যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ মঙ্গলবার চার দিনের মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একাধিক বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। ট্রাম্প এমন সময় এই সফর করছেন, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই সফরে গাজায় যুদ্ধবিরতি, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, বাণিজ্য ও তেলের দাম কমানো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এসব দেশে তাঁর সন্তানদের একাধিক ব্যবসা ও আবাসন প্রকল্প আছে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে দুটি দেশ সৌদি আরবে বৈঠকে বসেছে। এ কারণে সৌদি আরব ওয়াশিংটনের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় সংক্রান্ত আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে কাতার।

ট্রাম্পের সফরের প্রথম দিনেই সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। চলতি সপ্তাহেই এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এতে অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক, প্যালান্টিয়রের সিইও অ্যালেক্স কার্প এবং সিটি গ্রুপ, আইবিএম, কোয়ালকম, অ্যালফাবেট ও ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলটনের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা। এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্রিপ্টোবিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকসও এই ফোরামে অংশ নেবেন।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিকে ঘিরে বৈশ্বিক কেন্দ্র হতে চাইছে। এ জন্য তারা এআই অবকাঠামোতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। এ কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সেমিকন্ডাক্টর কিনতে চাইছে। বাইডেনের আমলে এ বিষয়ে আইনি জটিলতা থাকলও ট্রাম্প প্রশাসন সে বিষয়টি সহজ করতে চাইছে।

পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা

ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। অন্যদিকে সৌদি আরব নিজস্ব বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে চায়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ও সহায়তা চেয়েছে দেশটি।

ইসরায়েল-গাজা আলোচনা

ট্রাম্পের সফরের আরেকটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ। তিনি এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে গাজা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যও করেছেন তিনি। সম্প্রতি বলেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তা-ই নয়, তিনি গাজাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আবাসন প্রকল্প’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।’

তেলের দাম এবং অর্থনীতি

সিরিয়ার নতুন সরকারের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয় নিয়েও এই সফরে আলোচনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ব্রাঞ্চ। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন পারস্য উপসাগরের নাম পাল্টে ‘আরব উপসাগর’ হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। আরব দেশগুলো নতুন নাম উত্সাহের সঙ্গে গ্রহণ করলেও ইরান কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

তেলের দাম নিয়ে আলোচনাও গুরুত্ব পাবে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকে (ওপেক) তেলের উৎপাদন বাড়াতে চাপ দিয়ে আসছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের জন্য দাম কমানো যায়। তাই এই সফরে তেলের উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আলোচনায় ফেরাতে ইরানকে লোভনীয় প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের

ইরানকে পরমাণু আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ৩০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সহায়তা করার, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার এবং আটকে রাখা তহবিলের কোটি কোটি ডলার মুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টির সাথে পরিচিত চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে ইরান ও ইসরায়েলে সামরিক হামলার তীব্রতার মধ্যেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের মূল খেলোয়াড়রা পর্দার আড়ালে ইরানিদের সাথে কথা বলেছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পরেও এই আলোচনা চলতি সপ্তাহে অব্যাহত রয়েছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এগুলো প্রাথমিক ও  ধারাবাহিক বিকশিত হচ্ছে, যেখানে শুধু একটি আলোচনার অযোগ্য বিষয় রয়েছে-ইউরেনিয়াম শূন্য সমৃদ্ধকরণ। অবশ্য ইরান ধারাবাহিকভাবে বলেছে যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তাদের প্রয়োজন। তবে দুটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, কমপক্ষে একটি প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাবে ইরানের জন্য বেশ কয়েকটি প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গত শুক্রবার ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক হামলার আগের দিন হোয়াইট হাউসে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং উপসাগরীয় অংশীদারদের মধ্যে গোপ বৈঠক হয়েছে। ঘন্টাব্যাপী বৈঠকের কিছু বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে-ইরানের একটি নতুন অ-সমৃদ্ধকরণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে আনুমানিক ২০-৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ যা বেসামরিক জ্বালানি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে। এই অর্থ সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসবে না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের আরব অংশীদাররা এই ব্যয় বহন করবে। 

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, “আমেরিকা ইরানের সাথে এই আলোচনার নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক। পারমাণবিক কর্মসূচি নির্মাণের জন্য কাউকে অর্থ প্রদান করতে হবে, তবে আমরা সেই প্রতিশ্রুতি দেব না।”

অন্যান্য প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে ইরানের উপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এবং তেহরানের বিদেশী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের অনুমতি দেওয়া।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কোন পথে
  • আলোচনায় ফেরাতে ইরানকে লোভনীয় প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের
  • ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী