তাঁদের যে হিংস্রতা অনলাইনে দেখা যায়, তাঁরা আজকে এখানে এটা করেছেন: মাহফুজ আলম
Published: 15th, May 2025 GMT
তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে কথা বলার সময় তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার জন্য একটি গোষ্ঠীকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, ‘তাঁদের নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির প্রতি যে হিংসা আট মাস ধরে রয়েছে এবং তাঁদের যে হিংস্রতা অনলাইনে দেখা যায়, তাঁরা আজকে এখানে এটা করেছেন।’
রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত ১০টার পর সেখানে গিয়ে কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি কথা বলার এক পর্যায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথা লক্ষ্য করে একটি পানির বোতল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর আর কথা না বলে তিনি সেখান থেকে চলে যান।
এর প্রায় ১৫ মিনিট পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার সাথে যেটা হয়েছে আজকে, আমি এখানে আসার পরে, একটি অংশ আমি যাদের মনে করি, স্যাবেটুর (অন্তর্ঘাতকারী), যারা স্যাবোটাজ (অন্তর্ঘাত) করার জন্য বিভিন্ন আন্দোলনে ঢোকে, আমি শুধু তাদের নাম আজ উল্লেখ করব না। মিডিয়ার দায়িত্ব, প্রশাসনের দায়িত্ব তাদের এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বের করা।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আপনারা খুঁজে বের করুন। দেখবেন, একটি গ্রুপকেই পাওয়া যাবে। তাঁদের নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির প্রতি যে হিংসা আট মাস ধরে রয়েছে এবং তাঁদের যে হিংস্রতা অনলাইনে দেখা যায়, তাঁরা আজকে এখানে এটা করেছেন।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি জানি না। আমি শুধু আমার সন্দেহ জানিয়ে রাখলাম। প্রশাসনের দায়িত্ব, মিডিয়ার দায়িত্ব এটাকে (এদের) খুঁজে বের করা।’ তিনি বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন আন্দোলনে যাঁরা স্যাবোটাজ করেন, তাঁদের ব্যাপারে সাধারণ ছাত্রদের বলতে চাই, স্যাবোটাজকারীদের আলাদা করেন। আপনাদের ন্যায্য দাবি সরকার শুনতে রাজি।’
পরে রাত ১২টার দিকে সেখানে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন। তথ্য উপদেষ্টার মাথায় পানির বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় তিনি বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আমরা মনে করি, এ ঘটনার জন্য কোনোভাবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা দায়ী নন।’
অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘উপদেষ্টা (মাহফুজ আলম) যেই ব্রিফ করেছেন, সেটি আরেকটি অস্পষ্টতা তৈরি করেছে। আমরা সব শিক্ষক–শিক্ষার্থীকে সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্তে এসেছি, সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া আমরা কোনোভাবেই এ জায়গা ছেড়ে যাব না। যদি এখানে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তার সব দায়দায়িত্ব উপদেষ্টা এবং এই সরকারকেই নিতে হবে।’
আরও পড়ুনতথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় এনসিপি নেতাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া২৩ মিনিট আগেশামসুল আরেফিন আরও বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা বলছেন, অনেকে হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এসবকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। আমাদের এখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান হবে। যদি দুপুরে মতো আমাদের একটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরে, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ করব।’
তথ্য উপদেষ্টার ওপর হামলার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। রাতে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের নিজস্ব দায়িত্ব আছে সরকারে। মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক দায়িত্ব ছাড়াও অতিরিক্ত অনেক দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তারপরও ছাত্রদের যেকোনো সমস্যা, আন্দোলনের সমাধান কিংবা যৌক্তিক দাবি আদায়ে সব সময় সচেষ্ট থাকার চেষ্টা করি। অন্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়েও মাঝেমধ্যে সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করি এবং সমঝোতার চেষ্টা করি।’
আরও পড়ুন৮ বাস ভরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসে যোগ দিলেন অবস্থান কর্মসূচিতে৫ ঘণ্টা আগেআসিফ মাহমুদ আরও লিখেছেন, ‘আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিষয়টিও আমার অফিশিয়াল (দাপ্তরিক) দায়িত্বের আওতায় পড়ে না। কিন্তু দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টা আগে মাহফুজ ভাইয়ের (তথ্য উপদেষ্টা) সঙ্গে যা ঘটল, তাতে হতাশ হয়েছি। ভাই তো চাইলেই পারতেন, “এটা আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়” বলে এড়িয়ে যেতে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার তিন দফা দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুনলংমার্চে লাঠিপেটার পর বিক্ষোভ, রাতেও চলছে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান১২ মিনিট আগেধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। এ সময় প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন বলে আন্দোলনকারীরা জানান।
পরে বেলা দুইটার দিকে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি বাসে এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কয়েক শ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ ন র জন য কর ছ ন সরক র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
গুগল ম্যাপসে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র নাম বদলে ফেলায় গুগলের বিরুদ্ধে মামলা মেক্সিকোর
গুগল ম্যাপসে মেক্সিকো উপসাগরের নাম ‘গালফ অব মেক্সিকো’র বদলে ‘গালফ অব আমেরিকা’ দেখা যাওয়ায় গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মেক্সিকো। বিতর্কের সূত্রপাত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দেশটির ফেডারেল সংস্থাগুলোকে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র পরিবর্তে ‘গালফ অব আমেরিকা’ নাম ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। ট্রাম্পের এই আদেশের পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে নিজেদের মানচিত্রে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র নাম বদলে ফেলে গুগল। নতুন এ পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীরা গুগল ম্যাপসে উপসাগরটির নাম ‘গালফ অব আমেরিকা’ দেখতে পেলেও মেক্সিকোতে বসবাসকারীরা আগের নাম অর্থাৎ ‘গালফ অব মেক্সিকো’ দেখতে পাচ্ছেন। শুধু তা–ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো বাদে অন্য দেশ থেকে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র নাম গালফ অব মেক্সিকো (গালফ অব আমেরিকা) দেখা যাচ্ছে।
গুগলের এ সিদ্ধান্তকে একতরফা ও আন্তর্জাতিক নিয়মবহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম। সম্প্রতি দেশটির রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কোনো দেশ আন্তর্জাতিক জলসীমাসংলগ্ন কোনো ভূখণ্ডের নাম একতরফাভাবে পরিবর্তন করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের অভ্যন্তরীণ কোনো রাজ্য, পাহাড় কিংবা হ্রদের নাম পরিবর্তন করে, সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু যে অংশ মেক্সিকো বা কিউবার সীমানার মধ্যে পড়ে, সেটির নাম তারা ইচ্ছেমতো পাল্টাতে পারে না।’
রিও গ্র্যান্ড নদীর মধ্যবিন্দু ধরে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়েছে। এই উপসাগর ঘিরে রয়েছে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার উপকূলরেখা। মেক্সিকো সরকারের দাবি, এ উপসাগরের নাম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং ‘গালফ অব মেক্সিকো’ নামটি বহু যুগ ধরে প্রচলিত। গুগলের এই নাম পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক বাস্তবতা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এর আগে গুগলকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছিল মেক্সিকো সরকার।
আরও পড়ুনগুগল ম্যাপসে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র বদলে দেখা যাবে ‘গালফ অব আমেরিকা’, কারণ কী২৯ জানুয়ারি ২০২৫মেক্সিকো সরকার বারবার অনুরোধ করলেও মানচিত্রে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি গুগল। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক পলিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস টার্নার জানান, তারা দীর্ঘদিনের নীতিমালা অনুসরণ করেই মানচিত্র হালনাগাদ করেছে এবং বিষয়টি নিরপেক্ষভাবেই দেখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গুগলের পাশাপাশি অ্যাপলও তাদের ম্যাপস সেবায় একই ধরনের পরিবর্তন এনেছে। তবে মেক্সিকো আপাতত অ্যাপলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কিছু জানায়নি।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
আরও পড়ুনগুগল ম্যাপসে নিজের অবস্থানের তথ্য অন্যকে জানাবেন যেভাবে০২ জানুয়ারি ২০২৪