‘অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলাম, কারণ আমি যা চাচ্ছিলাম, পাচ্ছিলাম না’
Published: 9th, May 2025 GMT
প্রথম আলো
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে নতুন অধ্যায় ড্রোন
কাশ্মীর ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান। এর ফলে উপমহাদেশজুড়েই চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে যে সংঘাত চলছে, সেটা আদৌ যুদ্ধ কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে অনেকে এটাকে বিশ্বের প্রথম ‘ড্রোনযুদ্ধ’ বলেও মন্তব্য করছেন।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলছে, বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিবেশী ভারতের ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এসব ড্রোন দেশটির আকাশপ্রতিরক্ষা ভেদ করে লাহোর, করাচিসহ প্রধান নগরীতে প্রবেশ করে। হামলায় অন্তত একজন সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
এর ঘণ্টাখানেক পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজ পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় আঘাত করা হয়েছে। এতে লাহোর শহরের বিমানবাহিনীর রাডার অকেজো হয়ে যায়। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত ও ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে। তবে আমাদের দেশের সেনারা সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ড্রোনগুলো ভূপাতিত করে।
এদিকে আজও ৪৮টি হারপ ড্রোন ভূপাতিত করার বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। তবে ভারতের পক্ষে থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় এবারই প্রথম ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ড্রোন হামলা ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্পষ্টতই ভারত-পাকিস্তান সংঘাত একটি নতুন ড্রোন যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে ‘অদৃশ্য চোখ’ ও মনুষ্যবিহীন ড্রোনযুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণ করছে। সুতরাং, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আকাশে দক্ষরাই ড্রোনযুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ হাতে পাবে।
এর আগের দিন (বুধবার) পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করে ভারত। ইসলামবাদ জানিয়েছে, এই হামলায় দেশটির অন্তত ৩১ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থাপনায় এই হামলা চালায় ভারত। এর আগে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চারবার যুদ্ধ হয়েছে। তবে এবারের যুদ্ধের তীব্রতা অনেক বেশি। কারণ, ভারী অস্ত্র ব্যবহারের ফলে নিয়ন্ত্রণরেখার এলাকার লোকজন সেখান থেকে সরে গেছে।
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের শুরু
ভারত ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে। এর পরদিন ১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছিল। এক মাস পর ২১ অক্টোবর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর আরও তিনটি যুদ্ধ হয়েছে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৫ জন পর্যটক প্রাণ হারান। এর মাধ্যমে পঞ্চমবারের মতো যুদ্ধ শুরু হয়। ভারতের দাবি, পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছে। তবে পাকিস্তান এই হামলায় জড়িত থাকার কথা সবসময় অস্বীকার করছে। ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘাতের তীব্রতা বেড়ে যায়।
ড্রোন হামলা নিয়ে যা বলছে পাকিস্তান
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমাদ শরীফ চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘সারা রাত দেশে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। আকাশপ্রতিরক্ষা ভেদ করে লাহোর, করাচিসহ প্রধান প্রধান নগরীতে ড্রোন প্রবেশ করে। এসব ড্রোনের মাধ্যমে দেশের জনবহুল বড় বড় নগরীকে লক্ষ্য করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ড্রোনগুলো ভূপাতিত করে। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলের তৈরি ২৫টি হারপ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।’
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আরও বলেন, ‘ড্রোন হামলায় দক্ষিণ সিন্ধু প্রদেশে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন এবং আহত হন আরও একজন। এছাড়াও লাহোরের একটি সামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলা করা হয়, সেখানে চার সৈন্য আহত হন। সেখানকার সামরিক স্থাপনায় সামান্য ক্ষতি হয়।’
তিনি এই হামলাকে ‘নগ্ন আগ্রাসন’ এবং ‘গুরুতর উস্কানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আহমাদ শরীফ প্রতিশ্রুতি দেন, এসব হামলায় প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত পাকিস্তান।
আহমাদ শরীফ বলেন, ‘মনে হচ্ছে, ভারত হেরে গেছে। যুক্তিসঙ্গত পথে না গিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে তৈরি করছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যেকোনো ধরণের হুমকির মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
ড্রোন হামলা নিয়ে ভারত কি বলছে
পাকিস্তানের সংবাদ সম্মেলনের এক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ৭ ও ৮ মে রাতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের অনেকগুলো সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করতে চায়। এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের সব কটিই ইন্টিগ্রেটেড কাউন্টার ইউএএস গ্রিড এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা) নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে সামরিক বাহিনীর অনেকগুলো স্থাপনা লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল পাকিস্তান। সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ এখন সংগ্রহ করা হচ্ছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে বিমানপ্রতিরক্ষা রাডার এবং সিস্টেমগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ভারতের প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানের মতো ছিল। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, লাহোরে একটি বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় হয়েছে।
তবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতে হামলার চেষ্টা করার ভারতের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধ কলেজের অধ্যাপক জাহারা মাতিসেক বিবিসিকে বলেছেন, পরস্পরের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা কয়েক দশক ধরে চলা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভারত-পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন বিপজ্জনক অধ্যায় চিহ্নিত করেছে। কারণ, অস্থিতিশীল সীমান্তে উভয় পক্ষই মানবহীন অস্ত্র একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
ভারত ইসরায়েলে তৈরি হারপ ও হেরন ড্রোন ব্যবহার করছে। আর পাকিস্তান নিজস্ব ড্রোনের পাশাপাশি চীন ও তুরস্কের ড্রোন আকাশে ওড়াচ্ছে। মূলত লেজার নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র; বোমা, ড্রোন ও মনুষ্যবিহীন বিমানবাহী যান আধুনিক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
অধ্যাপক ম্যাটিসেক বলেন, শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দমনেও ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি অ্যান্টি রেডিয়েশন মিসাইলের লক্ষ্যবস্তুও ড্রোন দিয়ে নির্ধারণ করা যেতে পারে। ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়ই তাদের যুদ্ধে এটি করে থাকে।
ভারত সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলারের ৩১টি এককিউ-নাইনবি প্রিডেটর ড্রোন কেনার চুক্তি করেছে, যেগুলো ৪০ ঘণ্টা আকাশে উড়তে পারে। লাহোরভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এজাজ হায়দার বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তানের ড্রোন বহর ‘বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময়’। এ তালিকায় দেশে তৈরি ও আমদানি করা এক হাজারের বেশি ড্রোন রয়েছে। চীন ও তুরস্ক থেকে ড্রোন আমদানি করে থাকে পাকিস্তান।
কোন কোন স্থান থেকে ড্রোন ভূপাতিত করে পাকিস্তান
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমাদ শরীফ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ড্রোনগুলো গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে ভারত জনবহুল শহরে হামলা চালায়।
লাহোর: পূর্ব পাঞ্জাব অঞ্চলের রাজধানী লাহোর। এর জনসংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ। জনসংখ্যায় এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিজওয়ান সাংবাদিকদের জানান, ওয়ালটন বিমানবন্দরের কাছে একটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। ওয়ালটন বিমানবন্দরটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিচালনা করে এবং রাডারের জন্য ব্যবহার করে। বিমানবন্দরটিতে প্রশিক্ষণ স্কুলও রয়েছে।
গুরজানওয়ালা: এটি পাঞ্জাবের চতুর্থ বড় শহর। এর জনসংখ্যা ২৫ লাখ।
চাকওয়াল: এটিও পাঞ্জাবের একটি শহর। এর লোকসংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ।
রাওয়ালপিন্ডি: পাঞ্জাবের একটি শহর রাওয়ালপিন্ডি। এখানে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এই শহরের লোকসংখ্যা ৬০ লাখের কাছাকাছি।
অ্যাটক: রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে অ্যাটক শহরের অবস্থান। এখানে একটি সেনানিবাস রয়েছে, যার জনসংখ্যা ২১ লাখ।
নানকানা সাহিব: এটি পাঞ্জাবের একটি শহর। এর জনসংখ্যা মাত্র ১ লাখ। কিন্তু লোকসংখ্যার তুলনায় এর তাৎপর্য অনেক বেশি। কারণ, নানাকানা সাহিব শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জন্মস্থান। শিখদের কাছে এই শহরের গুরুত্ব অনেক বেশি।
বাহাওয়ালপুর: পাঞ্জাবের একটি শহর। এর জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। মিয়ানো: সিন্ধু প্রদেশের একটি শহর মিয়ানো। পাকিস্তানের প্রধান তেলক্ষেত্র এখানে অবস্থিত।
চর: দক্ষিণ-পূর্ব সিন্ধু প্রদেশের উমেরকোট জেলার একটি ছোট শহর।
ঘোটকি: উত্তর সিন্ধুর একটি শহর ঘোটকি, যা খেজুর গাছের জন্য পরিচিত। এর জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার।
করাচি: পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর করাচি। এর জনসংখ্যা দুই কোটি। এখানে দেশের বড় সমুদ্রবন্দর রয়েছে।
ভারতের কোন কোন শহরকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তান
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দেশটির ১৫টি শহরে হামলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেগুলো ভূপাতিত করা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ৭ ও ৮ মে রাতে কাশ্মীরের অবন্তিপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, কাপুরথালা, জলান্ধর, লুধিয়ানা, আদমপুর, ভাতিন্ডা, চণ্ডীগড়, নাল, ফালোদি, উত্তরলাই, ভুজসহ ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে সামরিক বাহিনীর অনেকগুলো স্থাপনা লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল পাকিস্তান।
অবন্তিপুরা: ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ঝিলাম নদীর তীরে অবস্থিত অবন্তিপুরা শহর। এর জনসংখ্যা ১২ হাজার।
শ্রীনগর: ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকার বৃহত্তম শহর শ্রীনগর। এর জনসংখ্যা ১২ লাখ।
জম্মু: ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শীতকালীন রাজধানী জম্মু। এর জনসংখ্যা ৫ লাখ।
পাঠানকোট: ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাঠানকোট ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের একটি প্রধান কেন্দ্র। এখানে এশিয়ার বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি অবস্থিত।
অমৃতসর: ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের এই শহর অমৃতসর। এর জনসংখ্যা ১১ লাখ। এখানে স্বর্ণমন্দির অবস্থিত, যা শিখ ধর্মের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান।
কাপুরথালা: ভারতীয় পাঞ্জাবের ১ লাখ জনসংখ্যার একটি ছোট শহর।
জলন্ধর: এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯ লাখ।
লুধিয়ানা: ভারতীয় পাঞ্জাবের সবচেয়ে জনবহুল শহর লুধিয়ানা। এখানে ১৬ লাখ লোক বাস করেন।
আদমপুর: পাঞ্জাবের একটি ছোট শহর। এখানে মাত্র ২০ হাজার লোকের বাসস্থান। কিন্তু এখানেই ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবাহিনী ঘাঁটি অবস্থিত।
ভাটিন্ডা: ভারতীয় পাঞ্জাবের একটি শহর ভাটিন্ডা। এর জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।
চণ্ডীগড়: ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্যের একটি শহর চণ্ডীগড়। প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানার রাজধানী এই চণ্ডীগড়। এর জনসংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।
নাল: রাজস্থানের মরুভূমি রাজ্যের ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে একটি ছোট্ট শহর নাল। এখানে একটি বেসামরিক বিমানবন্দর এবং একটি বিমানবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে।
ফালোদি: রাজস্থানের একটি শহর ফালোদি। এর জনসংখ্যা ৬৬ হাজার। ফালোদি লবণ শিল্পের জন্য বিখ্যাত।
উত্তরলাই: রাজস্থানের একটি ছোট গ্রাম উত্তরলাই। যেখানে বিমানবাহিনী একটি স্টেশন অবস্থিত।
ভুজ: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের একটি শহর ভুজ। এর জনসংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার।
পাকিস্তানে হামলায় কোন ড্রোন ব্যবহার করেছিল ভারত
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমাদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ইসরায়েলের তৈরি হারপ ড্রোন দিয়ে হামলা করে ভারত।
টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএআই) হারপ ড্রোন তৈরি করে থাকে। ড্রোনগুলো ঘুরে ঘুরে লক্ষ্য খুঁজে বের করে এবং অপারেটরের নির্দেশ পেলে লক্ষ্যবস্তুর ওপর সরাসরি আঘাত হানে। আঘাত হানার সময় ড্রোনগুলো নিজেকেও ধ্বংস করে দেয়। এগুলো আত্মঘাতী ড্রোন বা কামিকাজে ড্রোন নামেও পরিচিত।
আইএআইয়ের তৈরি হারপ ড্রোনকে সবচেয়ে মারাত্মক বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটি সাধারণ ইউএভি এবং ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতাকে একত্রিত করে। দুই মিটার বা ৬ দশমিক ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ড্রোন বিমান শনাক্তকরণ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যেতে পারে। এটি ২০০ কিলোমিটার (১২০ মাইল) পর্যন্ত উড়তে পারে। প্রায় ছয় ঘণ্টা উড়তে পারে এই ড্রোন। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে ব্যর্থ হলে উৎক্ষেপণ ঘাঁটিতে ফিরে আসতে পারে হারপ।
টিআরটি গ্লোবালের তথ্যমতে, গত এক দশকে ভারত ইসরায়েল থেকে ২.৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে। যার মধ্যে রয়েছে রাডার, নজরদারি ড্রোন ও যুদ্ধের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র।
হারপ ড্রোন আগে ২০১৬ ও ২০২০ সালে নাগোর্নো-কারাবাখ সংঘাতে ব্যবহৃত হয়। আজারবাইজান এই ড্রোন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। সেনা বহনকারী একটি বাস লক্ষ্য করে হামলা চালায় এই ড্রোন, এতে অন্তত ছয় সেনা নিহত হয় ও বাসটি ধ্বংস হয়ে যায়।
জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় বিমানবাহিনী হারপ ড্রোনের অন্যতম বড় গ্রাহক। ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে ভারত ২৫টি হারপ ড্রোন কিনে। এগুলোর প্রতি ১০ ইউনিটের মূল্য ১০০ মিলিয়ন ডলার।
টিআরটি গ্লোবালের তথ্যমতে, গত এক দশকে ভারত ইসরায়েল থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে। যার মধ্যে রয়েছে রাডার, নজরদারি ড্রোন ও যুদ্ধের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র।
পাকিস্তানে ড্রোন হামলা কেন তাৎপর্যপূর্ণ?
ভারতের একাধিক ড্রোন পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চলে উড়ে বেড়াচ্ছে। একটি সামরিক অবস্থানে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছে। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লঙ্ঘন করার এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আঘাত করার ক্ষমতা ভারতের রয়েছে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মতে, এই হামলাগুলো ‘চরম উস্কানিমূলক কাজ’, যা দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সহিংসতার তীব্রতা বৃদ্ধি করতে পারে। দেশের অভ্যন্তরে ড্রোন ঢুকে পড়ার ফলে পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পাকিস্তানের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়- ইসলামাবাদ, করাচি, লাহোর ও শিয়ালকোট বিমানবন্দরের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
ড্রোন হামলার কেমন প্রভাব পড়েবে
কাম্মীরকে পৃথিবীর ভূস্বর্গ বলা হয়। মনোরম হৃদ, তৃণভূমি, তুষারবৃত পাহাড়ের জন্য বিখ্যাত কাশ্মীর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই ভূমি এখন ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করেছে। ভারত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ১ লাখ ১ হাজার ৩৮৭ বর্গ কিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। পাকিস্তান আজাদ কাশ্মীরের ১৩ হাজার ৩৯৭ বর্গ কিলোমিটার ও গিলগিত-বালতিস্তানের ৭২ হাজার ৪৯৫ কিলোমিটার অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।
ভারত পাকিস্তান ছাড়াও কাশ্মীরের শাসন করে চীনও। তবে ভারত কাশ্মীরের পুরোটা দাবি করে। পাকিস্তানও কাশ্মীরের মালিকানা চায়। ভারত-পাকিস্তানের চারটি যুদ্ধের মধ্যে তিনটি হয়েছে কাশ্মীর নিয়ে, যা ২২ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে (৮ হাজার ৫৭০ বর্গমাইল) বিস্তৃত।
বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দোষারোপ করে আসছে ভারত। তবে পাকিস্তান জোর দিয়ে বলেছে, তারা কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে কেবল নৈতিক এবং কূটনৈতিক সমর্থন প্রদান করে।
নয়াদিল্লি এপ্রিলের হামলার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে। ভারতের দাবি, টিআরএফ পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তবে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইসলামাবাদ। এতে জড়িত থাকারা কথা অস্বীকার করে ‘স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ’ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান।
পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটির জনসংখ্যা ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন। এরই মধ্যে ড্রোন হামলা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আশঙ্কা জাগিয়ে তুলেছে। তারা বলছেন, এই উত্তেজনা বিপর্যয়কর ডেকে আনতে পারে।