সাত কলেজ নিয়ে গঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন আগামীকাল রোববারের মধ্যে জারি না করা হলে আগামী সোমবার থেকে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে জনদুর্ভোগ এড়াতে এবার মন্ত্রণালয়ের সামনে কর্মসূচি দেবেন তারা।

আজ শনিবার বিকেলে ইডেন মহিলা কলেজের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সাত কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঁচটি দাবি জানানো হয়। এ সময় অন্যান্য কলেজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের পরবর্তী দুই কার্যদিবসের মধ্যে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ; আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা ও লোগো বা মনোগ্রাম প্রকাশ এবং আগামী এক মাস তথা ১৬ জুনের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া।

এ ছাড়াও প্রশাসকের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সেশনজট নিরসনসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশের পাশাপাশি ভুতুড়ে ফলের সমাধান; বিভিন্ন ইস্যুতে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধসহ যাবতীয় অসংগতিগুলো স্পষ্টভাবে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জাফরিন আক্তার ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান। তারা বলেন, প্রথম দাবির বিপরীতে প্রজ্ঞাপন না দেওয়া হলে মাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি বাকি দাবিগুলোর বিষয়েও নজর রাখা হবে। আর এবার মাঠে নামলে রাজপথে থেকেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরবেন।

তারা আরও বলেন, সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিলের পর চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি এ কলেজগুলো পরিচালনায় একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রস্তাব করে। অধিভুক্তি বাতিল ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে এ প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করার কথা। তবে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের বিষয়ে ইউজিসির প্রস্তাবের আড়াই মাস পার হলেও এখনো তার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি। এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে আছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ত কল জ স ত কল জ কল জ র

এছাড়াও পড়ুন:

পশুবাহিত রোগে উদ্বেগ

পশুর দেহের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইটে জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে যেসব রোগ হয় সেগুলোকে পশুবাহিত রোগ বা ইংরেজিতে জুনোটিক ডিজিজ বলে। সংক্রামিত পশু থেকে জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে নানাভাবে, যেমন– ছোঁয়ার মাধ্যমে, কামড় দিলে, আঁচড় দিলে, কাঁচা বা অর্ধরান্না করা খাবার খেলে, দূষিত পানি পান করলে, জীবাণুযুক্ত বাতাসের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে, কাঁচা দুধ বা কাঁচা দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেলে।

কুকুরের কামড় থেকে র‍্যাবিস ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করলে র‍্যাবিস বা জলাতঙ্ক হয়। প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হয়। তার মধ্যে অনেকের মৃত্যুও হয়। আরেকটি রোগ হচ্ছে বার্ড ফ্লু। এটি ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা। এটি পোলট্রি ফার্ম বা বন্যপাখি থেকে মানবদেহে ছড়ায়। তা ছাড়া নিপাহ ভাইরাস ফলবাগানের বাদুড়ের লালা, মল-মূত্র বা রক্ত দ্বারা সংক্রামিত মানুষের খাবারের মাধ্যমে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত মানুষ জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট ইত্যাদিতে ভোগে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই মারা যায়। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এতে উচ্চ তাপমাত্রা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে র‍্যাশ, মাংশপেশি ও হাড়ে ব্যথা, বমি, রক্তবমি, নাক দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
রোটা ভাইরাসও গৃহপালিত পশু, যেমন– গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি বাহিত রোগ বলে গবেষকরা মনে করেন। শিশুরা মূলত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণের কারণে এতে প্রচণ্ড ডায়রিয়া, বমি, জ্বর, খাবারে অরুচি দেখা দেয়। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত মানবদেহ ও পশুর মলের সংস্পর্শে ছড়ায়।

পশুবাহিত রোগ থেকে মুক্তির জন্য কিছু প্রতিকার নীতি মানতে হবে। যেমন– ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা। হাত ধুতে হবে। পরিধেয় কাপড়, বিছানাপত্র, আসবাব, বাড়িঘর, আশপাশ ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। সব ধরনের খাবার/পানি টাটকা, জীবাণুমুক্ত, ভালো করে রান্না করে বা ফুটিয়ে খেতে হবে। আশপাশের সব পশু-পাখিকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লালন-পালন করতে হবে। বাড়ি ও আশপাশের স্যানিটেশন ও ময়লা ব্যবস্থাপনায় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। নিয়মিত পোকামাকড় বা কীটপতঙ্গ দমন করতে হবে। সব ধরনের গৃহপালিত পশুপাখিকে নিয়মানুযায়ী ভ্যাকসিন দিতে হবে। রাস্তার সব কুকুর-বিড়ালকে মাস-ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। 

এ ব্যাপারে স্কুল-কলেজ, 
বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, হাটবাজার সব স্থানে প্রথমে সচেতনতা ও পরে আইন প্রয়োগ করতে হবে। বন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে দেশের সব স্তরের মানুষকে নিজ নিজ স্থান থেকে বিবেচনা করে সচেতন হতে হবে। কারণ প্রতিবছর দেশে পশুবাহিত রোগের কারণে ওষুধ-হাসপাতাল-চিকিৎসকের খরচ, ইনকাম লস, সঞ্চিত অর্থ ব্যয়, সরকারি হাসপাতালে ভর্তুকি, পশু-পাখির ক্ষতি, খাদ্যে অনিশ্চয়তা ইত্যাদি মিলে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি। তাই এই রাহু থেকে বাঁচতে নিজেদেরই সচেষ্ট হতে হবে।     
                                     
ডা. গোলাম শওকত হোসেন: গবেষক ও কলাম লেখক
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ