর্তী সরকার খুব নারাজ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচন না চায়, তাহলে আর কী চাইবে? বর্তমান সভ্য দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই, কিন্তু সেই নির্বাচনের কথা বললেই তারা গোস্বা হন,’ বলেন তিনি।
‘একজন নারী উপদেষ্টা বলছেন, গণঅভ্যুত্থান তাদের নির্বাচিত করেছে। তারা যদি সেভাবে নির্বাচিত হয়ে থাকেন, তাহলে বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা আছে কেন? নির্বাচন কমিশনের কাজ কী? কেউ কেউ আজীবন ক্ষমতা ভোগের স্বপ্ন দেখছেন,’ প্রশ্ন রাখেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।