অন্তর্বর্তী সরকারকে আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা অনেক দূর তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিন, না হলে কিন্তু বিপদ হতে পারে। কোনো ঘটনায় আবেগবশত সিদ্ধান্ত নিয়েন না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাত ও ওয়েলফেয়ার খাতে উদ্যোগ নিন।’

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।

এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘উড়াল সেতু, মেগা প্রজেক্ট কি চিবিয়ে চিবিয়ে খাব নাকি? যে দেশের মানুষের উন্নতি হয় না, সে দেশ কখনো সামনে এগিয়ে যেতে পারে না।’ দেশের লুটপাট ও পাচার হওয়া অর্থের অর্ধেক স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নার্সদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের চিত্র তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই নার্সদের সামাজিকভাবে হেয় করা হয়। তাঁদের তিন শিফটেও কাজ করতে হয়, কিন্তু আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ জন্য চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্সদের প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘কেন আমি ডলার খরচ করে ইন্ডিয়ায় যাব? কেন তাদের টাকা দিয়ে আসব? তারা প্রতিমুহূর্তে আমাদের নিয়ে নেগেটিভ বয়ান তৈরি করে অপপ্রচার করছে। তাদের পেছনে ডলার খরচ না করে, টাকাগুলো যদি আমাদের নার্স-চিকিৎসকদের পেছনে খরচ করি, তাহলে ইন্ডিয়ায় যাওয়ার তো কোনো কারণই থাকতে পারে না। চিকিৎসকদের লজিস্টিক সাপোর্ট ঠিক করতে পারলেই তো কেউ ওই ( ইন্ডিয়া) দিকে যেত না। সেই কাজগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের করা দরকার ছিল।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা ডা.

রফিকুল ইসলাম, জাহানারা পারভিন, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, সাংবাদিক নেতা কাদের গণি চৌধুরী, ছাত্রদলের সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি, বাড়ছে ডেঙ্গু-করোনাও

চট্টগ্রামে চার ধরনের জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে উচ্চমাত্রার জ্বর, অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা, কখনো ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় জ্বর সেরে গেলেও কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী জয়েন্টের ব্যথা থেকে যাচ্ছে।

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে নগরে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, সাধারণ ভাইরাস জ্বর (ফ্লু) ও করোনাভাইরাসজনিত জ্বর—এই চারটি জ্বরের প্রকোপ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি এলাকায় রয়েছে জ্বরের রোগী।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ রোগী সেবা নেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য, এর মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক হামিদুল্লাহ মেহেদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে চিকুনগুনিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। জ্বরের সঙ্গে জয়েন্টে ব্যথা, হাড় ফুলে যাওয়া, র‍্যাশ—এসব উপসর্গ থাকলে চিকুনগুনিয়ার আশঙ্কা বেশি।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বহির্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার জ্বরের রোগী আসছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁদের বেশির ভাগই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ভাইরাস জ্বর ও করোনাভাইরাস—সব মিলিয়ে এখন চার ধরনের জ্বর দেখা যাচ্ছে। উপসর্গ দেখে ধারণা করছি, এবারে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। তবে পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ কম থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিন।’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জ্বর হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।

চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ সম্পর্কে জানতে চাইলে সদরঘাট এলাকার বাসিন্দা রীতা চন্দ বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে জ্বর ও গায়ে ব্যথা হয়েছিল। পরে জয়েন্ট ফুলে যায়। বাসায় চিকিৎসা নিয়েছি। এখন জ্বর নেই, তবে ব্যথা পুরোপুরি যায়নি।’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জ্বর হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।আরও পড়ুনচট্টগ্রামে করোনা হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ভেন্টিলেটর সচল কেবল একটিতে১২ জুন ২০২৫

চিকিৎসকদের ভাষ্য, চিকুনগুনিয়ার জ্বর সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে কমে যায়। তবে জয়েন্টে ব্যথা দুই সপ্তাহ থেকে দুই মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। জ্বর সেরে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় অনেক সময় রোগ শনাক্ত হয়।

চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। জুন মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে ১৭৬ জন, যা বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪৫ জন, এর মধ্যে মারা গেছেন ২ জন।

চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু উভয়ই এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। তবে চিকুনগুনিয়ায় সাধারণত প্লাটিলেট কমে না। অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘২০১৭ সালেও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি ছিল, তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলক কম ছিল। এবারে সেই চিত্রটাই দেখা যাচ্ছে। তবে ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি।’

চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ভাইরাস জ্বর ও করোনাভাইরাস—সব মিলিয়ে এখন চার ধরনের জ্বর দেখা যাচ্ছে। উপসর্গ দেখে ধারণা করছি, এবারে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। তবে পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ কম থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিনঅধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বিভাগীয় প্রধান, চমেক হাসপাতাল

সরকারি হাসপাতালগুলোতে জ্বর নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম হলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেশি। আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে গতকাল ডেঙ্গুতে ভর্তি ছিলেন ১৩ জন রোগী।

এ ছাড়া চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণও ধীরে ধীরে বাড়ছে। জুন মাসে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৩৪ জন, এর মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনার সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। ডেঙ্গুও তুলনামূলক কম। তবে বৃষ্টির কারণে যত্রতত্র পানি জমে থাকলে এডিস মশার প্রজনন বাড়বে। এতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকিও বাড়বে।

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা হবে দুই হাসপাতালে, চমেকে আলাদা ওয়ার্ড১১ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি, বাড়ছে ডেঙ্গু-করোনাও
  • স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার: সরকার যেভাবে সুপারিশ বাস্তবায়ন শুরু করতে পারে