ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভিসি) হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে তিনি এ পদে নিয়োগ লাভ করেন।
শনিবার (২৪ মে) যোগ দেওয়ার দিন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কনফারেন্স রুমে অধ্যাপক ড. সোবহানীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো.

মনিরুজ্জামান মোল্লা, প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. শামসুল হুদা, কোষাধ্যক্ষ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, উপদেষ্টা, রেজিস্ট্রার এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেওয়ার আগে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও ডিন এবং আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধ্যাপক ও ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে তিনি এমবিএ প্রোগ্রামের পরিচালক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বারলিতে ‘সোল প্লাতজে ইউনিভার্সিটি’র ইকোনমিকস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের ভিজিটিং প্রফেসর, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস লিডারশিপের রিসার্চ ফেলো এবং মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মারার অ্যাকাউন্টিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম কমিটি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের পিএইচডি প্রোগ্রামের এক্সপার্ট মেম্বার ছিলেন। এছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়ান জার্নাল অব অ্যাকাউন্টিং, ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যান্সের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

ড. সোবহানী বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি একাডেমিকস’-এর সভাপতি এবং ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশ হিউম্যান রিসোর্স অর্গানাইজেশনস’-এর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

ফরিদ আহমদ সোবহানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে বিবিএ এবং এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব এন্টওয়ার্প থেকে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়া থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. সোবহানী হিসাববিজ্ঞান, কর্পোরেট প্রতিবেদন, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং নেতৃত্ব বিষয়ে দেশি-বিদেশি স্বীকৃত জার্নালে প্রায় ১০০টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃতী সন্তান ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন ভ র স ট র

এছাড়াও পড়ুন:

আমার বাবা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ

আমার বাবা (যাঁকে আদর করে ‘আব্বু’ বলে ডাকতাম), এখনো আমার জন্য এক প্রহেলিকা। এই বহুমুখী ব্যক্তির নানা দিক সম্বন্ধে আজও নতুন তথ্য শুনি। তার একটা কারণ বোধ হয় যে আব্বু অপ্রয়োজনে কথা বলতেন না আর ব্যক্তিগত সুবিধা–অসুবিধা–সমস্যা নিয়ে কারও সঙ্গে (তাঁর সমমনা সহধর্মিণী আমার মা–ই ব্যতিক্রম) খোলাখুলি আলাপ–আলোচনা করতেন না।

সত্যি কথা বলতে কি, বাল্য এবং শৈশবে তাঁর সঙ্গে দেখা হতো অনিয়মিত। তাঁর ছাত্রদের এবং তাঁর বন্ধুদের মুখে তাঁর ধৈর্য, রসজ্ঞান এবং সহানুভূতির গল্প বড় হয়ে অনেক শুনেছি। আফসোস হয়েছে যে পরিবারে তিনি এমন সময় দিতে পারেননি। তাঁর মুখে গল্প–কাহিনি শুনিনি; সে দায়িত্ব ছিল আমার মায়ের। এখন বুঝি যে সীমিত আয়ে বিশাল একান্নবর্তী পরিবারের ব্যয়ভার সামলানোর দুরূহ কর্তব্যে রত ছিলেন বলে এ রকম সুযোগ তাঁর হয়নি।

কেবল আব্বু–আম্মুর সঙ্গে আমরা ভাইবোনেরা বাল্যকালে কোথাও বেড়াতে যাইনি। তবে পাঠকেরা আমাদের বাল্যকালকে একেবারে নিরানন্দ ভাববেন না। যেমনটা আগেই বলেছি, আম্মু কেবল আমাদের পড়াশোনা, খাওয়াদাওয়াই রুটিনমতো করাতেন না। তাঁর পক্ষে যা সম্ভব ছিল, যেমন লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, জাদুঘর, বলধা গার্ডেন—এসব ঘুরিয়ে দেখানোর পাশাপাশি ব্রিটিশ কাউন্সিলে সিনেমা দেখানোও তিনি সাধ্যমতো করতেন। ধীরে ধীরে আমরা বুঝে গিয়েছিলাম যে আব্বু যে আমাদের যথেষ্ট সময় দেন না, তা মোটেই ইচ্ছাকৃত নয়। বহু জায়গায় তিনি গবেষণা এবং কর্মশালায় যোগদান উপলক্ষে গেছেন, তবে মূল্যবান কোনো উপহার আনেননি। বাড়ির শিশুদের (নিজের ও ভাইবোনদের সন্তান) জন্য সাধারণত শিশুপাঠ্য কমিক বই (বলা বাহুল্য আম্মু পড়ে শোনাতেন) এবং চকলেট নিয়ে আসতেন। এখন নিজে যখন এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করি, তখন বুঝি যে সবার চাহিদা মেটাতে আব্বুর কতটা কষ্ট হয়েছিল।

ভোগবিলাস ছিল না, তবে বইপত্র, নানা রকম খেলার সরঞ্জাম, এমনকি ঢাকায় সেই সময়ে দুষ্প্রাপ্য ডিওএস কম্পিউটারও এনে দিয়েছিলেন আব্বু।

কৈশোরে পদার্পণ করার পর মাঝেমধ্যে আব্বুকে এত কৃচ্ছ্রসাধনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছি। যত বয়স বেড়েছে, তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা, এমনকি তর্কবিতর্কও করেছি। তিনি বুঝিয়েছেন যে স্বার্থপরতা অন্তরের শান্তি বিনষ্ট করে। এই যুক্তি তখন বোধগম্য হয়নি, এখন বলা বাহুল্য, স্পষ্ট বুঝি এবং সহমতও হই।

আব্বুর কিছু কিছু দিক নিয়ে মজা পেতাম। খুবই ভোলা মন ছিল; চোখে চশমা পরে অনেক সময়ই খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দেখে ছোটরা মজা পেয়েছে। নিজে ইমানদার ছিলেন। কিছু কিনতে গেলে দোকানদারকে বলতেন, ‘ইমানসে দিয়েন।’ বলা বাহুল্য, বেশির ভাগ দোকানদার তা করতেন না। খুব সম্ভব, এ জন্য দাদি এবং আম্মু তাঁকে বাজার করতে দিতে চাইতেন না। ব্যবসায়ী ঠকালেও আল্লাহর রহমতে, তাঁর অনেক বিশ্বস্ত এবং অনুগত সহকর্মী, ছাত্র এবং সমমনা কিছু বন্ধু ছিলেন, যাঁরা তাঁকে স্বস্তি ও আনন্দ দিয়েছেন।

আগেই বলেছি, ভিন্নমত প্রকাশ করায় কোনো বাধা ছিল না। মনে পড়ে, ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আব্বু এবং আমি অংশ নিয়েছিলাম। তাঁর বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম এবং পরবর্তী সময়ে অন্য আলোচকেরা আমাদের সম্পর্ক সম্বন্ধে জেনে বেশ অবাক হয়েছিলেন।

আমি অধ্যাপনাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ায় আব্বু খুবই খুশি হয়েছিলেন। তবে মজার ব্যাপার, এ কথা আমাকে কখনো সরাসরি বলেননি। ছোট ভাইয়ের মুখ থেকে শুনেছি যে আমার পিএইচডি থিসিস ছাপা হওয়ায় খুবই খুশি হয়েছিলেন। অবশ্য আমরা বাল্যকাল থেকেই আব্বুর পরিচিত এবং বন্ধুবান্ধবের সন্তানদের সঙ্গে তুলনা শুনে এসেছি, বিশেষ করে আনিস চাচ্চুর (প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান) ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তুলনায় আমরা কতটা পিছিয়ে আছি, সে সম্পর্কে মন্তব্য। সৌভাগ্যবশত আনিস চাচ্চুর ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক এ কারণে ব্যাহত হয়নি।

আব্বুকে যাঁরা জানেন, তাঁরা এটাও জানেন যে আব্বু মনেপ্রাণে একজন খাঁটি মুসলিম হতে চেষ্টা করেছেন সারা জীবন। নামাজ, রোজা নিয়মিত করতেন কিন্তু কখনো জাহির করেননি এবং অন্যের ওপর চাপাতে চাননি। অন্য ধর্ম সম্পর্কে কখনো হীন মন্তব্য করেননি এবং আমাদেরও পরমতসহিষ্ণু হতে তাগিদ দিয়েছেন।

পারিবারিক জীবনে আব্বুকে কখনো পুরুষতান্ত্রিক ব্যবহার করতে দেখিনি। নিজের কাপড়চোপড় নিজেই গুছিয়ে রাখতেন; খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করতেন না। যখন আম্মু বিদেশে গবেষণা উপলক্ষে আন্তর্জাতিক কোনো সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য যেতেন, তখন আব্বু গৃহপরিচালনার কাজ, দাদির সেবাযত্ন ইত্যাদি সব দেখাশোনা করতেন।

আব্বু বহুগুণে গুণান্বিত হলেও একেবারে ত্রুটিমুক্ত মানুষ ছিলেন বলা যাবে না। রক্তমাংসের মানুষই তিনি ছিলেন। তবে এখন অতীতের স্মৃতিতে যখন ডুবে যাই, তখন বুঝি, কতটা অসাধারণ মানুষ ছিলেন তিনি। পরম করুণাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তাঁর মতো একজন বাবার মেয়ে হওয়ার সৌভাগ্যের জন্য। আর প্রার্থনা করি যেন আমার কারণে তাঁর সম্মানহানি না হয়।

ড. সোহেলা নাজনীন: সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, আইডিএস, ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একবার চার্জে টানা ৩ দিন চলবে এই দুই বাজেট সাশ্রয়ী স্মার্টফোন
  • ‘ক্রান্তিকালের ত্রাতা মোহাম্মদ ইউনূস, আপনি সংস্কারকাজ সম্পন্ন করুন’
  • ‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না’ লেখা সরিয়ে নতুন পোস্ট দিলেন ফয়েজ তৈয়্যব
  • চকরিয়ায় বাড়ির উঠানে ছুরিকাঘাতে মাছ ব্যবসায়ী নিহত
  • প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
  • প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না, দেশের জন্য তাঁকে দরকার: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
  • সরকারি দপ্তরের শৃঙ্খলা আনার নতুন হাতিয়ার ডিজিটাল সিগনেচার: ফয়েজ
  • আমার বাবা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ
  • প্রযুক্তিপণ্যের বিক্রি স্বাভাবিক, স্থিতিশীল রয়েছে যন্ত্রাংশের দাম