কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বালুবাহী ডাম্পট্রাকের ধাক্কায় রাজু (২৪) নামের এক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সড়কটির সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতু সংলগ্ন বাঁশ আড়া এলাকায় এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে সড়কটির দুই পাশে সৃষ্ট দীর্ঘ যানজটে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এই সময় আন্দোলনকারীরা ঘটনাস্থল সংলগ্ন গড়াই নদের পাড়ে বালু তোলার যন্ত্র ও কয়েকটি বালুবাহী ডাম্পট্রাকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর আগে আজ সকাল সোয়া ৮টার দিকে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতুর পূর্ব দিকে বাঁশ আড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আরও তিন শ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিহত রাজু উপজেলার কয়া গ্রামের মাসুদ রানার ছেলে। তিনি পেশায় শ্রমিক ছিলেন। অন্যদিকে আহত ব্যক্তিরা হলেন একই এলাকার সিরাজুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন ও আশরাফ। তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর গড়াই নদ থেকে বালু উত্তোলন, সড়কে ডাম্পট্রাক চলাচল বন্ধ ও দুর্ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী। তাঁরা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে সড়কের উভয় দিকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বিক্ষোভ থেকে উৎসুক জনতার কেউ কেউ কিছু ডাম্পট্রাক ও বালু কাটা যন্ত্রে ভাঙচুরের পাশাপাশি যন্ত্রাংশ লুটপাট করে। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে পুলিশের আশ্বাসে সড়ক থেকে চলে যান বিক্ষোভকারীরা।

উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া ও রায়ডাঙা মৌজায় গড়াই নদের খনন করা বালু অপসারণের ইজারা নিয়েছে কুমারখালীর মেসার্স প্রিয়াঙ্কা ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ডাম্পট্রাকে করে এসব বালু দেশের বিভিন্ন জেলায় নেওয়া হয়। আজ সকালে সকালে একটি ডাম্পট্রাকের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত ভ্যানের কয়েকজন যাত্রী ছিটকে সড়কে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই রাজু নিহত হন। সেই সঙ্গে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মেসার্স প্রিয়াঙ্কা ট্রেডার্স ঠিকাদার জাহিদুল হোসেন বলেন, সড়কের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ বেশ কয়েকটি ট্রাক ভাঙচুর করে লুটপাট করেছে।

কুষ্টিয়া চৌড়হাস হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ আল মামুন বলেন, বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, কিছু ট্রাক ও বালু কাটা যন্ত্র ভাঙচুর এবং যন্ত্রাংশ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, জনগণের দাবির বিষয়টি পাউবোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন

সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।

স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, ‍“নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”

মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।” 

পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”

মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধানমন্ডি ৩২ নম্বর–সংলগ্ন মিরপুর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক, সতর্ক অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ
  • হাসপাতাল-স্কুলে যাওয়ার সড়কটি এমন বেহাল