‘ব্রাজিলিয়ানরা প্রাণখুলে খেলে, প্রতিভা ও দক্ষতায় ভরপুর’
Published: 27th, May 2025 GMT
ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন কার্লো আনচেলত্তি। ব্রাজিলে পা রেখেই দল ঘোষণা করতে হয়েছে তাকে। সেই দল নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে। এরপর ব্রাজিলের সংবাদ মাধ্যম গ্লোবো চ্যানেলকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যে সাক্ষাৎকারে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা, তাদের খেলতে দেখার অভিজ্ঞতা, কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন ডন কার্লো। সাক্ষাৎকারের মূল অংশ তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: কার্লিনহোস, কারলেতো, কার্লোস, আনচেলত্তি; কোন নামে ডাকবো আপনাকে?
আনচেলত্তি: আমি জানি না। সবগুলো নামই খুব স্নেহের। আমার সবগুলো পছন্দ।
প্রশ্ন: প্রথমবার রিওতে, দ্বিতীয়বার ব্রাজিলে। উত্তাপ টের পাচ্ছেন?
আনচেলত্তি: হ্যা, খুব উত্তাপ। হৃদয়ের উষ্ণতা। আমি একবার ফোর্তালেজা গিয়েছিলাম। ব্রাজিল ও মেক্সিকোর ম্যাচ দেখতে। উদ্দেশ্য ছিল দিদা, সের্গিনহো ও আমোরোসেকে দেখা। আমি তখন জুভেন্টাসে কাজ করি। তিনজনকেই কেনার পরামর্শ দিয়েছিলাম। তারা কাউকে কেনেনি। তিন মাস পরে মিলানে গিয়ে তিনজনের নাম বলি। তারা দিদা ও সের্গিনহোকে সাইন করায়।
প্রশ্ন: ৩৪ জন ব্রাজিলিয়ানকে আপনি কোচিং করিয়েছেন। অভিজ্ঞতা কেমন?
আনচেলত্তি: ব্রাজিলিয়ানরা ফুটবলার হিসেবে দারুণ হয়। অন্যদের চেয়ে টেকনিকে অনেক এগিয়ে। তাদের
আমার খুব শান্ত, বিনীত মনে হয়েছে। আমি ৩৪ জনকে কোচিং করিয়েছে। কারো সঙ্গে কোন ঝামেলা হয়নি। একজনের সঙ্গে একটু হয়েছিল। তার নাম বলবো না (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনার দেখা সেরা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার কে, রসিক কে আর সবচেয়ে পেশাদার কে?
আনচেলত্তি: টেকনিকের দিক থেকে সেরা রোনালদো নাজারিও। সে বিশ্বের অন্যতম রসিক ব্যক্তিও। সবচেয়ে পেশাদার কাফু। ভিনি খুব বিনীত। তাদের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ চার ম্যাচের দুটি ব্রাজিলে হবে। আপনার কোন স্টেডিয়াম পছন্দ আছে?
আনচেলত্তি: অবশ্যই মারাকানায় খেলতে পছন্দ করবো। আমি কখনো মারাকানায় যাইনি। ব্রাজিল জাতীয় দলকে পুরো দেশ ভালোবাসে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের আরও আপন হতে ভিন্ন ভিন্ন স্টেডিয়ামে ম্যাচ খেলা যায়।
প্রশ্ন: ব্রাজিলের কে আপনাকে দারুণ প্রভাবিত করেছে?
আনচেলত্তি: আমি ব্রাজিলের অনেক খেলোয়াড়কে অনেক আগে থেকে চিনি। ফ্যালকাও, তনিনহো, ছেরেজো। আমি ব্রাজিলিয়ানদের যেটা পছন্দ করি তা হলো- তারা প্রাণখুলে খেলে, তারা প্রতিভায় ভরপুর এবং খুবই দক্ষ।
প্রশ্ন: ফ্রি সময়ে এখানে কীভাবে সময় কাটবে?
আনচেলত্তি: আমি রিও ডি জেনেইরো যাবো। কর্কোভাদো ঘুরবো, সেখানকার সৈকতে যাবো। এরপর সাও পাওলো, বেলো হরিজোন্তে, পোর্ত এলিগ্রি। ছেরেজো আমাকে বেলো হরিজোন্তের কথা বলেছে। কাকা সাও পাওলোয় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ফ্যালকাও পোর্ত এলিগ্রি। এখন আমার হাতে সময় থাকবে। আমি এখানে থাকব। এখানে থেকেই জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ব্রাজিল ফুটবলের কাঠামো সম্পর্কে ধারণা নিতে চাই এবং দেশটা উপভোগ করতে চাই।
প্রশ্ন: মাঠের বাইরে কার্লো আনচেলত্তি কেমন?
আনচেলত্তি: খুবই শান্ত। আমি খুব নিরব জীবন পছন্দ করি। আমি সিনেমা দেখতে পছন্দ করি। বন্ধু, পরিবারকে সময় দেই। ফুটবলের বাইরে জীবনটা যত সম্ভব ধীর-স্থির রাখার চেষ্টা করি। একেবারেই স্বাভাবিক জীবন। পার্টি পছন্দ করি না, মাঝে মধ্যে অবশ্য যেতে হয়।
প্রশ্ন: আপনার বইয়ের নাম ‘কুইট লেডারশিপ’। ব্যাপারটা কেমন?
আনচেলত্তি: কাউকে প্রভাবিক করার দুটো উপায়। একটা পারচুয়েশন (বুঝিয়ে প্রভাবিত করা), অন্যটি পারকিউশন (জোর করে মানতে বাধ্য করা)। আমি কাউকে যত সম্ভব বোঝাতে চেষ্টা করি যে, আমি যেটা বলছে এটা ঠিক। আমি চাইলে পারকিউশনও প্রয়োগ করতে পারি।
প্রশ্ন: ইতালিতে একসঙ্গে খেলেছেন এমন একজন ব্রাজিলিয়ান?
আনচেলত্তি: জিকো, আমার দলের বিপক্ষে একবার গোল করেছিল। আমার দায়িত্ব পড়েছিল তাকে দেখে রাখার। তখন আমি তরুণ। তার গোলে আমরা ম্যাচটা হেরেছিলাম। উদিনেসে তার প্রথম ম্যাচে ফ্রি কিকে ছয় গোল করেছিলেন তিনি। অসাধারণ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র জ ল ফ টবল ফ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।