বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী শনিবার সকালে বনানীর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে দুপুরে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। মুস্তাফা জামান আব্বাসী নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী।

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘স্মৃতি যতই মধুর হোক, কিছু সময় তা বিষাদের কারণ হয়ে ওঠে। ঠিক এখন যেমন আব্বাসী ভাইয়ের [মুস্তাফা জামান আব্বাসী] সান্নিধ্যে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পড়ছে, আর পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলো বিষাদ করে তুলছে। এই সংগীত মহিরুহকে হারিয়ে ফেলার বেদনায় এখন ম্লান হয়ে গেছে ফেলে আসা সময়ের আনন্দময় মুহূর্তগুলো। যাঁর স্নেহ ছায়াতলে থেকে সংগীত সাধনার অনুপ্রেরণা পেয়েছি, সেই মানুষটি আজ নেই– এটি বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে।’ 

সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন, ‘বারবার মনে পড়ছে, ১৯৫৮ সালের সেই দিনগুলোর কথা; যে বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। ওই বছরেই আব্বাসী ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় এবং সেই পরিচয় গাঢ় হতেও সময় লাগেনি। আব্বাসী ভাই মাঝে মধ্যে আমাকে গান গাওয়ার অনুরোধ করতেন। আমার কণ্ঠ আর গায়কীর প্রশংসা করতে এতটুকু কুণ্ঠা ছিল না তাঁর। কোনো কোনো সময় এত প্রশংসা করতেন যে, নিজেকেই সংকুচিত করে ফেলা ছাড়া উপায় থাকত না। তাঁর মতো এত বড় মাপের শিল্পীর প্রশংসা পাওয়া সৌভাগ্যের বলেই মনে করতাম। যেজন্য বড় ভাইয়ের অনুরোধ ফেলতে পারিনি কখনও। যখনই গান শুনতে চেয়েছেন, মন-প্রাণ উজাড় করে গান গাওয়ার চেষ্টা করেছি। যাদের অনুপ্রেরণায় গানের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া, আব্বাসী ভাই তাদের অন্যতম একজন। আজ তাঁর না থাকা কত বড় শূন্যতার তা আসলে বলে বোঝানো যাবে না।

সৈয়দ আবদুল হাদীর কথায়, ‘মুস্তাফা জামান আব্বাসীর চিরবিদায়ে একদিকে আমি যেমন সংগীতাঙ্গনের এক বড় ভাইকে হারিয়ে, তেমনই এই দেশ আর কোটি সংগীত অনুরাগী হারিয়েছে লোকসংগীতের এক মহিরুহকে। তাঁর মতো জ্ঞানী-গুণী মানুষ এ সময়ে সত্যি খুঁজে পাওয়া কঠিন। তারপরও আমি বিশ্বাস করি, মুস্তাফা জামান আব্বাসী চিরকাল মানুষের মনে বেঁচে থাকবেন তাঁর অনবদ্য গায়কী আর সমস্ত সৃষ্টিশীল কাজের জন্য।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পাবনা-৩: ‘বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন না করলে চাচা-ভাতিজার একজন স্বতন্ত্র হব’

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের মনোনয়ন বাতিল করে স্থানীয় নেতাকে প্রার্থী করার দাবিতে মশাল মিছিল ও পথসভা হয়েছে। 

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে চাটমোহর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা  মিছিল বের করেন। পুরো শহর প্রদক্ষিণ শেষে মিছিলটি জিরো পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

গাইবান্ধা-৪: ধানের শীষের প্রার্থী বদলের দাবিতে মশাল মিছিল 

টাঙ্গাইলে বিএনপি নেতাকে বহিষ্কারের দাবিতে মিছিল

সভায় বক্তব্য দেন- সাবেক সংসদ সদস্য ও চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক সদস্য সচিব ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা।

হাসাদুল ইসলাম হীরা বলেন, “মাঝে মাঝে আপনারা বলেন, বহিষ্কার করে দেব, ওই ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। দীর্ঘ ১৭ বছর আওয়ামী লীগের দমন পীড়ন ও পুলিশের সঙ্গে লড়াই করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আপনার পায়ে ভর করে দাঁড়িয়েছিলাম না। চাটমোহরবাসীর ভালবাসায় টিকে আছি, আগামীতেও থাকব ইনশাল্লাহ। জুজুর ভয় দেখাবেন না। বহিষ্কার করতে চান করে দেন। প্রয়োজনে রাজনীতি করব না। একটা কথা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, দল যদি প্রার্থী পরিবর্তন না করে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে; তাহলে আপনারা নিশ্চিত থাকেন, হয় চাচা না হয় ভাতিজা, আমরা যে কোনো একজন নির্বাচন করব।” 

তিনি বলেন, “দলে যদি ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না থাকে, তাহলে সেই দল কখনো ক্ষমতায় আসতে পারে না। আমার নেতা বারংবার বলেছিলেন, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করব। তাই বলছি, পাবনা-৩ এর মনোনয়ন বাতিল করে যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তাহলে সেই ব্যর্থতা আপনাদের। যদি তাই হয়, তাহলে আপনারা নিশ্চিত থাকেন চাটমোহর থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন চাচা না হয় ভাতিজা করবে। আমরা পাবনা-৩ এর কোনো ভোটারকে নিরাশ হতে দেব না। আমরা জীবনবাজি রেখে হলেও পাবনা-৩ এর সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছি। প্রার্থী পরিবর্তন না করা পর্যন্ত আমাদের লাগাতার আন্দোলন চলবে, ইনশাল্লাহ।” 

হাসাদুল ইসলাম হীরা বলেন, “২২ নভেম্বর কৃষিবিদ তুহিন সাহেব চাটমোহরে একটি প্রোগ্রাম আহ্বান করেছেন। যেখানে কেন্দ্রীয় কৃষক দল থেকে সারাদেশে কৃষক দলের নেতাদের চিঠি দিয়ে ডাক দেওয়া হয়েছে পাবনা-৩ এর জন্য। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মী নিয়ে এসে যদি পাবনা-৩ এ তার জন্য ভোট করতে হয়, তাহলে তার চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না। পাবনা-৩ এ ভোট করতে হলে পাবনা-৩ এর মানুষকেই দরকার। বহিরাগত মানুষকে দিয়ে পাবনা-৩ আসন উদ্ধার হবে না। পাবনা-৩ উদ্ধার করতে হলে পাবনা-৩ এর লোকাল সন্তানকে দিয়েই উদ্ধার করতে হবে। তাই আমি সেন্ট্রাল নেতাদের বলব, এখনো সময় আছে আপনারা মাঠ জরিপ করে দেখে নিন, আপনারা ভুল জায়গায় ভুল মানুষকে মনোনয়ন দিয়েছেন। যদি নেতাকে খুশি করতে চান তাহলে তাকে কোনো টেকনোক্যাট মন্ত্রী বানিয়ে দিন। যদি আসন জিততে চান তাহলে পাবনা-৩ এর মনোনয়ন বাতিল করে নতুন করে মনোনয়ন দিতে হবে। যদি তা না করে আপনাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তাহলে এই আসনে বিএনপির ভরাডুবি হবে। এর জন্য দায়ী থাকবেন আপনারা। আমরা দায়ী থাকব না। কারণ সাধারণ মানুষ আমাদের কথায় ভোট দেবে না। তারা সবাই চাচ্ছে স্থানীয় সন্তানকে ভোট দিতে। ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে পাবনা-৩ উদ্ধার হবে না।” 

“আমি ও আনোয়ার চাচা দলের হাই কমান্ডের সঙ্গে বসেছিলাম। সেখানেও আমরা একই কথা বলেছি। যার ৫ পার্সেন্ট জনসমর্থন নাই, তাকে যদি আপনারা মনোনয়ন দেন, তাহলে তিনি নির্বাচনে জিততে পারবেন না। যদি দলের কাছে একটা আসনের চাইতে একটা নেতা বড় হয়, তাহলে এই নেতাকে (কৃষিবিদ তুহিন) মনোনয়ন দেওয়া সঠিক আছে। আর যদি আসন জিততে হয় তাহলে পাবনা-৩ এর প্রার্থী পরিবর্তন করে স্থানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। যদি প্রার্থী পরিবর্তন না করেন তাহলে নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য আমি সেন্ট্রাল নেতাদেরকে দায়ী করব” যোগ করেন তিনি।

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মনে হয়েছে, আমি মারা গেলে তো মারা গেলাম, বাচ্চাগুলো তো বাঁচবে।’
  • ‘এক টাকায়’ ৫০ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন যিনি
  • টাইটানিক যাত্রীর সোনার ঘড়ি বিক্রি হলো সাড়ে ২৮ কোটি টাকায়
  • পাবনা-৩: ‌‘বহিরাগত হওয়ার প্রশ্নই আসে না, যারা বলছেন ভুল বলছেন’
  • ভূমিকম্পে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত, আগামীকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
  • রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা: দশক ছাড়িয়ে সমগ্রতার ঘণ্টাধ্বনি
  • ‘রাজসাক্ষী’কে কি সাজা দেওয়া যায়
  • সংস্কৃতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান শিল্পী–সংস্কৃতিকর্মীদের
  • কুষ্টিয়ায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে কৃষক নিহত
  • পাবনা-৩: ‘বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন না করলে চাচা-ভাতিজার একজন স্বতন্ত্র হব’