বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন শাসন ব্যবস্থা
Published: 16th, May 2025 GMT
বৈশ্বিক অর্থনীতির চিত্র দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ৮০ বছরের পুরোনো বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার ওপর চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, যার ফলে একটি নতুন শাসন ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে চলমান মন্দা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা বিপুল পরিমাণে অধিগ্রহণ, একীভূতকরণ, সম্পদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ডি-ডলারাইজেশনের নতুন ঢেউ এবং সম্পদ বিক্রির পথে এগিয়ে চলেছে। এ প্রক্রিযার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুনভাবে আরোপিত শুল্ক ও অশুল্ক বাধা, যা বিশ্ব বাণিজ্যপ্রবাহকে আরও কঠিন করে তুলছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল গত মাসে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক শুল্ক আরোপ এবং অন্যান্য দেশের পাল্টা পদক্ষেপের কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ২.
যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক প্রাইভেট ক্রেডিট খাতে ইউরোপের ঋণদাতারা এত দিন দ্বিতীয় সারিতে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের নজর এখন ইউরোপমুখী। মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ডলারের ওঠানামার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা আমেরিকান সম্পদের ঝুঁকি ‘হেজ’ করতে ইউরোপে বিনিয়োগ বাড়াতে চাইছেন। সাম্প্রতিক সময়ে চীন মার্কিন ট্রেজারি বন্ড-বিল উল্লেখযোগ্যভাবে বিক্রি করছে। এটি তাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে বৈচিত্র্য আনার কৌশলগত পদক্ষেপ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চীনের মার্কিন ট্রেজারি হোল্ডিংস কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫৯ বিলিয়ন ডলারে। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকি কমানো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক, নিষেধাজ্ঞা ও সম্ভাব্য অ্যাসেট ফ্রিজিংয়ের আশঙ্কা থেকে চীন মার্কিন সম্পদে নির্ভরতা কমাচ্ছে। এ ছাড়া চীন তাদের রিজার্ভে স্বর্ণ, সংস্থাগত বন্ড, স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিল ইত্যাদিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চীনের স্বর্ণ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৭২.৯৬ মিলিয়ন আউন্স। চীন মার্কিন সম্পদ বিক্রি করার পেছনে মার্কিন ঋণ সংকট, উচ্চ বাজেট ঘাটতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে কারণ হিসেবে দেখছে। এতে মার্কিন বন্ড বাজারে দীর্ঘমেয়াদে চাপ পড়বে এবং চীনের এ পদক্ষেপে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্যে পুনর্বিন্যাস ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে মার্কিন ডলারের বিকল্প ব্যবহারে উৎসাহিত করবে।
বিশ্বজুড়ে ডলারবহির্ভূত মুদ্রায় লেনদেনের প্রতি আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলে। ব্যাংক ও ব্রোকারদের মতে, সাম্প্রতিক বাণিজ্য উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ডলার পরিহারের এ প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করছে। চীনের ইউয়ান, হংকং ডলার, আমিরাতি দিরহাম এবং ইউরোর ব্যবহার বাড়ছে হেজিং ও ঋণ লেনদেনে। ইন্দোনেশিয়ার একটি ব্যাংক ইতোমধ্যে ইউয়ান লেনদেন পরিচালনার জন্য পৃথক ডেস্ক স্থাপন করছে। অতীতে অধিকাংশ বৈদেশিক লেনদেনে ডলার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যবহৃত হতো, কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন করতে আগ্রহী হচ্ছে, যা ডলারের প্রভাব কমাচ্ছে।
নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতার মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পদ পুনর্বিন্যাস বা অলাভজনক বা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ দ্রুত বিক্রি করে স্বল্প খরচে তারল্য অর্জন করা। বৃহৎ অধিগ্রহণ ও একীভূতকরণ বা দুর্বল কোম্পানিগুলো বড় ও স্থিতিশীল কোম্পানির দ্বারা অধিগৃহিত হচ্ছে। বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতার বৃদ্ধির সঙ্গে অভিযোজন বা শুল্ক ও অশুল্ক বাধার মধ্য দিয়ে বিকল্প সরবরাহ চেইন তৈরি করা। নীতিগত অনিশ্চয়তার সঙ্গে মানিয়ে চলা বা ব্যবসায়িক কৌশলে দ্রুত পরিবর্তন এনে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। যদি বর্তমান বাণিজ্য নীতির অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে উৎপাদনশীলতার অবনতি এবং উদ্ভাবনের হার কমে যাবে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা
আরও কমবে।
বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা এমন এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সম্পদ বিক্রি, অধিগ্রহণ, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা মিলিয়ে একটি নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হলে কোম্পানি, বিনিয়োগকারী ও সরকারগুলোকে নিজেদের কৌশল নতুনভাবে সাজাতে হবে। বিশ্বের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি হলো ‘ট্রেড পলিসি’তে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং ভবিষ্যতের জন্য টেকসই প্রবৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তোলা।
লেখক: ব্যাংকার
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মত মত ব যবস থ র জন য ল নদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড
চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্ঠার ১৩৭ বছরের মধ্যে এবারই সর্বাধিক কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড হয়েছে। দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরটি সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কার্গো (খোলা) পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে ১৩ কোটি ৭ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৩ লাখ মেট্রিক টন। এতদিন তাদের সর্বোচ্চ হ্যান্ডলিং ছিল ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন। গত অর্থবছর এটি অর্জন হয়। সে হিসাবে আগের তুলনায় কার্গো পণ্যে এবারে ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বন্দর।
২০২১-২২ অর্থ বছরের পর এটিই এক অর্থবছরে বন্দরের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। চার বছর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে আগের তুলনায় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করার গৌরব অর্জন করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানান, চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল। এ হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দর পাড়ি দিয়েছে ১৩৭ বছর। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় এবারই প্রথম ১৩ কোটি মেট্রিক টন কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের মাইলফলক ছুঁয়েছে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর।
কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়েও এবার রেকর্ড করেছে বন্দর। ৪৮ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ ৩২ লাখ ৯৬ হাজার একক কনটেইনার হ্যান্ডেল করেছে তারা।
মিউচ্যুয়াল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বর্তমানে মোট আমদানির ২৩ শতাংশ হয় কনটেইনারে। বাকি ৭৭ শতাংশ আসে বাল্ক পণ্য, তেল ও কেমিক্যাল ট্যাংকারে। বন্দরে নোঙর করা জাহাজের মধ্যে ৪৫ শতাংশই কনটেইনারবাহী, ৪৫
শতাংশ বাল্ক ক্যারিয়ার এবং ১০ শতাংশ তরল পণ্যবাহী জাহাজ।
তিনি জানান, দেশের মোট কনটেইনার বাণিজ্যের প্রায় ৯৯ শতাংশ পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বাকি এক শতাংশ মোংলা বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়।