ঈদুল আজহায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত সিনেমা ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। এটি নির্মাণ করেছেন সানী সানোয়ার। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সন্ধ্যায় সিনেমাটির পোস্টার প্রকাশ করে মুক্তির তথ্য জানানো হয়।
২০০৯ সালে ঢাকার আজিমপুরে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটে। রহস্যে ঘেরা এই বিরল সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ সিনেমা নির্মিত হয়েছে। সিনেমাটিতে একজন পুলিশের তদন্ত অফিসার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন।
এ সিনেমায় অভিনয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে বাঁধন বলেন, “বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে নারী চরিত্রের এরকম অনবদ্য উপস্থাপনের পরিকল্পনায় মুগ্ধ সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত হই। আমার ধারণা, এবার ঈদে অসংখ্য সিনেমার ভিড়ে ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ ভিন্নতা পাবে। এটা সানী ভাইয়ের গল্প বলার ধরণ, উপস্থাপনের জন্য।”
আরো পড়ুন:
মামলার গ্যাঁড়াকলে ইরেশ যাকের, শোবিজ তারকাদের ক্ষোভ
আমার কোনো আফসোস নেই: বাঁধন
সিনেমাটির প্রযোজক ফারুক রায়হান বলেন, “এবার ঈদের অসংখ্য সিনেমার ভিড়ে ভিন্ন ধাচের বিরল ঘটনাপূঞ্জী এবং চিত্রনাট্যের মজবুতির জন্য ‘এশা মার্ডার’ অনবদ্য একটি বাণিজ্যিক সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। গল্পের বুনন, নির্মাণ শৈলীর জন্য দর্শক সিনেমার শেষ দৃশ্য পর্যন্ত সাগ্রহে আটকে ধাকবে এটা শুধু বিশ্বাসই নয়, প্রতিশ্রুতিও বটে।”
পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমাটির কাহিনি, চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন সানী সারোয়ার। এ নির্মাতা বলেন, “দেশের দর্শকরে মাঝে ক্রমাগতভাবে খুন রহস্য ও সাসপেন্স থ্রিলারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সংখ্যাটি অন্য যেকোনো ঘরানার সিনেমা থেকে কোনো অংশে কম নয়। বিষয়টি মাথায় রেখেই সিনেমাটি নির্মাণের প্রয়াস পেয়েছি। আমার বিশ্বাস ‘এশা মার্ডার’ সফল হলে দেশে এই ধাঁচের অগণিত সিনেমা নির্মিত হবে।”
সিনেমাটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পূজা এগনেজ ক্রুজ। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রূপায়ন করেছেন— মিশা সওদাগর, শতাব্দী ওয়াদুদ, সুমিত সেনগুপ্ত, রওনক রিপন, ফারুক আহমেদ, শরীফ সিরাজ, নিবির আদনান নাহিদ, সৈয়দ এজাজ আহমেদ, হাসনাত রিপন, সুষমা সরকার, ইশিকা, নোভা, জশ প্রমুখ।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অভ্যুত্থানের অনবদ্য দলিল
বাংলাদেশের সম্প্রচার সাংবাদিকতার পুরোধা ব্যক্তিত্ব সাইমন জন ড্রিংয়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল যমুনা টিভিতে। সে সময় কাজের ফাঁকে তিনি শুনিয়েছিলেন ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনাপ্রবাহ। সাইমন তখন বিবিসির প্রতিবেদক হিসেবে তেহরানে কর্মরত। তাঁর চোখের সামনেই ঘটেছিল সেই গণবিপ্লব। সাইমন বলেছিলেন, সাংবাদিকতা পেশার একটি বিশেষ সুবিধা আছে। একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইতিহাসকে রচিত হতে দেখেন।
ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদের উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং গ্রন্থটি হাতে পাওয়ার পর সাইমনের কথা খুব মনে হচ্ছিল। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বর্ষা বিপ্লবের ঘটনাগুলো খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন জীবন। নেত্রনিউজের সংবাদকর্মী হিসেবে তিনি শুধু এই অভ্যুত্থান কাছ থেকেই দেখেননি, পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন অভ্যুত্থানের অভূতপূর্ব সব মুহূর্ত।
গ্রন্থটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিল। জুলাই অভ্যুত্থানের শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের সংবাদ, ছবি ও স্মৃতিকথা। একথা সত্য যে সাংবাদিকের ক্যামেরা ও কলমে কোনো অভ্যুত্থানেরই পুরো চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়। নিশ্চিতভাবেই ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের বহু আত্মত্যাগের অনবদ্য গল্প এখনো অজানা। গ্রন্থটির ভূমিকায় ছবিশিল্পী জীবন আহমেদ লিখেছেন, জুলাই আন্দোলন চলাকালে ঢাকার রাজপথে, অলিতেগলিতে এমন সব দৃশ্যের জন্ম হয়েছে, যা কোনো ভিজ্যুয়াল মিডিয়া বা ফটোগ্রাফির সব সক্ষমতা দিয়েও ধারণ করা সম্ভব নয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের আবেগ, ব্যাপকতা ও মাহাত্ম্য উল্লেখ করে নিজের অক্ষমতার কথা তুলে ধরলেও ফটোসাংবাদিক জীবন তাঁর ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে ঠিকই এক জরুরি দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৭৬টি সংবাদছবিতে জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত ঘটনাগুলোকে চিরযৌবন দান করেছেন। পুলিশের সাঁজোয়া যান, গুলি, কাঁদানে গ্যাস, আগুন বা প্রতিবাদের বহ্নিশিখা ধারণ করেছেন ক্যামেরার লেন্সে। মৃত্যু, আর্তনাদ, অভিশাপ, প্রতিবাদ, প্রত্যাখ্যান ও পতন জীবন্ত হয়ে উঠেছে বইটির পাতায় পাতায়।
গ্রন্থটি যে কাউকে এক পরাবাস্তব জগতে নিয়ে যেতে পারে। প্রতিটি ছবিই যেন একেকটি গল্প। নির্যাতন-নিপীড়ন-বলপ্রয়োগ–হত্যাযজ্ঞের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। যে ইতিহাসের ধারাক্রম শুরু মধ্য জুলাই থেকে। ৩৬ পৃষ্ঠায় স্থান পাওয়া ১৪ জুলাইয়ের একটি ছবি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। যাকে বলা যায় আইকনিক, মোড় পরিবর্তনকারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিরো পয়েন্টে যাওয়ার পথে পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙে ফেলার এক অসাধারণ মুহূর্ত যে কাউকে স্পর্শ করবে। খুব সম্ভবত এটাই ছিল প্রতিরোধ ভাঙার সূচনা। এ ছাড়া ১৪ জুলাইয়ের স্মৃতিকথাতেও জীবন আহমদ এক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে শামসুন্নাহার হলের মেয়েরা থালাবাসন দিয়ে আওয়াজ করতে শুরু করে, তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার! পরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলেও এই থালাবাসন দিয়ে বিভিন্ন আওয়াজ ও স্লোগান শুরু হয়। (পৃষ্ঠা: ৩৪)
পরের দিনগুলো অগ্নিগর্ভ, শ্বাসরুদ্ধকর। রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বর্বর আক্রমণ, গায়েবানা জানাজা, শিক্ষার্থীদের জোর করে হল ত্যাগ করানো আর সংঘাতের জীবন্ত বিবরণ। মাঝখানে কয়েক দিন বিরতির পর আবার গণবিস্ফোরণ। তখন দিন-রাত এক করে ক্যামেরা হাতে ঢাকার রাজপথে ছিলেন জীবন। কখনো তাঁর ক্যামেরা ধারণ করেছে অগ্নিদগ্ধ যানবাহন, উত্তরার রাজপথ বা ঢাকা মেডিকেলে লাশের সারি। মাঝেমধে৵ আছে কয়েকটি হৃদয়বিদারক মৃত্যুর এপিটাফ। রিকশার পাদানিতে গোলাম নাফিজ, স্ট্রেচারে লাল-কালো চাদরে ঢাকা রিয়া গোপের মরদেহ, সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের আঘাত–জর্জরত পিঠ ও অন্যান্য। এই ছবিগুলোর প্রতিটিই মৌষলকালের একেকটি মর্মান্তিক গল্প।
৫ আগস্ট বিজয়ের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের ছবিটি অনবদ্য। এই সংবাদছবিটির দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকা যায়। লাল-সবুজের পতাকায় ছাত্র-জনতার উল্লাস, পটভূমিতে পতিত স্বৈরাচারের ক্ষতবিক্ষত অবয়ব। যেন এই একটা ছবিই ৩৬ দিনের আন্দোলনের সব কথা বলে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে নৈরাজ্য ও অরাজকতার এক খণ্ডচিত্রও ধরা পড়েছে জীবন আহমদের চোখে। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সামনে এক নারীকে নির্যাতন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, পরের দিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার স্থিরচিত্রও স্থান পেয়েছে বইটিতে, যা একজন সাংবাদিকের পেশাদারত্ব ও দলনিরপেক্ষতার প্রমাণ দেয়।
উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং
জীবন আহমেদ
প্রকাশক: ইউপিএল
প্রকাশ: আগস্ট ২০২৫
প্রচ্ছদ: জীবন আহমেদের ছবি অবলম্বনে সুবিনয় মোস্তফি ইরন
পৃষ্ঠা: ৩২৩
মূল্য: ২৫০০ টাকা