গুজরাটকে হারিয়ে মর্যাদা রক্ষা লক্ষ্ণৌর
Published: 23rd, May 2025 GMT
আইপিএল ২০২৫-এর ৬৪তম ম্যাচে প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে পড়া লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস (এলএসজি) নিজেদের মর্যাদা রক্ষার্থে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিল। টেবিলের শীর্ষে থাকা গুজরাট টাইটান্সকে ৩৩ রানে হারিয়ে এলএসজি প্রমাণ করল, তারা এখনও প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি। ম্যাচের নায়ক ছিলেন মিচেল মার্শ, যিনি তার আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেন।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে এলএসজি ওপেনার এডেন মার্করাম ও মিচেল মার্শের ৯১ রানের জুটি দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়। মার্করাম ২৪ বলে ৩৬ রান করে আউট হলেও, মার্শ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ৬৪ বলে ১০টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১১৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে তিনি এলএসজিকে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ২৩৫ রানের বিশাল স্কোর এনে দেন। এটি ছিল চলতি আসরে কোনো বিদেশি ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি।
মার্শের সঙ্গে নিকোলাস পুরান ২৭ বলে ৫৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। শেষদিকে ঋষভ পান্ত ৬ বলে ১৬ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন, যা এলএসজির স্কোরবোর্ডকে আরও সমৃদ্ধ করে।
আরো পড়ুন:
সাকিবের দারুণ বোলিং, জিতে ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল লাহোর
পিএসএলের বাকি ম্যাচগুলোতে থাকছে না ‘ডিআরএস’
২৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গুজরাট টাইটান্সের শুরুটা ভালো হলেও, উইলিয়াম ও'রুর্কির দুর্দান্ত বোলিংয়ে তাদের ইনিংস ভেঙে পড়ে। ও'রুর্কি ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন, যার মধ্যে ছিলেন সাই সুদর্শন, শেরফান রাদারফোর্ড ও রাহুল তেওয়াটিয়া
গুজরাটের ওপেনার শুবমান গিল ও জস বাটলার যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৩ রান করেন। মাঝে শেরফান রাদারফোর্ড ও শাহরুখ খান ৮৬ রানের জুটি গড়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেন। শাহরুখ ২৯ বলে ৫৭ রান করেন, কিন্তু দলের জয় নিশ্চিত করতে পারেননি। গুজরাট ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ২০২ রান করে থামে। আর লক্ষ্ণৌ জয় পায় ৩৩ রানে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নিবিড়ের কৃতিত্বের পেছনে কঠোর পরিশ্রম, প্রতিদিন পড়ালেখা ১০-১২ ঘণ্টা
১৩০০ নম্বরের মধ্যেই ১২৮৫! অবাক হওয়ার মতো এমন অনন্য ফলাফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী নিবিড় কর্মকার। নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এমন অনন্য ফলাফল করেছে নিবিড়।
এমন সেরা ফলাফলের পেছনে বেশি বেশি পাঠ্যপুস্তক পড়া, অধ্যাবসায়, প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা পড়ালেখার ব্যস্ত থাকা, শিক্ষকদের গাইডলাইন অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করা, মনোবল না হারানো - মূলত এসব বিষয় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করে নিবিড়। আগামীতে প্রকৌশলী হয়ে দেশের সেবায় কাজ করার আশা তার।
নিবিড় চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকার জীবন কর্মকার ও রিপা রায়ের ছেলে। তার বাবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আর মা গৃহিণী। ছেলের এমন সাফল্যে আনন্দিত বাবা-মা।
নিবিড় কর্মকার বলেন, ‘এমন ভালো ফলাফল করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি পাঠ্যবইয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতাম। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা পড়ালেখা করতাম। গাইড বইয়ের চেয়ে পাঠ্যবইকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। আমি মনে করি এই ফলাফলের পেছনে পাঠ্যবইয়ে বাড়তি সময় দেওয়াটা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকরা আমাকে খুব ভালোভাবে গাইড করেছেন। মাঝেমধ্যে পরিচিত অন্য স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গেও পড়ালেখার নানা বিষয় শেয়ার করতাম।’ তিনি বলেন, ‘এই অর্জনের পেছনে মা-বাবার ভূমিকা অনেক বেশি। উনারা আমার প্রতি অনেক বেশি যত্নবান ছিলেন। কখনও পড়ালেখা নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে সাহস দিতেন। নানা বিষয়েও সার্বক্ষণ নানা পরামর্শ দিতেন। মা-বাবার অনেক কষ্ট আর পরিশ্রমের ভালো প্রতিদান দিতে পেরে আমি আনন্দিত।’
নিবিড় বলেন, ‘এবার ভালো ফলাফল করে আগামীতে প্রকৌশলী বিষয়ে পড়ার প্রবল ইচ্ছা। বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করতে চাই।’
নিবিড়ের বাবা জীবন কর্মকার বলেন, ‘ছেলের এমন সেরা অর্জনে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। এমন ফলাফলের মাধ্যমে আমাদের জীবন ধন্য করেছে নিবিড়। সবসময় তার পাশে থাকার চেষ্টা করেছি আমি ও তার মা। এবারের ফলাফল আগামীতে আরও ভালো কিছু করতে তাকে উৎসাহ যোগাবে।’ নিবিড়ের মা রিপা রায় বলেন, ‘সামান্য নম্বরের জন্য সে কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়নি। এতে ওর মতো আমাদেরও খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু সেখানে চান্স না পেলেও নিবিড় যে মেধাবী এত ভালো ফলাফল করে তা প্রমাণ করেছে সে। তার এই ফলাফলে সে দিনের সব কষ্ট এখন নিমিষেই দূর হয়ে গেছে। নিবিড়কে নিয়ে আমরা গর্বিত। তার এমন সেরা ফলাফল নিঃসন্দেহে চট্টগ্রামবাসীর জন্যও গর্বের ও আনন্দের।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘নিবিড় অত্যন্ত ভদ্র, সুশৃঙ্খল ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থী। সব সময় নিয়মিত ক্লাস করেছে সে। কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকের পরামর্শ নিত। ভালো ফলাফল করার এক ধরনের নেশা কাজ করতো তার মাঝে। এসবের কারণে সে নজরকাড়া নম্বর পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।’
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, ‘১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৮৫ পাওয়া নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভালো ফলাফল। মেধাবী শিক্ষার্থীর পক্ষেই এমন ফলাফল করা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘তবে এমন ফলাফলকে দেশসেরা বলা যাবে না। কারণ কাউকে দেশসেরা হিসেবে কেবল মন্ত্রণালয় বা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করতে পারে। কারণ ঢাকা বা অন্য বোর্ডে আর কোনো শিক্ষার্থী যে এর চেয়ে বেশি নম্বর পায়নি সেটা আমরা নিশ্চিত করে বলবো কিভাবে? কারণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবোর্চ্চ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করতেও নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী দেশসেরা সেটা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন বিষয় তুলে ধরতে আগ্রহী নয়।’
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবারের এসএসসি পরীক্ষার পাসের হার ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৯০ জন এবং ছাত্রী ৬ হাজার ৩৫৩ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২১৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১৬৪টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এবার এসএসসিতে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ হাজার ৭২৫ জন ছাত্রী ও ৬১ হাজার ৬৬৩ জন ছাত্র। এবার ছাত্র পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ছাত্রী পাসের হার ৭২ দশমিক ১৯ শতাংশ।