‘যাদের অনুপ্রেরণায় এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া, আব্বাসী ভাই তাদের একজন'
Published: 10th, May 2025 GMT
বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী শনিবার সকালে বনানীর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে দুপুরে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। মুস্তাফা জামান আব্বাসী নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী।
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘স্মৃতি যতই মধুর হোক, কিছু সময় তা বিষাদের কারণ হয়ে ওঠে। ঠিক এখন যেমন আব্বাসী ভাইয়ের [মুস্তাফা জামান আব্বাসী] সান্নিধ্যে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পড়ছে, আর পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলো বিষাদ করে তুলছে। এই সংগীত মহিরুহকে হারিয়ে ফেলার বেদনায় এখন ম্লান হয়ে গেছে ফেলে আসা সময়ের আনন্দময় মুহূর্তগুলো। যাঁর স্নেহ ছায়াতলে থেকে সংগীত সাধনার অনুপ্রেরণা পেয়েছি, সেই মানুষটি আজ নেই– এটি বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে।’
সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন, ‘বারবার মনে পড়ছে, ১৯৫৮ সালের সেই দিনগুলোর কথা; যে বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। ওই বছরেই আব্বাসী ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় এবং সেই পরিচয় গাঢ় হতেও সময় লাগেনি। আব্বাসী ভাই মাঝে মধ্যে আমাকে গান গাওয়ার অনুরোধ করতেন। আমার কণ্ঠ আর গায়কীর প্রশংসা করতে এতটুকু কুণ্ঠা ছিল না তাঁর। কোনো কোনো সময় এত প্রশংসা করতেন যে, নিজেকেই সংকুচিত করে ফেলা ছাড়া উপায় থাকত না। তাঁর মতো এত বড় মাপের শিল্পীর প্রশংসা পাওয়া সৌভাগ্যের বলেই মনে করতাম। যেজন্য বড় ভাইয়ের অনুরোধ ফেলতে পারিনি কখনও। যখনই গান শুনতে চেয়েছেন, মন-প্রাণ উজাড় করে গান গাওয়ার চেষ্টা করেছি। যাদের অনুপ্রেরণায় গানের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া, আব্বাসী ভাই তাদের অন্যতম একজন। আজ তাঁর না থাকা কত বড় শূন্যতার তা আসলে বলে বোঝানো যাবে না।
সৈয়দ আবদুল হাদীর কথায়, ‘মুস্তাফা জামান আব্বাসীর চিরবিদায়ে একদিকে আমি যেমন সংগীতাঙ্গনের এক বড় ভাইকে হারিয়ে, তেমনই এই দেশ আর কোটি সংগীত অনুরাগী হারিয়েছে লোকসংগীতের এক মহিরুহকে। তাঁর মতো জ্ঞানী-গুণী মানুষ এ সময়ে সত্যি খুঁজে পাওয়া কঠিন। তারপরও আমি বিশ্বাস করি, মুস্তাফা জামান আব্বাসী চিরকাল মানুষের মনে বেঁচে থাকবেন তাঁর অনবদ্য গায়কী আর সমস্ত সৃষ্টিশীল কাজের জন্য।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে ব্রিটেনে কারিগরি শিক্ষার উত্থান
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্রুতগতিতে কর্মক্ষেত্রের দখল নেওয়ায় চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা তরুণদের মধ্যে। অনেকেই ‘হোয়াইট কলার’ চাকরিকে নিরাপদ মনে করছেন না আর। বরং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা এবং হাতে–কলমে দক্ষতার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়, এমন কারিগরি পেশার দিকে ঝুঁকছেন।
এমনই একজন ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মারিনা ইয়ারোশেঙ্কো। এআই যে অনেক অফিসভিত্তিক কাজ দখল করে নিতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন তিনি। বর্তমানে মারিনা লন্ডনের সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টার কলেজে প্লাম্বিং কোর্সে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ইউক্রেন থেকে আসা মারিনা বলছিলেন, ‘এটা এমন একটা কাজ, যেটা এআই নিতে পারবে না।’ তাঁর মতে, প্লাম্বিং বা প্রকৃত প্রকৌশল কাজের সূক্ষ্মতা এবং শারীরিক বাস্তবতা কোনো যন্ত্র পুরোপুরি অনুকরণ করতে পারে না। মারিনা বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই এআইকে কাজে লাগাব, কিন্তু অনেক কাজ আছে, যা শুধুই মানুষ করতে পারে—যেমন আসল প্লাম্বিং, তড়িৎকৌশল বা ইঞ্জিনিয়ারিং।
আরও পড়ুনযুক্তরাজ্যে নতুন যুগের পড়াশোনা: কোন বিষয়গুলো ট্রেন্ডে?২০ নভেম্বর ২০২৫এআইয়ের প্রভাব: বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাগ্রহ, কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি বাড়ছেব্রিটেনে এআইয়ের প্রভাবে বড় ধরনের চাকরির কাঠামোয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব পারসোনেল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিআইপিডি) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশটির ছয়জনের একজন নিয়োগদাতা মনে করছেন, আগামী ১২ মাসে এআইভিত্তিক টুলস ব্যবহারের কারণে তাঁরা কর্মীর সংখ্যা কমাতে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে সিডব্লিউসি (সিটি অব এয়েস্ট মিনস্টার কলেজ) গত তিন বছরে ইঞ্জিনিয়ারিং, কনস্ট্রাকশন এবং বিল্ট এনভায়রনমেন্ট কোর্সে ভর্তি বেড়েছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। কলেজের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ডেভিস মনে করেন, এআইয়ের অগ্রগতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়সংকুল ডিগ্রির প্রতি তরুণদের অনাগ্রহ—এ দুটি কারণেই কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
লন্ডনের ইউনাইটেড কলেজেস গ্রুপের অংশ সিডব্লিউসি মূলত একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
অন্যদিকে ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসের (টিইউসি) আগস্টের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের প্রতি দুজনের একজন এআইয়ের কারণে চাকরি হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সবচেয়ে উদ্বিগ্ন ২৫–৩৫ বছর বয়সীরা।
লন্ডনের কিংস কলেজের প্রভাষক এবং এআই গবেষক বোক ক্লেইন টিসেলিংক বলেন, এখন তরুণদের মধ্যে অনেক উদ্বেগ রয়েছে যে তাদের চাকরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাচ্ছে। কিংস কলেজ টিসেলিংকের গত অক্টোবরে এক গবেষণা প্রকাশ করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এআই-চালিত কর্মী ছাঁটাই জুনিয়র পদগুলোকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে। এর ফলে তরুণদের ক্যারিয়ারের সিঁড়িতে পা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
শিক্ষার্থী ওয়ার্কশপে কাজ শিখছেন