ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের স্থল অভিযান ও প্রাণঘাতী বোমা হামলায় তাঁদের প্রিয়জনদের মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি চরম ঝুঁকিতে পড়ায় নেতানিয়াহুর সমালোচনা করছেন তাঁরা।

গতকাল শনিবার তেল আবিব, শার হানেগেভ জংশন, কিরইয়াত গাত ও জেরুজালেমের রাস্তায় নেমে আসেন বিক্ষোভকারীরা। ‘হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’-এর সদস্যরা অভিযোগ করেন, ইসরায়েল সরকার তাঁদের প্রিয়জনদের নিরাপদে দেশে ফেরানোর চেয়ে যুদ্ধকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

এদিন এক বিবৃতিতে ফোরামের সদস্যরা বলেন, ‘আমাদের দাবি, নীতিনির্ধারকেরা যেন অবিলম্বে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসেন এবং একটি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সেই আলোচনা চালিয়ে যান, যেন আমাদের সব প্রিয়জনকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা যায়।’

গত কয়েক দিনে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। বিশেষ করে নেতানিয়াহু দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত-এর নতুন প্রধান হিসেবে মেজর জেনারেল ডেভিড জিনিকে মনোনীত করায় তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

গতকাল তেল আবিবে আয়োজিত বিক্ষোভ–সমাবেশে যাঁরা বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁদের একজন আইনাভ জাংগাউকার। তিনি গাজায় জিম্মি মতান জাংগাউকারের মা। সমাবেশে নেতানিয়াহুকে সরাসরি উদ্দেশ করে আইনাভ বলেন, ‘বলুন তো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কীভাবে রাতে ঘুমাতে যেতে ও সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারছেন? আপনি ৫৮ জন জিম্মিকে অবহেলায় ফেলে রেখেছেন—এমনটা জেনেও কীভাবে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখেন?’

বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল, ‘লড়াই জিম্মিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

গত কয়েক দিনে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। বিশেষ করে নেতানিয়াহু দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের নতুন প্রধান হিসেবে মেজর জেনারেল ডেভিড জিনিকে মনোনীত করায় তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

ইসরায়েলের চ্যানেল টুয়েলভের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেভিড জিনি জিম্মিমুক্তি–সংক্রান্ত যেকোনো চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘আমি জিম্মিমুক্তি চুক্তির বিপক্ষে। এটি (গাজা যুদ্ধ) একটি চিরন্তন যুদ্ধ।’

গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে ফোরাম বলেছে, ‘অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবার মেজর জেনারেল জিনির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ। যদি এ তথ্য (তাঁর বক্তব্য) সত্য হয়, তবে এটি অত্যন্ত উদ্বেগের ও নিন্দনীয়। কারণ, এমন একজন ব্যক্তি কথাগুলো বলেছেন, যিনি অপহৃত পুরুষ ও নারীদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন।’

সংগঠনটি আরও বলেছে, অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেয়ে নেতানিয়াহুর যুদ্ধকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন—এমন এক ব্যক্তিকে শিন বেতের প্রধান নিয়োগ দেওয়ার মানে পুরো ইসরায়েল জাতির সঙ্গে অন্যায় ও একধরনের অপরাধ সংঘটন করা।

জর্ডানের আম্মান থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক হামদা সালহুত বলেন, ‘নেতানিয়াহুর নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি গাজায় আরও সামরিক চাপ ও যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে চান। আর এ কারণেই তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’

এই প্রতিবেদক আরও বলেন, গাজায় অবরোধ তুলে নেওয়া, যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করা ও সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণ থামানোর জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে নেতানিয়াহুর ওপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ইসরায়েল সেনাবাহিনী বলেছে, যেসব ব্রিগেডকে ডাকা হয়েছিল, তারা এখন গাজার ভেতর অভিযান চালাচ্ছে।

জিম্মিদের পরিবারগুলোর বক্তব্য, এই জোরালো হামলা অব্যাহত থাকলে বেঁচে থাকা জিম্মিরাও প্রাণ হারাবেন। তবে নেতানিয়াহু এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থী সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নেতানিয়াহু সরকারের বড় অংশই যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে এবং তারা এই যুদ্ধের অবসান চায় না।

আরও পড়ুন‘নিষ্ঠুরতম পর্যায়ে’ প্রবেশ করছে গাজা সংঘাত: জাতিসংঘের মহাসচিব১২ ঘণ্টা আগে

ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত বিদায়ী শিন বেতপ্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার চেষ্টা ‘অবৈধ’ বলে রায় দেওয়ার ঠিক এক দিন পর নেতানিয়াহু মেজর জেনারেল জিনিকে সংস্থাটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেন। আদালত বলেছেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলার সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত আছে। তাই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ নয়।

আদালতের এ রায়ের পরও নেতানিয়াহু জিনিকে নিয়োগের পথেই হেঁটেছেন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল সতর্ক করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইনগত পরামর্শ উপেক্ষা ও পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াকে কলুষিত করেছেন।

আরও পড়ুনগাজায় নৃশংসতার পর ইউরোপ কি ইসরায়েলকে পরিত্যাগ করছে১৪ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র পর ব র ইসর য় ল র আরও ব

এছাড়াও পড়ুন:

‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের আইডি থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি আলমগীর হোসেনকে লিবিয়া থেকে ফিরিয়ে এনেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আরেকজনকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় সঙ্গে জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপহরণকারীরা ‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের ইমো আইডি থেকে ভুক্তভোগীর স্বজনদের ফোন করে মুক্তিপণ না দিলে হত্যার হুমকি দিত।

পিবিআইবি ঢাকা মহানগর উত্তরের কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, আলমগীর হোসেন (৪২) লিবিয়ায় জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে গতকাল বুধবার দেশে পৌঁছেছেন। আর সিরাজ উদ্দিনকে দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, আলমগীর ও সিরাজ লিবিয়ার ত্রিপোলিতে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি সেখান থেকে তাঁদের অপহরণ করা হয়। এরপর ইমো অ্যাপের মাধ্যমে দুজনকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা মুক্তিপণ চান অপহরণকারীরা। তাঁদের স্বজনেরা অপহরণকারীদের কাছে দেড় লাখ টাকা পাঠান। তবে মুক্তিপণের বাকি টাকার দাবিতে অপহরণকারীরা আলমগীর ও সিরাজকে নির্যাতন চালাতে থাকেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনায় গত ২৯ জানুয়ারি আলমগীরের বড় ভাই আবদুল মালেক (৫২) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর আদাবর থানায় মামলা করেন। পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর মামলাটির তদন্ত শুরু করে।

পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি ওই ঘটনায় রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার কড়ইতলা মোড় থেকে রাসেল হক (২৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাসেলের মামা কামাল হোসেন অপহরণের সঙ্গে জড়িত। তিনি লিবিয়ায় থাকেন। মুক্তিপণের টাকা লেনদেন নিয়ে কামালের সঙ্গে রাসেলের মুঠোফোনে কথা হয়েছে। রাসেলের মুঠোফোনে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাসেলের মুঠোফোনটি জব্দ করে পিবিআই।

পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, রাসেলকে গ্রেপ্তারের পরও নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় আরও ৪ লাখ টাকা অপহরণকারীদের কাছে পাঠায় ভুক্তভোগীর পরিবার। লিবিয়ায় অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে মিন্টু ফরাজীকে (৩৯) গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের পর অপহৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন অপহরণকারীরা। কিন্তু অপহৃতদের ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দেন। তাঁরা বেশির ভাগ সময় অপহরণকারীদের মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে কথা বলতেন। মাঝেমধ্যে ‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের ইমো আইডি থেকে স্বজনদের কল করে টাকা না দিলে অপহৃতদের হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হতো।

আলমগীর ও সিরাজের বরাত দিয়ে পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তাঁদের হাত–পা বেঁধে মারধর করতেন। কখনো কখনো পায়ের তালুতে পিভিসি পাইপ ও বিদ্যুতের মোটা তার দিয়ে মারতেন। খাবার ও পানির কষ্ট দিতেন। এমনকি শীতের মধ্যে খালি গায়ে মুখে গামছা ভরে শরীর দেয়ালের সঙ্গে ঠেকিয়ে মারধর করা হতো। পরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে লিবিয়ার ত্রিপোলির জিলজিয়া হাসপাতাল এলাকায় অপহৃত আলমগীর হোসেন ও সিরাজ উদ্দিনকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।

অপহরণকারীরা যাতে মুক্তিপণের টাকা তুলতে না পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সহায়তায় অপহরণকারীদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, পিবিআই বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে আলমগীর ও সিরাজকে দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়। আলমগীরের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল এবং সিরাজের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। তিনি বলেন, অপহরণের সঙ্গে দেশে যারা জড়িত, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। লিবিয়ায় অবস্থানরত অপহরণকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভয়, আতঙ্ক আর ক্ষোভ নিয়ে সোহাগের দাফন বরগুনায়
  • ‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের আইডি থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো