২৬৬তম ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়। মঙ্গলবার বিকেলে সাড়ে ৩টায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় লক্ষ্মীপুর বড়ইআটা স্থানে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলায় অংশ নেন হাজার হাজার খেলোয়াড়।

ঐতিহাসিক এ হুমগুটি খেলা দেখতে সেখানে মানুষের ঢল নামে। শুরুতে প্রশাসন খেলা নিষিদ্ধ করায় উপস্থিতি কম হয়। সময় যত ঘনিয়ে আসে লোক সমাগম তত বাড়তে থাকে।

এর আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় সোমবার (১৩ জানুয়ারি) হুমগুটি খেলা বন্ধ করতে তৎপরতা চালায় পুলিশ। রাত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও পুলিশ ব্যর্থ হয়। সকাল থেকেই ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ঢাকঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের তালে হাজারও খেলোয়াড় ও দর্শনার্থী আসতে থাকেন। ধীরে ধীরে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় খেলার মাঠ।

তিনি বলেন, খেলায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে এর দায় খেলোয়াড়দেরকেই নিতে হবে। আশপাশে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।

সরেজমিনে খেলার মাঠে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষের সমাগম। বয়স্কদের চেয়ে উঠতি বয়সের তরুণদের সমাগমই বেশি। খেলার মাঠের চারদিকে চলছে হৈ-হুল্লোড়।

এ উপলক্ষ্যে গ্রামীণ মেলাও বসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদেরও উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

খেলা দেখতে আসা ৮০ বছর বয়সী আবুল কাশেম বলেন, ছোটবেলা থেকেই এ খেলা দেখে আসছি, আগে এ খেলা একাধারে এক সপ্তাহ চলতো।

সফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, এ বছর শুরুতে প্রশাসন খেলা নিষিদ্ধ করায় উপস্থিতি কম। তবুও অর্ধ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটেছে।

স্থানীয় আবু তাহের জানান, গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম খেলাধুলার মধ্যে হুমগুটি অন্যতম পুরোনো একটি খেলা, যা কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এই খেলা ধরে রাখতেই প্রতিবছর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

খেলাটি প্রাচীনকাল থেকে এ এলাকার ঐতিহ্যকে জানান দিয়ে আসছে। প্রতিবছর পৌষের কনকনে শীতের শেষ দিনে তালুক-পরগনা সীমান্তে খেলার আয়োজন করা হয়। জমিদার আমলে শুরু হওয়া আড়াইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে কেন্দ্র করে আনন্দে মেতে ওঠে গ্রামের প্রতিটি মানুষ।

ছোট ছেলে-মেয়েরা পরে নতুন জামা-কাপড়, গ্রামে গ্রামে জবাই হয় শতাধিক গরু-খাসি। ঘরে ঘরে তৈরি হয় শীতকালীন রসাল পিঠা-পায়েস-পুলি; আরও কত.

..কী। খেলার জন্য নানা গ্রামের মানুষের মাঝে কিছুদিনের জন্য হলেও বাড়ে ভ্রাতৃত্ববোধ। এ আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয়রা বেড়াতে আসেন।

এদিন গ্রামের নারী-পুরুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। খেলা শুরুর দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। শেষ বিকেলে হাজারো খেলোয়াড়ের পৃথক মিছিল উপস্থিত হয় বড়ইআটা বন্দে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা মুক্তাগাছা, ত্রিশাল ও সদর থেকে শত শত মানুষ মাঠের চারপাশে জড়ো হন। কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর একপর্যায়ে আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যদিয়ে খেলা শুরু হয়।

হাজারো মানুষের ভিড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায় ৪০ কেজি ওজনের পিতলের গুটি। এক গুটির দখল নিতে গ্রামের লাখো জনতার লড়াই। তবে রেফারিবিহীন এ খেলায় শুরু থেকে গুটি নিয়ে ব্যাপক কাড়াকাড়ি হলেও কোনও মারামারি হয় না। ঘণ্টায় ঘণ্টায় খেলার রং বদলায়।নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয় খেলায়। খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট পেরিয়ে গুটি গুম না হওয়া পর্যন্ত চলে খেলা। অনেক সময় সারা রাত চলার পর শেষ হয় পরদিন ভোরবেলা।

কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। নানারকম প্রচলিত গ্রামীণ আয়োজন এখন অনেক কমে গেছে। দেশের যুবসমাজ শিল্প-সংস্কৃতি ভুলে যেতে বসেছে। পুরোনো সংস্কৃতি তাদের সামনে তুলে ধরতে এ ধরনের প্রতিযোগিতার বিকল্প নেই। ঐতিহ্যবাহী এ হুমগুটি খেলার প্রতি মনের অজানা টানে মানুষ প্রতিবছর তালুক-পরগনা সীমান্তে ছুটে আসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তাগাছার জমিদার শশীকান্তের সঙ্গে ত্রিশালের হেমচন্দ্র রায় জমিদারের প্রজাদের মধ্যে তালুক-পরগনা জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধ নিস্পত্তির জন্য তালুক-পরগনা সীমান্তে এ খেলার আয়োজন করে। খেলার শর্ত ছিল যেদিকে গুটি যাবে তা হবে তালুক, পরাজিত অংশের নাম হবে পরগনা। সে থেকে প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য জমিদারদের এ পাতানো খেলা চলছে বছরের পর বছর ধরে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ল ক পর উপস থ ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিএল: তিন সেঞ্চুরি ও মিরপুরে উইকেটের মিছিল

জাতীয় ক্রিকেট লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম দিন সেঞ্চুরি হয়েছে তিনটি। ময়মনসিংহ বিভাগের দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও মাহফিজুল ইসলাম রবিন সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ওপেনার সাদিকুর ইসলাম ছুঁয়েছেন তিন অঙ্ক। 

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বড় দৈর্ঘর ক্রিকেট ফিরলেও ব‌্যাটসম‌্যানদের ব‌্যাট হাসেনি। প্রথম দিনই ১৩ উইকেট গেছে মিরপুরের ২২ গজে। টস জিতে আগে ব‌্যাটিং করতে নেমে খুলনা সবকটি উইকেট হারিয়ে ১২১ রানে গুটিয়ে যায়। জবাব দিতে নেমে রাজশাহী ৮৭ রান তুলতে হারায় ৩ উইকেট। 

আরো পড়ুন:

২০২৭ পর্যন্ত টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল

রশিদের ভেল্কিতে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ আফগানিস্তানের

পুরো দিন ৬৫ ওভারের মতো খেলা হয়েছে। আলোক স্বল্পতা ও বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ না হলে উইকেটের মিছিল বাড়তেও পারতো। খুলনার হয়ে এই ম‌্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২ রানে থেমে যায় তার ইনিংস। এছাড়া সৌম‌্য ৬, এনামুল ১২ রান করেন। রাজশাহীর হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন নিহাদউজ্জামান ও এস এম মেহরব হোসেন। মিরাজ বোলিংয়ে অবশ‌্য ২ উইকেট নিয়েছেন। টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে ২ রানে আউট করার পর ৩৯ রানে ফেরান সাব্বির হোসেনকে।  

কক্সবাজারের একাডেমি মাঠে রংপুর বিভাগের বিপক্ষে ২ উইকেটে ২৮১ রান তুলেছে ময়মনসিংহ বিভাগ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাহফিজুল। ২২৮ বলে ১২৭ রান করেন ১৩ চার ও ২ ছক্কায়। এছাড়া নাঈম শেখ ১৬২ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ১১১ রান করেন। আইচ মোল্লা ২৩ ও আব্দুল মজিদ ৮ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। 

পাশের মাঠেই বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগ ৪ উইকেটে ২৬০ রান তুলেছে। ওপেনার সাদিকুর ১৭৪ বলে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ১২২ রান করেন। সেঞ্চুরির অপেক্ষায় আছেন মুমিনুল হক। ৮৪ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন তিনি।

সিলেটের একাডেমি মাঠে খেলা হয়েছে মাত্র ৪৩.১ ওভার। আগে ব‌্যাটিংয়ে নামা ঢাকা বিভাগ ৫ উইকেটে ১২০ রান তুলেছে। বৃষ্টি ও মাঠ ভেজা থাকায় দিনের খেলা পুরোটা সময় হয়নি। ঢাকার অধিনায়ক মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ৩৬ ও তাইবুর রহমান ১২ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। এর আগে মার্শাল ২৮, জিসান ২০ রান করে আউট হন। 
 

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ
  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • দেশজুড়ে বৃষ্টি ও তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • জুলাই সনদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে: মামুনুল হক
  • এনসিএল: তিন সেঞ্চুরি ও মিরপুরে উইকেটের মিছিল
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ