ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনার একটি প্রধান কারণ হলো, পানিসম্পদ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন। ভারত ইতোমধ্যেই চেনাব নদীর পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। আর এতেই পাকিস্তান আরও সংকটে পড়েছে। এই পানি নিয়ে টানাপোড়েনে দুই দেশের সংঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পাদিত দীর্ঘদিনের ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ থেকে সরে এসেছে ভারত। দেশটি চেনাবের পানিপ্রবাহও কমিয়ে দিয়েছে। এতে পাকিস্তান পানি সংকটের মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় ইসলামাবাদ খুবই অসন্তুষ্ট। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধও স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।    

পানি চুক্তি স্থগিত করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি ভারত। গত বুধবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ৯টি স্থানে সামরিক হামলা চালায় দেশটি। সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে পারাপারও বন্ধ করেছে দুই দেশ। পাকিস্তানকে পানির সংকটে ফেলতে চায় ভারত। পানি চুক্তির সব বিধান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় দিল্লি।

১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সিন্ধু পানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল সিন্ধুর ব্যবস্থার পানিবণ্টন নিয়ন্ত্রণ করা। চুক্তি অনুসারে, ভারত পূর্বাঞ্চলের নদী রাবি, বিয়াসসহ তিনটি নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। অন্যদিকে পাকিস্তান পশ্চিমের 

তিনটি নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, যা দেশটির জলসম্পদের ৮০ শতাংশ প্রয়োজন মেটায়। চুক্তি অনুসারে কোনো পক্ষ এককভাবে চুক্তি থেকে সরে যেতে পারবে না। কিন্তু ভারত একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে গেছে।   

নদীগুলোর পানিপ্রবাহের ধরন ও নদী নেটওয়ার্ক কাঠামো প্রক্রিয়া ভারতের অনুকূলে। এজন্য ভারত পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিলে তা পাকিস্তানের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থায় সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করায় পাকিস্তানের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে। ভারত নদীগুলোর পানিপ্রবাহের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এতে পাকিস্তানে পানির ঘাটতি কিংবা বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। 

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ওই সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তাদের অধিকাংশই পর্যটক। ভারত এই হামলায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করে। ভারতের জনগণের মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার দাবি উঠতে থাকে। এই অবস্থায় গত বুধবার ভারত পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর আগে দেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে পানিপ্রবাহ বন্ধ করার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বিশ্বব্যাংকও পানি চুক্তি স্থগিত করার বিষয়ে ভারতের বিরোধিতা করেছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিপ্রবাহ বন্ধ করা প্রকৃতির স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটানোর শামিল। এই পরিস্থিতির ফলাফল অত্যন্ত খারাপ হতে পারে। মানবসভ্যতা টিকে থাকার সঙ্গে যা সরাসরি জড়িত। এই অবস্থায় ভারতের পদক্ষেপে পাকিস্তান স্বাভাবিকভাবে ক্ষুব্ধ হতে বাধ্য। কারণ পানির প্রবাহ কমে গেলে নদীগুলো শুকিয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দেখা দিতে পারে খরা, অনাবৃষ্টি কিংবা দুর্ভিক্ষ। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পানিপ্রবাহ সংকটে উত্তপ্ত আবহাওয়া বিরাজ করে থাকে। 

ভারত-পাকিস্তানের এই জলযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে। নিজ স্বার্থে প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিলে সেই ক্ষতি ভারতের দিকেও পরিচালিত হতে পারে। এই জলযুদ্ধ বিশ্বের বড় বড় যুদ্ধের কারণে হতে দেখা গেছে। নীল নদের পানিপ্রবাহ নিয়ে যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে। জর্ডান নদীর প্রবাহ রোধ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতেরও একটি কারণ। সূত্র: আলজাজিরা, জিও নিউজ।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প ন প রব হ এই অবস থ য়

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, জড়িতদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী ও নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তারের সময় বেঁধে দিয়েছে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ডাকসু, বিকেলে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পৃথক কর্মসূচি পালন করে।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ডাকসু। সমাবেশ থেকে ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার ভেতরে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং এই ন্যক্কারজনক ঘটনার নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তার করে বিচার কার্যকর করতে হবে।’

ডাকসুর এজিএস আরও বলেন, ‘যারা এ ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, তাদের যদি এই সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে না পারে, তাহলে এই সরকার জনতার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রমাণিত হবে।’

ডাকসুর পরিবহন সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ার করতে চাই—যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের শনাক্ত করা না হয় এবং এর পেছনের রাঘববোয়ালদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তবে বাংলাদেশে দাবানল জ্বলবে।’

এর আগে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দর ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এতে সংগঠনের আহ্বায়ক রিয়াদুস জুবাহ ওসমান বলেন, ‘এই হামলার সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তিকে দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করতে হবে। যারা এ ঘটনার নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী, সেই মাস্টারমাইন্ডদেরও দৃশ্যমান আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই এখন একমাত্র পথ।’

এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেছে। বিকেলে ছাত্রদল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শিববাড়ি ও জগন্নাথ হল এলাকা ঘুরে আবার জরুরি বিভাগের সামনে এসে শেষ হয়।

বিক্ষোভে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নেতা–কর্মীরা ‘হাদিকে গুলি কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’, ‘হাদির ওপর হামলা কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’, ‘ছাত্রদলের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

ছাত্রদলের নেতারা ওসমান হাদির ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ