কুষ্টিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় শ্রমিক নিহতের ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ, ভাঙচুর-লুটপাট
Published: 11th, January 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বালুবাহী ডাম্পট্রাকের ধাক্কায় রাজু (২৪) নামের এক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সড়কটির সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতু সংলগ্ন বাঁশ আড়া এলাকায় এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে সড়কটির দুই পাশে সৃষ্ট দীর্ঘ যানজটে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এই সময় আন্দোলনকারীরা ঘটনাস্থল সংলগ্ন গড়াই নদের পাড়ে বালু তোলার যন্ত্র ও কয়েকটি বালুবাহী ডাম্পট্রাকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে আজ সকাল সোয়া ৮টার দিকে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতুর পূর্ব দিকে বাঁশ আড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আরও তিন শ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিহত রাজু উপজেলার কয়া গ্রামের মাসুদ রানার ছেলে। তিনি পেশায় শ্রমিক ছিলেন। অন্যদিকে আহত ব্যক্তিরা হলেন একই এলাকার সিরাজুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন ও আশরাফ। তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর গড়াই নদ থেকে বালু উত্তোলন, সড়কে ডাম্পট্রাক চলাচল বন্ধ ও দুর্ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী। তাঁরা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে সড়কের উভয় দিকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বিক্ষোভ থেকে উৎসুক জনতার কেউ কেউ কিছু ডাম্পট্রাক ও বালু কাটা যন্ত্রে ভাঙচুরের পাশাপাশি যন্ত্রাংশ লুটপাট করে। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে পুলিশের আশ্বাসে সড়ক থেকে চলে যান বিক্ষোভকারীরা।
উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া ও রায়ডাঙা মৌজায় গড়াই নদের খনন করা বালু অপসারণের ইজারা নিয়েছে কুমারখালীর মেসার্স প্রিয়াঙ্কা ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ডাম্পট্রাকে করে এসব বালু দেশের বিভিন্ন জেলায় নেওয়া হয়। আজ সকালে সকালে একটি ডাম্পট্রাকের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত ভ্যানের কয়েকজন যাত্রী ছিটকে সড়কে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই রাজু নিহত হন। সেই সঙ্গে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মেসার্স প্রিয়াঙ্কা ট্রেডার্স ঠিকাদার জাহিদুল হোসেন বলেন, সড়কের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ বেশ কয়েকটি ট্রাক ভাঙচুর করে লুটপাট করেছে।
কুষ্টিয়া চৌড়হাস হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ আল মামুন বলেন, বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, কিছু ট্রাক ও বালু কাটা যন্ত্র ভাঙচুর এবং যন্ত্রাংশ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, জনগণের দাবির বিষয়টি পাউবোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিন ঘণ্টা অবরোধের পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল শুরু
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেন করার দাবিতে বিভিন্ন স্থানে করা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলায় এবং বেলা পৌনে ১টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া এবং সকাল ১০টা থেকে চকরিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে মহাসড়কটির একাধিক স্থানে অবরোধ করা হয়। এতে দীর্ঘ যানজট দেখা দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন কক্সবাজারমুখী পর্যটক ও যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি দুই লেনের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পর্যটন নগর কক্সবাজারের কারণে এই সড়কে সব সময় যানবাহনের চাপ থাকে। ফলে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয় যাত্রীদের। এ ছাড়া সরু মহাসড়ক হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লোহাগাড়ার আমিরাবাদ স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ছয় লেনের দাবিতে নানা স্লোগান দিচ্ছেন অবরোধকারী ব্যক্তিরা। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট দেখা গেছে।
লোহাগাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে দুপুর ১২টার দিকে লোহাগাড়া থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা।
সাতকানিয়ার ইউএনও খোন্দকার মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কটি সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া চলমান। এটি দরপত্রের অপেক্ষায় রয়েছে। আন্দোলনকারীদের কাছে এই তথ্য ছিল না। এটা জানার পর তারা কেরানীহাট থেকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরি সেতু এলাকায় সকাল ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সেতু এলাকায় অবস্থান করছেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা। পুলিশের একটি দল তাঁদের সরে যেতে অনুরোধ করলেও দাবি পূরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত সরবেন না বলে জানান তাঁরা। পরে বেলা পৌনে একটার দিকে প্রশাসনের আশ্বাসে তাঁরা মহাসড়ক থেকে সরে যান।
চকরিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। এখন ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রণয়নের কাজ চলছে। আন্দোলনকারীদের তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।