Samakal:
2025-05-17@03:19:52 GMT

বড় গরু নিয়ে শঙ্কিত খামারি

Published: 16th, May 2025 GMT

বড় গরু নিয়ে শঙ্কিত খামারি

এগিয়ে আসছে ঈদুল আজহা। এই ঈদে কোরবানির জন্য প্রতি বছর যত্ন নিয়ে পশু লালনপালন করেন দেশের খামারি ও কৃষকরা। মেহেরপুর ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার খামারিরা এবার শঙ্কিত বিপুল খরচে পালন করা বড় আকারের গরু নিয়ে। গোখাদ্যের দাম বাড়ার কারণেও তারা আকাঙ্ক্ষিত মুনাফা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মড়কা গ্রামের খামারি সাজাহান আলী প্রতি বছর কোরবানির জন্য গরু পালন করেন ৩০টি। এ বছরও খামারে ৫-১০ লাখ টাকা দামের গরু আছে। আগের বছর ২৩টি গরু তিনি বিক্রি করেন ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়। সাজাহানের দাবি, সেবার মাত্র ২ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। আগের বছরের সাতটির সঙ্গে আরও ২৩টি গরু কিনে এবার পালন করেন।
এই খামারির ভাষ্য, গত বছর ঈদুল আজহার এক মাস আগে থেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন সিলেট-চট্টগ্রামের ব্যাপারীরা। ঈদের ২২ দিন আগেই তাঁর খামার থেকে ব্যাপারীরা কিনে নেন ৯টি গরু। আরও ১০টি গরু বিক্রি করে ফেলেন ঈদের ১৭ দিন আগেই। বাকি চারটি তুলনামূলক ছোট গরু মেহেরপুরের হাটে বিক্রি করেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁর বড় ৩০টি গরুর কোনোটিই বিক্রি হয়নি। 
জেলায় এবার কোরবানির জন্য ৩৫০টি বাণিজ্যিক খামারসহ ২৮ হাজার পারিবারিক খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫২৫টি পশু। এর মধ্যে গরু ৫৪ হাজার, ছাগল ১ লাখ ১৬ হাজার ও ভেড়া ২ হাজার। জেলায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ৯০ হাজারের মতো। বাকি প্রায় ৮২ হাজার পশু অন্য জেলায় বিক্রির আশা করছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
 গোখাদ্যের দাম বাড়ায় বিমুখ খামারি
২০২৪ সালে জেলার ৩৭৯টি বাণিজ্যিক খামারসহ ২৮ হাজার ৭০০ পারিবারিক খামারে তৈরি করা হয়েছিল ৫৯ হাজার ৫০০ গরু, ১ লাখ ২৮ হাজার ছাগল-ভেড়া। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৯৮ হাজার পশু অন্য জেলার হাটে উঠানো হয়। সেই হিসাবে এ বছর বড় খামার কমেছে ২৯টি। প্রায় ৭০০ পরিবার গরু-ছাগল পালন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
পশু পালনের খরচ বাড়ার কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন খামারি সাজাহান আলী। তিনি বলেন, গত বছর খইলের কেজি ছিল ৪২ টাকা, এবার কিনতে হচ্ছে ৪৬ টাকায়। ৩০০ টাকা পুনের (৮০ আঁটিতে এক পুন) বিচালি বা খড় এবার কিনেছেন ৪০০-৫০০ টাকায়। ৩৪ টাকার ভুট্টা ভাঙার দর বেড়ে ৪০-৪২ টাকায়, ১৫-১৬ টাকার ধানের গুঁড়া ২০-২১ টাকায়, ৪০ টাকা আঁটির কাঁচা ঘাস তাদের কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নের খালিয়াপাড়া গ্রামের খামারি আব্দুল খালেকের কথায়ও গোখাদ্যের দাম বাড়ার তথ্য পাওয়া যায়। এবার তিনি খামারে মোটাতাজা করেছেন ৩৫টি গরু। খালেক বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে গরু প্রস্তুতের কাজ শুরু করেন। এবার অনেক বেশি খরচ হচ্ছে। গত বছর ভুসি ছিল ৫০-৫২ টাকা কেজি, এবার তা বেড়ে হয়েছে ৫৩-৫৫ টাকা। খইলের কেজি ছিল ৩৮-৪০ টাকা, এবার ৪২-৪৫ টাকা। ৫০ কেজি বস্তার ধানের গুঁড়ার দাম ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯০০ টাকা। ১ হাজার টাকার ছোলার বস্তা কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। 
খালেকের খামারে গত বছর বড় গরু ছিল পাঁচটি। ঈদের বেশ কিছুদিন আগেই চারটি বিক্রি করেন খামার থেকেই। একটি ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। এবার চারটি বড় গরুর কোনো ক্রেতাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আসেননি। এগুলো বিক্রি নিয়ে শঙ্কিত তিনি। 
উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শেখ এম এ মতিনের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর উল্লাপাড়ায় কোরবানির জন্য ৭৭ হাজার পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ২৯ হাজার, ছাগল ৪২ হাজার ও ভেড়া ৬ হাজার। উপজেলায় ৪২ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। গত বছর এখানে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৬৮ হাজার গরু-ছাগল। চাহিদা ছিল ৩৭ হাজার। 
উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের বড়হর গ্রামের বৃহত্তম খামারটি মোমিনুল হক লিটনের। এবার তাঁর এখানে কোরবানিযোগ্য ষাঁড় আছে ১০০টি। আকারভেদে এগুলোর দাম দেড় লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। এগুলোর মধ্যে শাহীওয়াল জাতের ৩০টি ও ফ্রিজিয়ান জাতের ২০টি। বাকি ষাঁড়গুলো দেশি জাতের। তিনি দাবি জানান, কোনোভাবেই যেন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় গরু হাটে না আনা হয়। তাহলে তাদের গরুর দাম কমে যাবে।  
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শেখ এম এ মতিন মনে করেন, এ বছর অন্তর্বর্তী সরকার অত্যন্ত কঠোর হওয়ায় ভারতীয় গরু আনার সুযোগ হবে না। তাই খামারিদের আতঙ্কের কারণ নেই।
আলোচনায় ছাগলকাণ্ড
মেহেরপুর সদরের হরিরামপুর গ্রামের ইলিয়াস আলীর খামারে বড় গরু আছে ২৩টি। এগুলোর দাম ৭ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে। এসব গরুর বেশির ভাগ ক্রেতাই সিলেট অঞ্চলের প্রবাসী পরিবার ও চট্টগ্রামের বড় ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, ‘অনান্য বছর সিলেট-চট্টগ্রামের ব্যাপারীরা বড় বড় গরু কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু এ বছর বড় গরুর কোনো চাহিদা নেই। গত কোরবানির ঈদের আগে ছাগলকাণ্ডের পর দামি গরুর ক্রেতা হারিয়ে গেছে। ফলে আমি বড় গরুগুলো বিক্রি নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে দিন পার করছি।’
একই উপজেলার শালিকা গ্রামের খামারি রিপন হোসেন বলেন, ‘আমার খামারে এবার খুব বড় গরু নেই। কারণ গেল বছর বড় গরু বিক্রি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছিলাম। এসব পালনে খরচও অনেক বেড়েছে। তাই এবার কোরবানিযোগ্য ছোট ছোট ৩৫টি গরু পালন করেছি। এগুলো দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে চাই।’
এক বছর ধরে ১০টি ছাগল পালন করছেন উল্লাপাড়ার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের বেতবাড়ী গ্রামের আব্দুল করিম। আগেও হাটে বিক্রি করে লাভ করেছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যেই সব ছাগল বিক্রির বিষয়ে আশাবাদী তিনি। 
কিছু খামারির বিরুদ্ধে স্টেরয়েড বা হরমোন প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে গাংনীর ভেটেরিনারি চিকিৎসক শফিউদ্দিনের ভাষ্য, এ ধরনের গরু দেখলেই চেনা যায়। মেহেরপুরে এমন গরু পালনের তেমন তথ্য নেই। হরমোন দেওয়া গরু তিন-চার দিনের মধ্যে বিক্রি করে দিতে হবে। না হলে অসুস্থ হবে, মারা যেতেও পারে।
মেহেরপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হাসান শাওন বলেন, মোটা গরু মানেই হরমোন বা স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে, এ ধারণা ঠিক নয়। একটু চেষ্টা করলেই এসব গরু চেনা যায়। হাটে এমন গরুর বিক্রি ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের একাধিক দল থাকবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর র ক রব ন র উল ল প ড় প রস ত ত গত বছর বছর বড় এ বছর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আইনি লড়াই কেন মাঠে গড়াতে দেওয়া হলো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে না দেওয়ার প্রতিবাদে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে একদল নাগরিক। আজ শনিবার সকাল ১০টায় নগর ভবন থেকে প্রেসক্লাব হয়ে সচিবালয় পর্যন্ত তাঁদের বিক্ষোভ মিছিল করার কথা।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। একই দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ফলে গুলিস্তান থেকে কাকরাইল এলাকায় অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়।

বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন গেজেট বিজ্ঞপ্তির আগে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু তাদের মতামতের আগেই কমিশন গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এ ছাড়া নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে একজন আইনজীবী উচ্চ আদালতে রিটও করেছেন। বিএনপির নেতারা ইশরাকের শপথ না পড়ানোকে সরকারের কূটকৌশল বলে অভিহিত করেছেন।

এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বিএনপি–দলীয় প্রার্থী শাহাদাত হোসেন আদালত থেকে অনুরূপ রায় পেয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। ইশরাকের বিষয়ে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আরজি সংশোধন-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়কে আমলে না নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন। এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরাজিত মেয়র প্রার্থীর একই ধরনের আবেদন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনের পরে মেয়াদকাল-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে আইনগত বাধা রয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হয়।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের শাহাদাত হোসেন ও ঢাকা দক্ষিণের ইশরাক উভয়ই প্রথম আরজিতে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ এনে নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন। গত বছর ক্ষমতার পালাবদলের পর তাঁরা নিজেদের জয়ী ঘোষণার পক্ষে রায় চান। খুলনা সিটি করপোরেশনের পরাজিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান সিইসির সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণার দাবি জানান। ওই নির্বাচনে তিনি জামানত হারিয়েছিলেন।

যে বিষয়টি আইনি উপায়ে সমাধান হওয়ার কথা, সেটি কেন মাঠে গড়াল? কেন সরকার এক সিটি মেয়রকে শপথ পড়ালেও অন্যজনকে ঝুলিয়ে রাখল? নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিচ্যুতি ঘটলে সেটাও আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করতে হবে। সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ কেন দিনের পর দিন দুর্ভোগ পোহাবে? আর যদি বিএনপি–দলীয় প্রার্থী এই মনোভাব পোষণ করেন যে রাস্তায় লোক জড়ো করতে পারলেই সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে, সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার বিরুদ্ধে বিএনপির প্রার্থীর উচিত ছিল আদালতে যাওয়া। সেটা না করে সমর্থকদের মাঠে নামাল তারা। এতে জনগণ দুর্ভোগের শিকার হয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

অবিলম্বে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। রাজধানী ঢাকার মতো বহুল সমস্যা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে পরিচালিত সিটি করপোরেশনের শীর্ষ পদ নিয়ে জটিলতা দ্রুত নিরসন হোক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ