বরিশাল এক নদীবিধৌত জনপদ। এখানকার প্রতিটি ঘাট যেন বহন করে এক জলযাত্রার ইতিহাস—যার কেন্দ্রে ছিল স্টিমার। একসময় দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাত্রা স্টিমার ছাড়া কল্পনাও করা যেত না। সেই স্টিমার সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। দেড় শ বছরের ঐতিহ্য যেন থেমে যায় নীরবে, অবহেলায়।

তবে সেই থেমে যাওয়া ইতিহাস আবার ফিরে আসছে। গত শনিবার বিকেলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বরিশালের মানুষের জন্য সুখবর দেন—আবার চালু হচ্ছে স্টিমারসেবা। ঘোষণার পর থেকেই নগরের বাতাসে যেন ফিরে এসেছে পুরোনো সেই হুইসেলের শব্দ, স্টিমারের ছলাৎ ছলাৎ ছন্দ আর যাত্রার উত্তেজনা।

বান্দরোডের কীর্তনখোলা পাড়ের পরিত্যক্ত স্টিমারঘাটে এখনো প্রতিদিন কেউ না কেউ এসে দাঁড়ায়—কেউ স্মৃতিকাতর হয়ে, কেউ পুরোনো দিনের আশায়। এখন সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে।

বরিশাল বিএম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শাহ সাজেদা বললেন, ‘স্টিমারে ভ্রমণের কত স্মৃতি আমাদের। বাতাসে ভেসে আসত স্টিমারের গগনবিদারী হুইসেল। মানুষ ছুটে যেত ঘাটে। সে এক অন্য রকম অনুভূতি।’ তিনি জানান, আবার স্টিমার চালুর উদ্যোগে তিনি ভীষণ আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ।

স্টিমার ও লঞ্চ: সময়ের দুই প্রতিচ্ছবি

স্টিমার ও লঞ্চ—উভয়ই নৌযান। কিন্তু তারা যেন ভিন্ন দুই সময়ের প্রতিনিধি। স্টিমার ছিল একধরনের ভাসমান প্রাসাদ; যার চালনা শক্তি ছিল শুরুতে কয়লার আগুনে সৃষ্ট বাষ্পে, পরে ডিজেলে। এর বড় বৈশিষ্ট্য ছিল বিশালাকার প্যাডেল হুইল। কাঠের অভ্যন্তর, দোতলা কাঠামো, প্রশস্ত বারান্দা ও প্রথাগত আসবাব স্টিমারের যাত্রাকে করে তুলত স্মৃতিময়।

অন্যদিকে লঞ্চ হলো সময়ের তাগিদে উদ্ভূত আধুনিক এক মাধ্যম। আধুনিক ইঞ্জিনচালিত এ নৌযান বহুতল ও অধিক গতিসম্পন্ন। অভ্যন্তরে আধুনিক প্লাস্টিক বা ধাতব আসবাব, কৃত্রিম আলো ও চমকপ্রদ সাজ। স্টিমারের যাত্রায় ছিল ধীরতা আর নীরবতা, লঞ্চের যাত্রায় থাকে যান্ত্রিক কোলাহল ও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদ। স্টিমার ছিল নিজেই এক গন্তব্য, যার যাত্রা মনে থাকত আজীবন। আর লঞ্চ শুধু গন্তব্যে পৌঁছায়, স্টিমারের মতো স্মৃতির ভার বহন করে না।

স্টিমারের উত্থান, নিঃশব্দ পতন

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্টিমারসেবার যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৪ সালে। কয়লাচালিত প্যাডেল স্টিমার প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ও পরে ঢাকা থেকে সরাসরি খুলনার নৌপথে চলাচল করত। পথে চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, মোরেলগঞ্জ, হুলারহাট, সন্ন্যাসী, কাউখালী ঘাটে যাত্রাবিরতি দিয়ে খুলনায় ভিড়ত। ঔপনিবেশিক সময়ে খুলনার সঙ্গে ভারতের রেল যোগাযোগ শুরু হলে নৌপথে যাত্রী পরিবহন গুরুত্ব পায়। তখন ফ্লোটিলা কোম্পানির ১৪টি স্টিমার বহরে ছিল। পরে পিএস গাজী, পিএস অস্ট্রিচ, পিএস মাহসুদ, পিএস লেপচা, পিএস টার্ন, পিএস সেলার মতো ঐতিহ্যবাহী স্টিমারের সংযোজন—সবই ছিল নদীমাতৃক সংস্কৃতির অমূল্য এক অধ্যায়।

বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস আবার চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ঢাকার সদরঘাট এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৯০ দিনের জন্য ১১৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে আনার চুক্তি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন প্রাথমিকভাবে তাদের নিজেদের পণ্যের ওপর ৯০ দিনের জন্য আরোপিত ১১৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছে। সোমবার দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দীর্ঘ বাণিজ্য আলোচনার পর আজ এই ঘোষণা এলো। খবর বিবিসির

যৌথ বিবৃতিতে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির এই দুই দেশ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর সাময়িকভাবে তার শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নিয়ে আনবে।

অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর তার শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করবে।

বিবিসির অর্থনৈতিক প্রতিবেদক থিও লেগেটের মতে, ‘এটি প্রত্যাশার চেয়েও বড় পরিমাণে শুল্ক হ্রাস। তবে ৩০ শতাংশ শুল্ক এখনও একটি উচ্চ হার হিসেবে থেকে যাচ্ছে।’

বেইজিং থেকে বিবিসির প্রতিনিধি লরা বিকার জানিয়েছেন, মার্কিন শুল্কের প্রভাব নিয়ে চীনা কর্মকর্তারা বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। গত মাসেও ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্ট স্বীকার করেছিলেন, এই অবস্থা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়।

এর আগে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় অগ্রগতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রোববার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘সুইজারল্যান্ডে চীনের সঙ্গে ভালো বৈঠক হয়েছে। অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ঐকমত্য হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ